২৮ জুন, ২০২২ ০৯:২২ পিএম

বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাবে কি কেয়ার মেডিকেলের ৩৬ চিকিৎসক

বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাবে কি কেয়ার মেডিকেলের ৩৬ চিকিৎসক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্টার্নশিপ প্রত্যাশী একজন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছি না। ৩০ লাখের বেশি টাকা খরচ করে এমবিবিএস পাস করে করেছি, এখন পরিবারকেও বুঝ দিতে পারছি না।’

সাখাওয়াত হোসাইন: এমবিবিএস ফাইনাল প্রফেশনাল পাস করেও চিকিৎসক তৈরির প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন রাজধানীর কেয়ার মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের ৩৬ চিকিৎসক। ফলে তারা গত বছরের অক্টোবর মাসে এমবিবিএস পাস করেও ইন্টার্নশিপ করছে পারছেন না।

তাদের দাবি, বিএমডিসি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কেয়ার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এবং তারা এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, পাচ্ছেন না কোনো সমাধান। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষও তাদেরকে করছেন না স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা। সবাই কেবল তাদেরকে আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন পাওয়া ন্যায্য অধিকার বলেও মনে করেন ইন্টার্ন প্রত্যাশী ৩৬ জন চিকিৎসক।

জানা গেছে, বিএমডিসির শর্ত অনুযায়ী, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, রোগী ও চিকিৎসক। কলেজটিতে ব্যাপক শিক্ষক সংকট, কলেজ থেকে হাসপাতালের দূরত্ব অনেক। কলেজ হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যা থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৭৯ শয্যা, সংকট রয়েছে আরও ৬১টি শয্যার। এসব কারণে কেয়ার তৃতীয় ব্যাচ থেকে বিএমডিসি কলেজটির অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছে।

কেয়ার মেডিকেলের থেকে এমবিবিএস পাস করা ইন্টার্ন প্রত্যাশী কয়েকজন চিকিৎসক মেডিভয়েসেকে বলেন, ‘আমরা বিএমডিসির সকল নিয়ম মেনে কেয়ার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি, তারপরও কেন আমাদের রেজিস্ট্রশন দেওয়া হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না। বিএমডিসি চাইলে আমাদেরকে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দিতে পারে, কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। আট মাসের বেশি সময় চলে গেছে। এখন আমরা হতাশ।’

তারা আরও বলেন, ‘আমরা অবৈধ কিছু করিনি, এমনও নয় যে, আমরা হাইকোর্টের রিট নিয়ে কেয়ার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি বা বিএমডিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে ভর্তি হয়েছি, এমন কিছু নয়। বিএমডিসি কেন আমাদেরকে রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না, আমরা তা বুঝতে পারছি না। তাই এই মেডিকেলে বা অন্য কোনো মেডিকেলে আমাদেরকে ইন্টার্ন করার সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্টার্ন প্রত্যাশী একজন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছি না। আমরা হতাশ হয়ে যাচ্ছি, চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। ৩০ লাখের বেশি টাকা খরচ করে এমবিবিএস পাস করে করেছি, এখন পরিবারকেও বুঝ দিতে পারছি না। কেয়ার মেডিকেল কর্তৃপক্ষেরও দায়সাড়া ভাব। বিএমডিসির সাথে তাদের তৎপরতা আরও জোরালো হলে অচিরেই আমরা রেজিস্ট্রেশন পাব। বিএমডিসির সঙ্গে তারা তেমন কোনো যোগাযোগ করছে না। কেয়ার কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ ও মর্মাহত।’

কেয়ার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা

কেয়ার মেডিকেলের এমবিবিএস পাস করা ৩৬ জনের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জটিলতার সমস্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দফায় দফায় মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের কাছে ফোন করা হলে শনিবার (২৫ জুন) বিকেলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সাথে আমি আধা-ঘণ্টা পরে কথা বলছি, এখন আমি বৈঠকে আছি, আশপাশে অনেক মানুষ কথা বলা যাবে না।’

আধা-ঘণ্টা পরে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

পরে সার্বিক সব বিষয়ে কলেজটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গোলাম মোর্শেদ সুমনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি মেডিভয়েসকে বলেন, ‘৩৬ চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত বিএমডিসির কাছে আটকে আছে। আগামী ২৮ তারিখে বিএমডিসির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএমডিসির সভাপতি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কবে বৈঠিকটি হবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের সমস্ত তৎপরতা চলছে, বিএমডিসি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। আমরা প্রতিনিয়ত বিএমডিসির সাথে যোগাযোগ করছি, গত বৃহস্পতিবারও সেখানে গিয়েছি। বিএমডিসির বৈঠক হলেই আমাদের বিষয়টি উঠে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পরে একটি বৈঠক হয়েছে, সে বৈঠকে বিএমডিসি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছে বিএমডিসি।’

এর আগে গত এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে ডা. সুমন মেডিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘আশা করি, ঈদের (গত রমাযানের ঈদ) আগে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এটা বিএমডিসির অধীনে, সুতরাং সিদ্ধান্ত তারাই দিবে। বিএমডিসিই অনুমোদন দিবে।’ এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, কবে রেজিস্ট্রেশন পাবে তারা জানা নেই কারও।

কেয়ার কর্তৃপক্ষের ‘তৎপরতায়’ ক্ষুব্ধ ৩৬ চিকিৎসক

প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় সন্তষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ন প্রত্যাশী ৩৬ জন চিকিৎসক। তারা বলছেন, ‘কেয়ার মেডিকেল কর্তৃপক্ষে তৎপরতায় আমরা সন্তষ্ট নই; বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা বেশি প্রয়োজন। তারা জোরালোভাবে রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য কাজ করছে না। কর্তৃপক্ষ বেশি সক্রিয় নয়, তারা চায় রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য আমরা মুভ করি। তাদের যতটুকু কাজ করা দরকার, তা তারা করছে না। উনাদের কাজটা আমাদের করা লাগছে।’

তারা আরও জানান, ‘কেয়ার মেডিকেল কর্তৃপক্ষের যতটুকু বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল, তারা তা করছে না। আমরা তাদেরকে কয়েকবার তাগাদা দিলে তারা মাঠে নামে নামে বলে নামছে না, এটা কামনা করি না। কেয়ার কর্তৃপক্ষের উচিত সকল খোঁজ খবর তারা নিবে। আমাদের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য যেটা আজকে করা দরকার, সেটা কেয়ার কর্তৃপক্ষকে আমরা কয়েকবার তাগিদ দেওয়ার পর করে। সব মিলিয়ে আমাদের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া নিয়ে তাদের তৎপরতায় আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নয়। তাদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার। ইতিমধ্যে আট মাসেরও বেশি সময় চলে গেছে। কবে রেজিস্ট্রেশন পাবো কোনো নিশ্চিয়তা নেই।’

বিএমডিসির বক্তব্য

কেয়ার মেডিকেল থেকে পাস ৩৬ জনের বিষয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. আরমান হোসেনের সঙ্গে কথা যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, বৈঠকটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আবার নতুন তারিখ দেওয়া হবে। এমবিবিএস পাস করা ৩৬ জন প্রফেশনাল রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর ইন্টার্নশিপ করতে পারবে, এর আগে তারা ইন্টার্ন করতে পারবে না।’

পাস করা ৩৬ জন চিকিৎসক বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা বলা যাচ্ছে না, বিএমডিসির বৈঠকের পর বলা যাবে।’

রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার পক্ষে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ

কেয়ার মেডিকেল কলেজ থেকে পাস ৩৬ জন চিকিৎসককে ইন্টার্নের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। তারা বলছেন, কেয়ার দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিএমডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেখে ভর্তি হয়েছে। সেসময়ে কেয়ার মেডিকেলের অনুমোদন ছিল, তাই তাদেরকে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া উচিত।

জানতে চাইলে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিশনের (বিএমএ) মহাসচিব ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল মেডিভয়েসকে বলেন, ‘কেয়ারের শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয়েছে, তখন তাদের কলেজে বিএমডিসির অনুমোদন ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে কলেজটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে, কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো দোষ দেখছি না। এখন দায়িত্ব স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় ও বিএমডিসির। তারা কোয়ালিফাই হয়ে এমবিবিএস পাস করে বের হয়েছে। তাদেরকে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেয়ার ৩৬ জন চিকিৎসক পরীক্ষা দিয়ে কোয়ালিফাইড। তাদের মার্কশিট আছে, সবকিছুই আছে। এখন তাদেরকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বা পাশের অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্ন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তারা রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক