অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী

অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী

সাবেক চেয়ারম্যান, ভাইরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ 


২৩ জুলাই, ২০২২ ০৯:৫২ পিএম

উদ্বেগ ছড়ানো মাঙ্কিপক্স থেকে সুরক্ষা যেভাবে

উদ্বেগ ছড়ানো মাঙ্কিপক্স থেকে সুরক্ষা যেভাবে
মাঙ্কিপক্সকে আগে যৌনবাহিত সংক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে যৌনতার সময় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে।

গত ৭ মে ব্রিটেনে একজন মাঙ্কিপক্সের সম্ভাব্য রোগী শনাক্ত করা হয়, যা গত ১৩ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার পরীক্ষাগারে নিশ্চিত করেছে। এর পর থেকে এই জাতীয় পক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড মহামারী আর ইউক্রেন যুদ্ধের পর এই মাঙ্কিপক্স নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। 

মাঙ্কিপক্স কি?

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস, স্মলপক্সের মতো ভাইরাস পরিবারের সদস্য। এটি একটি বিরল রোগ এবং প্রধানত মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশ যেগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টের কাছাকাছি সেখানে দেখা যায়। ভাইরাসের দুটি প্রধান স্ট্রেন রয়েছে। যথা-পশ্চিম আফ্রিকান এবং মধ্য আফ্রিকান।

উপসর্গ

প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলাভাব, পিঠে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফোলা, ঠাণ্ডা লাগা এবং ক্লান্তি। এতে ফুসকুড়ি তৈরি হয়, প্রায়শই মুখ থেকে শুরু হয়, তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে, সাধারণত হাতের তালু এবং পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে। 

ফুসকুড়িতে অত্যন্ত চুলকানি হতে পারে। ফুসকুড়ি পরিবর্তিত হয় এবং অবশেষে তা একটি ক্ষত তৈরি করে এবং যা পরে পড়ে যায়। ক্ষত দাগ হতে পারে। সংক্রমণ সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয় এবং নিজেই নিজেই ভালো হয়ে যায়। 

যেভাবে ছড়ায় 

কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে গেলে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

ভাইরাসটি ভাঙা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র, শরীরের তরল বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এটিকে আগে যৌনবাহিত সংক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি। তবে যৌনতার সময় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে।

এটি সংক্রমিত প্রাণী, যেমন- বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির সংস্পর্শে বা ভাইরাস-দূষিত বস্তু, যেমন: বিছানা ও পোশাকের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

আসলে কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে অনেকক্ষণ থাকলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এবারের আউট ব্রেকে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে সমকামী এবং উভকামী পুরুষ রয়েছে। 

চিকিৎসা কি?

মাঙ্কিপক্সের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এন্টিভাইরাল Tecovirimat, Cidofovir বা Brincidofovir মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে দাবি করা হয়ে থাকে। মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের (স্মল পক্স) বিরুদ্ধে টিকা ৮৫% কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলোও সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কতটা বিপজ্জনক?

ভাইরাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হালকা, কখনও কখনও চিকেনপক্সের মতো হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই পরিষ্কার হয়ে যায়। মাঙ্কিপক্স কখনও কখনও আরও গুরুতর হতে পারে। তবে পশ্চিম আফ্রিকায় মৃত্যুর কারণ (১০%) বলে জানা গেছে। 

ইতিহাস

ভাইরাসটি প্রথম একটি বন্দি বানরের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছিল এবং ১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার ১০টি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে, নাইজেরিয়া সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হয়েছিল, যেখানে ১৭২টি সন্দেহভাজন রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং ৭৫% রোগীর বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল, যার বেশির ভাগই ছিল পুরুষ। ২০০৩ সালে প্রথমবার এটি আফ্রিকার বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রাদুর্ভাব হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে আমদানি করা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দ্বারা সংক্রমিত একটি কুকুরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে রোগীরা এই রোগটি পেয়েছিলো। সেবার ভাইরাসটি মোট ৮১ জনের দেহে শনাক্ত হয়। কিন্তু এতে কারোরই মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তাই বলা যায়, এই মাঙ্কিপক্স নিয়ে অতটা আতঙ্কের কিছু নেই।

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : মাঙ্কিপক্স
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত