পেছাচ্ছে না ফাইনাল প্রফের ভাইভা, দুই পরীক্ষার মাঝে ব্যবধান বাড়ছে

মো. মনির উদ্দিন: কাছাকাছি সময়ে এফসিপিএস ও এমডি-এমএস পরীক্ষাসহ নানা কারণে পেছাচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর মে ২০২২ ও জানুয়ারি ২০২২ এর চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার মৌখিক, প্র্যাকটিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা।
তবে দুই পরীক্ষার মাঝখানে সময়ের ব্যবধান বাড়ানোর পাশাপাশি সময়সূচিতে থাকা ছোট অসঙ্গতিগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শাহরিয়ার নবী আজ শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে মেডিভয়েসকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
যে কারণে পেছাচ্ছে না পরীক্ষা
সময়সূচিতে বেশ কিছু অসঙ্গতির কথা নজরে আনলে ঢাবি মেডিসিন অনুষদের ডিন বলেন, ‘পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে দেওয়াও কোনো অসম্ভব বিষয় না। কিন্তু দুটি বিষয় আমাদেরকে বেকায়দায় ফেলেছে। সমস্যা হলো: যারা পরীক্ষা নেবেন, সামনে তাঁদের সবার ঈদের ছুটি। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) পরীক্ষা শুরু হবে। তার পর আবার পোস্ট গ্রাজুয়েশনের এমডি-এমএস পরীক্ষা। এবার সবগুলো এক সঙ্গে পড়ে গেছে।’
এসব কারণে পরীক্ষা পেছানোর অবকাশ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিসিপিএসের পরীক্ষা সাধারণত শুরু হয়, জুলাইয়ের এক তারিখে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এফসিপিএসের কিছু পরীক্ষা ১৫-১৬ জুলাই তারিখ দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে যারা এমবিবিএসের পরীক্ষক তারাই বিসিপিএসের পরীক্ষক, তারাই আবার এমডি-এমএসের পরীক্ষক। সবার মধ্যেই সমন্বয় করতে হয়। এ অবস্থায় ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পেছানোর চিন্তা করলে আমাদেরকে পরীক্ষক সংকটে পড়তে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ পরীক্ষাই ঈদের আগে শেষ হয়ে যাচ্ছে। গুটিকয়েক মেডিকেল কলেজের পরীক্ষা ঈদের পরেও আছে। সেগুলোও ঈদের পর তিন-চার দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যবশত এসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঈদ উদযাপন করতে পারবে না। ঈদে তাদেরকে ক্যাম্পাসে থাকতে হবে। ২/৩টি মেডিকেল কলেজের ত্রিশ-চল্লিশ শিক্ষার্থী হবে।
ঈদে বন্ধ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদেরকে খাওয়া-দাওয়াসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হবে—এমন প্রসঙ্গ আনলে তিনি বলেন, ‘প্রিন্সিপ্যাল মহোদয়গণ এর ব্যবস্থা করবেন। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতেই হবে। কারণ চিকিৎসকদেরকে ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করতে হয়। সবাই যখন ঈদের আনন্দে উদ্বেলিত, তখন চিকিৎসকদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সুতরাং যারা চিকিৎসক হতে যাচ্ছেন, তাদেরকে এটা মানতেই হবে।’
দুই পরীক্ষার মাঝে ব্যবধান বাড়বে
দুই পরীক্ষার মাঝখানে সময়ের ব্যবধান কম হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর এক দিনের ব্যবধানে পরীক্ষা হচ্ছে, সেই সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার আগে কমপক্ষে ২/৩ দিনের ব্যবধান রাখতে বলা হয়েছে। অধিকাংশ মেডিকেলের এ সংক্রান্ত সমস্যা নেই। এক পরীক্ষার পর আরেক পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, এমন সমস্যা আছে ৫/৬ মেডিকেলে। এগুলো সংশোধন করা হবে।
কোনো মেডিকেলে একই শিক্ষার্থীকে দুটি সিরিয়ালে রাখার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘অসতর্কতাবশত এমনটি হয়েছে। এটা সংশোধনের দাবি রাখে। দ্রুতই এটা সংশোধন করা হবে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না। তাই এ নিয়ে তাদেরও উদ্বিগ্ন হওয়ারও অবকাশ নেই। ছোট-ছোট সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’
তবে সামগ্রিক দিক বিবেচনায় পুরো সময়সূচি সবার অনুকূলে যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকাশিত সূচি অনুযায়ী, যেই শিক্ষার্থী ঈদে ছুটি ভোগ করতে পারলো না, তার গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে সাত দিন। সেটা কিন্তু বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। সে তো ঈদই করতে পারছে না।’
করোনা পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে সকল কিছুই সহজ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর পরও সকল দাবি-দাওয়া পূরণ করতে গেলে পুরো পদ্ধতি ধসে পড়বে।
পরীক্ষা পেছানোর দাবি শিক্ষার্থীদের
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) মে ২০২২ ও জানুয়ারি ২০২২ এর চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার প্র্যাকটিক্যালের সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে। ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৬ জুন শুরু হয়ে এসব পরীক্ষা শেষ হবে ৭ জুলাই।
দুই পরীক্ষার মাঝখানে কম সময় থাকাসহ একাধিক অসঙ্গতির কথা জানিয়ে সময়সূচির পরিবর্তন এবং ঈদের এক দিন আগে ও দুই দিন পরে পরীক্ষা থাকায় মৌখিক পরীক্ষা পেছানোরও দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
গাজীপুর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী মেডিভয়েসকে বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আমার রুটিনে কোনো গ্যাপ নেই। অর্থাৎ ৬/৭ দিনের মধ্যে আমার প্রফ শেষ হয়ে যাবে। সরকারিতে ৬/৭ দিন করে গ্যাপ থাকলেও বেসরকারিতে নেই। প্রায় সকল বেসরকারি মেডিকেলেই একই চিত্র।’