‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টাই সেবা প্রদান করা হবে’

মেডিভয়েস রিপোর্ট: মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৮ ঘণ্টার বদলে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আজ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন ৫০০টি ‘মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধন’ উপলক্ষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে চার হাজার ইউনিয়য়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০টি কেন্দ্রকে মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টাই স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, মানুষ যে কোনো সময় অসুস্থ হতে পারে, এজন্য ২৪ ঘণ্টাই সেবা ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ইউনিয়য়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে মডেলে রুপান্তর করতে পারলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা অনেকদূল এগিয়ে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়াতে হবে। প্রতিটি মডেল কেন্দ্র মাসে ২০টি ডেলিভারি করলে ১০ হাজার প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি করা সম্ভব। দেশে ৫০ ভাগ ডেলিভারি মেডিকেলে হয়, বাকি ৫০ ভাগ বাড়িতে হয়। বাড়িতে ডেলিভারিতে স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
তিনি বলেন, শিশুরা পানিতে পড়ে মারা যায়, জন্মের সময় মৃত্যুবরণ করে। সব মৃত্যু রোধে আমাদের কাজ করতে হবে। শিশু ও মায়েদের যেন স্বাস্থ্য সেবার ত্রুটি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮ ঘণ্টা করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। কিন্তু সেখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রয়োজন। এজন্য মডেল কেন্দ্র করা হয়েছে। এখানে পুরো সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টাই সেবা দেওয়া হবে। মডেল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শতভাগ ডেলিভারি করার ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি মডেল কেন্দ্রে মাসে ২০টি করে ডেলিভারি করলে সব কেন্দ্রে ১০ হাজার ডেলিভারি করা সম্ভব।’ যা বছরে হবে এক লাখ ২০ হাজার। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে মডেলে রূপান্তরিত হলে বছরে ১২ লাখ ডেলিভারি সম্ভব হবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ৩০ ভাগ। দেশে ৬০- ৭০ ভাগ সিজার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে ১৫-২০ ভাগ হওয়ার কথা। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে মডেল স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিশুদের বিনা মূল্যে বই, টিকা ও স্বাস্থ্য সেবা সবই নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধনে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে নিরাপদ মাতৃপ্রসব ও মৃত্যু হার কমাতে মডেল স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, এখন দেখতে হবে যারা দায়িত্বে আছে তারা কাজ করছেন কিনা। সকল সুযোগ থাকার পরও কোয়ালিটি সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে ঘরে হাসপাতাল প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, সমাজে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যৌথ পরিবার ভেঙে গেছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। ফলে মানসিক সমস্য দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। এ সময় ডেঙ্গু থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে গণমাধ্যমকে সংবাদ পরিবেশন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, গ্রামাঞ্চলে ৫০ ভাগ ডেলিভারি বাড়িতে হয়। এটা শূন্যের ঘরে নিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যেই মডেল সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ২৫০০০-৩৫০০০ হাজার জনসাধারণের বাস। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখানে বাস করে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মা, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং সেবাকেন্দ্র হতে ২৪/৭ স্বাভাবিক প্রসবসেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা হতে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন ৩৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হতে ৫০০টি কেন্দ্রকে প্রাথমিক পর্যায়ে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে।