জরিমানা নয়, মেডিকেল শিক্ষা সহজের উপায় নিয়ে ভাবুন

অ্যাভারেজ মানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মেডিকেল শিক্ষাজীবনে তিন ধরণের ক্লাস করেছি। প্রথমত, স্লাইড রিডিং ক্লাস। এক ঘণ্টার ক্লাসে ১০০ প্লাস স্লাইড। সবচেয়ে দ্রুত বেগে রিডিং পড়ে শেষ করতেও হিমশিম খেতে হতো। আমাদের একজন ম্যাডাম ছিলেন, রিডিংয়ের সাথে কিছুক্ষণ পর বলতেন, ‘বোঝা গেলো? বোঝা গেলো?’ আমরা মাথা উপর-নিচ করতাম। খুব বুঝতেছি।
আমাদের সম্মানিত একজন স্যার ছিলেন, দ্বিধাহীন চিত্তে নিজের মত পড়িয়ে যেতেন। পোলাপানের দিকে তাকাতেন না, এটা বলা ঠিক হবে না। মনে হতো, পোলাপান কি করতেছে, এটা বরং ইগনোর করতেন। এইসব স্লাইডের কনটেন্ট এবং কোয়ালিটি বছরের পর বছর নিজের ‘স্বাতন্ত্র্য’ রক্ষা করতো।
দ্বিতীয়ত, নিয়ম রক্ষার ক্লাস। ‘Veni, Vidi, Vici.’ অর্থাৎ এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটার অর্থ হলো- এলাম, বসলাম, চলে গেলাম।
তৃতীয়ত, প্রেজেন্টেশন ছাড়া বা প্রেজেন্টেশনসহ কিন্তু উপভোগ্য ক্লাস। এগুলোর জন্যই শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করে থাকে। বিষয় হলো, এই ধরণের ক্লাস সংখ্যায় খুবই কম। পরীক্ষা দিতে হলে আমাদেরকে ৭০-৭৫ ভাগ উপস্থিতি রাখতে হতো।
সম্প্রতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে নতুন একটি নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে পার ক্লাসে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসে আসে, ক্লাসের গুরুত্ব বোঝে, এই কারণেই সম্ভবত নতুন এই নিয়ম।
এখন ধরলাম, আগে এক সাবজেক্টের ৫০টি ক্লাসের মধ্যে একজন ৩৫টি ক্লাস করলে পরীক্ষায় বসতে পারতো। এখন একজন শিক্ষার্থী ৭০% উপস্থিতি সত্ত্বেও ১৫৫০০= ৭৫০০ টাকা জরিমানার যোগ্য হবে। সাবজেক্ট যতগুলোর সাথে ততগুণ জরিমানা হবে।
এই পরিমাণ টাকা কী একজন শিক্ষার্থী এই বয়সে আয় করে? এক সাবজেক্টের জরিমানার টাকাতে তো সে এক মাস খেয়ে পরে চলতে পারবে। এত পরিমাণ টাকা সে কোথায় পাবে? জরিমানার এই টাকা কে তুলবে? কোথায় জমা করবে? কে হিসাব রাখবে?
এসবের দরকার কী? এগুলোর চেয়ে ক্লাসের মান ভালো করা জরুরি না? প্রেজেন্টেশনগুলো যুগোপযোগী করা উচিত না? মেডিকেল এডুকেশন কিভাবে আরো সহজ করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হওয়া প্রয়োজন না?