ডা. সেলিনা এ. শাহীন

ডা. সেলিনা এ. শাহীন

এমবিবিএস, এমপিএইচ,
পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষক, 
টুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেল্থ অ্যান্ড টপিক্যাল মেডিসিন


৩০ জুন, ২০২২ ০৮:১১ পিএম

অদিতিদের মন পোড়া গন্ধ কেউ শুঁকে দেখে না

অদিতিদের মন পোড়া গন্ধ কেউ শুঁকে দেখে না
শরীর পোড়া গন্ধ সবাই পায়, মন পোড়া গন্ধ কেউ শুঁকে দেখে না। ছবি: সংগৃহীত

একজন মেয়ে যখন ডাক্তার হয়, সমাজ তাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। সে অসামাজিক, আত্মকেন্দ্রিক, অসুন্দর, বই খাতা ছাড়া কিছু চেনে না, আরো কত অভিযোগ।

কেউ স্বেচ্ছায় আবার কেউ বাবা-মায়ের কথা রাখতে এই লম্বা পথটা পাড়ি দিতে গিয়ে না জানি কত শত স্বপ্ন আনন্দ গলা টিপে মারে, তার হিসাব ডাক্তার মেয়েদের থাকে না।

সেই যে স্কুলের শেষের দিকে দৌড় শুরু হয়, সেই দৌড় চলতে থাকে আমৃত্যু। সময় মতো পাস করতে হবে, পোস্ট গ্রেজুয়েশন করতে হবে, সরকারি চাকরি, বিদেশি ডিগ্রি; আর সব কিছু ছাড়িয়ে যায়, বাবা-মায়ের আতংক, এর তো বয়স বেড়ে যাচ্ছে, বিয়ে দিতে হবে। বাচ্চা নিতে হবে।

সমাজের বেঁধে দেওয়া নিয়মে তারা চলতে চলতে ভুলেই যায়, এক সময় তারাও আকাশ দেখতো, কবিতা পড়তো। কেউ মনে মনে রুপা আবার কেউ মীরা হতে চেয়েছিল। 

বাবা-মায়ের বকুনীর ভয়ে তাদের কখনো কৃষ্ণচূড়া দেখা হয় না।

তাদের ভালো থাকার গল্পগুলো এক সময় পরিবারের কিংবা রোগীদের ভালো থাকাতে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। সবাই ভাবে, এদের অনেক টাকা, এদের আবার হতাশা কি?

জীবনের কাছে আমাদের সবার নিজস্ব কিছু চাহিদা আছে। সে চাহিদাগুলো যখন সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ণতা পায় না, মানুষ হতাশ হয়। ডাক্তার মেয়েরাও তার ব্যতিক্রম নয়।

ঘোড়দৌড়ে পিছিয়ে যাওয়ার ভয়ে, তারা শুধু দৌড়ে যায়। বেশির ভাগই নিজেকে ভুলে থাকে, আর যারা খুঁজতে থাকে, তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়।

ভাবছিলাম, অদিতির কথা। এতো কাঠখড় পুড়িয়ে যখন সে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে, হঠাৎ কি এমন হলো যে, সে নিজেকে ঝলসে দিতে চাইলো?

আমরা কেউ জানিই না, রোজ কতবার ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এবার শরীর পোড়ানোর পালা?

একবারও কি মনে হচ্ছে আমাদের, দুধের শিশুটিকে রেখে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে তাকে কতবার নিজের সাথে যুদ্ধ করে হারতে হয়েছে? সদা হাসোজ্জ্যল অদিতি কত রাত গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছে?

অদিতি একা পুড়ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, সবচেয়ে ভালো অভিনেত্রী যে ডাক্তার মেয়েটা, রোজ দাপটের সাথে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়, বিকেলে যার চেম্বারে তিল ধারণের স্থান নেই; বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুখের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া সেই ডাক্তার মেয়েটাও রোজ পুড়ছে। বিষণ্ণতায় জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছে, নিভৃতে গোপনে।

শরীর পোড়া গন্ধ সবাই পায়, মন পোড়া গন্ধ কেউ শুঁকে দেখে না।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : চিকিৎসকের আত্মহত্যা
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত