
ডা. নুসরাত সুলতানা লিমা
সহযোগী অধ্যাপক (ভাইরোলজি),
পিএইচডি গবেষক (মলিকুলার বায়োলজি),
ইনস্টিটিউট ফর ডেভলপিং সায়েন্স এন্ড হেল্থ ইনিশিয়েটিভস।
১৭ জুলাই, ২০২২ ১০:১৬ এএম
কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক: কোমল পানীয় অন্যতম কারণ

অতিরিক্ত গরমে গলা শুকিয়ে যখন কাঠ, এক বোতল কোমল পানীয় আপনার দিলকে ঠাণ্ডা করে দেয়। ভারি খাবার বা ফাস্ট ফুডের সাথে কোমল পানীয় যেন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে দিনে দিনে ফাস্ট ফুডের ব্যবহার ঊর্ধ্বগামী হওয়ার সাথে সাথে সমানতালে বেড়ে যাচ্ছে কোমল পানীয় গ্রহণের হার।
আপনি জানেন, এই কোমল পানীয় শরীরের উপর কি ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব ফেলে? ইদানিং কম বয়সে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আজও একটি প্রাইভেট মেডিকেলের একজন শিক্ষার্থী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমরা সকলেই জানি কোমল পানীয়ের ব্যবহার কতখানি বেড়ে গেছে এখন। তাই, কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অতিরিক্ত কোমল পানীয়ের ব্যবহারও যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
দেখুন, কোমল পানীয় কীভাবে আমাদের ক্ষতি করছে?
২৫০ মিলি কোমল পানীয়তে ৯-১০ চামচ চিনি থাকে। ফলে যারা অধিক পরিমাণে কোমল পানীয় পান করেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। শিশু ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে।
২৫০ মিলিতে এতটা চিনির পরিমাণ শুনে আপনার কাছে হয়তোবা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আসল বিষয় হচ্ছে, চিনির মিষ্টতা কম অনুভব করার জন্য কোমল পানীয়ে ফসফোরিক এসিড মেশানো হয়। এই এসিড হাড় মজবুতকারী ক্যালসিয়াম absorption এ বাধা প্রদান করে। ফলে হাড় হয় দুর্বল।
কোমল পানীয়ে ব্যবহৃত চিনি হচ্ছে ফ্রুক্টোজ। ফ্রুক্টোজের বিপাক হয় লিভারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে। বিপাক না হওয়া অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ ফ্যাটে পরিণত হয়ে লিভারে জমা হয়ে ফ্যাটি লিভার সৃষ্টি করে। ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস—এমন কি লিভারের ক্যান্সারও হতে পারে।
কোমল পানীয়ে আরো থাকে কার্বোনিক এসিড। চিনির সাথে মিলে এটি আমাদের দাঁতের ক্ষতি করে।
একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? কোমল পানীয়ের মাধ্যমে আপনি যে এতো ক্যালরি গ্রহণ করছেন, তাতে কিন্তু আপনার পেট ভরছে না। সাথে খাচ্ছেন ভারী খাবার বা ফাস্ট ফুড। অধিক মাত্রায় ক্যালরি গ্রহণ obesity বা স্থুলতার সৃষ্টি করে।
কোমল পানীয় উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুইদিন কোমল পানীয় পান করেন, তাদের pancreatic cancer হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে; যারা পান করেন না, তাদের তুলনায় এ ঝুঁকি ৮০% বেড়ে যায়।
এ ছাড়া কোমল পানীয়ে কৃত্তিম রঙ, preservative দেওয়া হয় যা, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
তাই আসুন,
আমরা স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন করি।
নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করি।
ফাস্ট ফুড বা অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করি।
কোমল পানীয় পরিহার করার চেষ্টা করি।