১৭ জুলাই, ২০২২ ০৩:৫১ পিএম

পরীক্ষার আগে স্ট্রোকে মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পরীক্ষার আগে স্ট্রোকে মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
মানসিক চাপ কমাতে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকা প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

সালাহউদ্দীন কাদের: ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার আগের রাতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তানি দাশ গুপ্তা মারা গেছেন। শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দাবি, পড়াশোনার চাপ না নিতে পেরে স্ট্রোক করে মারা যান তানি।

অভিযোগের যৌক্তিকতা ও যথার্থতা জানতে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে মেডিভয়েসের যোগাযোগ হয়। এ প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, স্ট্রেসের কারণে স্ট্রোক নয়, সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে স্ট্রোক না হয়ে হার্ট অ্যাটাকে তানি দাশ গুপ্তার মৃত্যু হলে এমন অভিযোগ উঠা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যেতো। যেহেতু স্ট্রোকে মারা গেছে, তাই তাঁর অন্য সমস্যা থাকতে পারে।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কনোজ কুমার বর্মন আজ রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘পড়াশোনা চাপের সাথে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। যে শিক্ষার্থী মারা গিয়েছে, তার ব্রেইনের ভেসেলে হয়তো আগে থেকে সমস্যা ছিল। সাধারণত পড়াশোনার চাপের কারণে এ রকম ঘটনা ঘটে না।’

এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ’র আরেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আহসান হাবীব মেডিভয়েসকে বলেন, ‘পড়াশোনা চাপের সাথে ব্রেইন স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই।’

পরীক্ষার আগে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি থাকে। এ চাপ মোকাবিলার কৌশল তুলে ধরে বিএসএমএমইউ’র মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার মেডিভয়েসকে বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। যারা খুব ভাল শিক্ষার্থী, তারা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করতে পারে। কিন্তু তাদেরও অনেক পড়তে হয় এবং অনেক বিষয় মুখস্থ রাখতে হয়। সেজন্য মুখস্থ জ্ঞান ভাল না থাকলে খুব ভাল শিক্ষার্থীকেও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে। যখন তারা পিছিয়ে যায়, তখন কাছের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষকরা পরামর্শ দেন পড়ো-পড়ো, আরো বেশি করে পড়ো। এই পড়াশোনার কারণে তাদের বন্ধুরা দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে তাদের ফলাফল আরও খারাপের দিকে যায়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপসহ বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়।

চাপ এড়াতে করণীয়

ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের বরাত দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘২০১৭ সালে এ সংস্থাটির একটি থিম ছিল ‘Depression: let’s talk’। সুতরাং আমরা যেন আমাদের সমস্যাগুলো লুকিয়ে না রাখি।’

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমস্যা নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য কাছের মানুষজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। কোনো বিষয় কঠিন মনে হলে ওই সময়ের জন্য পরিবর্তন করে নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষকদের ভূমিকা

অধ্যাপক শামসুন নাহার বলেন, ‘আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সংকটাপন্ন শিক্ষার্থীদের সময় দিতে হবে। তাদের মানসিক চাপ কমাতে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে জরুরি। তাঁদেরকে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনার বাইরেও সময় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’

উন্নত বিশ্বের সাথে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। তাই বলে কি তাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে না? তাই আমাদের দেশেই সুস্থ বিনোদন এবং সুস্থ পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

‘বিদেশে প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থীকে দুই ঘণ্টা আউটডোর এক্টিভিটিসে থাকতে হয়। আর আমাদের দেশের স্কুলগুলো এক ভবনে সীমাবদ্ধ। এখানে আউটডোর এক্টিভিটিস বলতে কিছু নেই। তাই আমাদের দেশের সন্তানেরা ছোট থেকেই মানসিক চাপ নিয়ে বড় হচ্ছে। তাই কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে’, যোগ করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মা তাদের সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাপ দিচ্ছে। এর কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভালো করতে পারছে না। ভালো চিকিৎসক হওয়া কিংবা মেডিকেল শিক্ষা নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়াও এ ক্ষেত্রে অন্তরায়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সারাবিশ্বেই মেডিকেল শিক্ষা চাপ আছে। এটা শুধু আমাদের দেশের জন্য নয়। যারা এ পড়ার চাপ নিতে পারবে শুধু তাদেরই এ বিষয়ে পড়তে আসা উচিত। ওই শিক্ষার্থীকে মানসিকতা ঠিক করেই পড়াশোনার ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে। তাকে অনেক পড়াশোনা করতে হবে—এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মেডিকেল পড়াশোনায় আসতে হবে। 

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত