বিষধর সাপে কাটা মুমূর্ষু রোগী বাঁচালেন চমেকের চিকিৎসকরা

সাখাওয়াত হোসাইন: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রাণপণ চেষ্টায় বেঁচে গেলেন বিষধর সাপে কাটা মৃত্যু পথযাত্রী এক রোগী। ওই রোগীর নাম প্রিয়াঙ্কা। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। বর্তমানে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন।
প্রিয়াঙ্কাকে সুস্থ করতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন চমেকের নয়জন চিকিৎসক। তারা হলেন- চমেক হাসপাতালের ১৬ নং ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ, সহকারী রেজিস্টার ডা. নাদিমুল ইসলাম, ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহিমা আফরিন, ট্রেইনি মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান, অনারারি মেডিকেল অফিসার ডা. নওশাদ আহমেদ, এনেস্থিসিয়া কনসালটেন্ট ডা. ইসতিয়াক, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মোস্তফা আরাফাত ইসলাম, ডা. সেহতাব আনোয়ার (সাহিল), ডা. তামান্না তাসবিহা ও ডা. আফরিনা আক্তার।
জানতে চাইলে চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. মোস্তফা আরাফাত মেডিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো গত ৬ জুলাই আমরা ১৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ছিলাম। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিষধর সাপে কাটা প্রিয়াঙ্কা নামে একজন মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। তখন তার চোখের পাতা ও গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং গাড় ভেঙে গেছে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে হয়তো রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, ‘রোগীকে প্রথমেই এন্টিভেনমের প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী অস্থির হয়ে পড়ে, স্যাচুরেশন কমতে থাকে, শুরু হয় শ্বাসকষ্টও। তখন সহকর্মী ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইনটিউবেশন করে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করো। আমরা ইর্মাজেন্সি অবস্থায় রোগীকে আইসিইউতে নিই। পরে দ্বিতীয় ডোজ দেই, তাতেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এর কিছুক্ষণ পর রাত দেড়টার দিকে তৃতীয় ডোজ দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি, এবার রোগী সুস্থ না হলে বাঁচানোর আর কোনো অপশন বাকি নেই। পরিস্থিতি দেখে আমরা একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়েছি, রোগী কিছুক্ষণ পর হয়তো মারা যাবে এমন আশঙ্কা করছিলাম।’
ডা. মোস্তফা আরাফাত আরও বলেন, ‘রাতে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা দুই-তিন ঘণ্টা পর পর রোগীর ফলো-আপ দিয়েছেন। পরদিন সকালে সাড়ে নয়টার দিকে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি রোগীর অবস্থা অনেকটা উন্নীত হয়েছে। রোগীর চোখ খুলতে পারছে, কথা বলার মতো অবস্থায় আছে। সবাইকে চিনতে পারছে।
তিনি বলেন, সাপে কাটা রোগী দুই ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে এসেও মারা গেছে। আর এই রোগী তিন ঘণ্টারও বেশি সময় পরে আমাদের কাছে এসেছেন। এরপরও তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। এটা একটা আমাদের বড় সফলতা।
রোগী সম্পূর্ণ আছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ঈদের ছুটি কাটানোর পর যখন ওয়ার্ডে আসি, তখন রোগী আমাদেরকে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। এখন রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। গত ১৩ জুলাই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপরও ফলোআপে রেখেছি।
প্রসঙ্গত, চমেকের সাবেক অধ্যাপক ডা. ফয়েজের হাত ধরে ১৯৯৪ সালে থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নং ওয়ার্ড সাপে কাটা রোগী চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড ইউনিট হিসেবে কাজ শুরু করে। বর্তমানে অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষের নেতৃত্বে এই ইউনিটে রোগীর চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভাগের চিকিৎসকরা।
-
২১ জুলাই, ২০২২
-
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২