ডাক্তারী পেশা নয়, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো

ডা. আবু হেনা, সৌদী আরব থেকে :
ডাক্তারী, জী না । এটা কোনো পেশা নয় । এটা সম্পূর্ন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো একটা দাসত্ব বৃত্তি ।
এসএসসি পাশ করি আজ থেকে ৩৮ বছর আগে ঢাকা শহরের নামকরা স্কুল থেকেই এবং খুব ভাল রেজাল্ট নিয়েই।
তারপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি । রেজাল্ট ছিলো সেই ১৯৮০ সনে ব্রিলিয়ান্ট ।
ইচ্ছা ছিল পাইলট হবো। কিন্তু সেই আমলে পাইলট স্কুলে ট্রেনিং নেবার সামান্য খরচও আমার বাবা দেয় নি।
কারন উনি ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। ( না, জনসেবা নয়, এমবিবিএস পাশ করানোর পর বিয়ের বাজারে ছেলেকে চড়া দামে বিক্রি করার প্ল্যান)
আমরা ভর্তি হলাম মেডিকেল কলেজে। আমার নাম এলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ঢাকা থেকে ষাট মাইল দূরে।
১৯৮১ সালে ট্রেনে যেতে তিন ঘন্টা আর টাংগাইল হয়ে বাসে করে যেতে লাগতো ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ।
হোষ্টেল বলতে নতুন ভর্তি হওয়া ছেলেমেয়েদের স্থান হলো কমনরুম। খাবারের কথা বাদই দিলাম।
কিন্তু প্রথম দিন থেকেই আইটেম , কার্ড ফাইনাল ইত্যাদি শুরু হয়ে গেলো। ফাঁকি দেবার কোনো উপায় নাই ।
মেডিকেল কলেজের সব চাইতে ফাঁকিবাজ ছেলে বা মেয়েকেও সারাদিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই পড়া/ ওয়ার্ড ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবেই ।
আর আমার সাথে যারা স্কুল/ কলেজ লাইফে এভারেজ রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হলো, ঢাকায় গেলে দেখতাম দিনে দু’ঘন্টাও বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে না।
বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা / নাটক/ মুভি, লাইফটাকে তারা তখন থেকেই এনজয় করতো।
পাঁচ বছর গাধার খাটুনী আর এক বছর ইন্টার্নী শেষ করে ডাক্তার হয়ে ১৯৮৮ সালে ২৫০০ টাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে জবে ঢুকলাম।
আর সেই সংগে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম। ডিসেম্বর ১৯৮৯ এ ১৮৫০ টাকা বেতনে সরকারী চাকুরীতে যোগদান।
সেটাও পার্বত্য অঞ্চলের এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তারপর সমতল ভূমির আরেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
১৮৫০ টাকা স্যালারীতে কি সংসার চলে ?
২৪ ঘন্টাই অন কলে থাকতে হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়।
আট বছর চাকুরীর পর সৌভাগ্য হলো বিদেশে চাকুরীতে যোগদানের।
এখানে আর্থিক সুবিধা বাড়লেও কাজের পরিবেশ তথাস্তু ।

পিতাকে নিয়ে ছেলে সাদি আব্দুল্লাহ’র আবেগঘন লেখা
তুমি সবার প্রফেসর আবদুল্লাহ স্যার, আমার চির লোভহীন, চির সাধারণ বাবা
