ডা. মো. তরিকুল হাসান
রেসিডেন্ট, নিউরোলজি বিভাগ,
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
২৩ মে, ২০২২ ০৪:৪৫ পিএম
মেডিকেলের আন্ডারগ্রাজুয়েট স্তরে 'স্বাস্থ্য অর্থনীতি' বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সংগতির ব্যাপক ফারাক রয়েছে। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। দেশের চিকিৎসকরা অনেকেই অনেক ওষুধের দাম জানেন না, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষায় কত খরচ পড়ে তাও জানেন না। অবশ্য কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে এগুলো জেনে নেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগুলো জানানো বিশেষ প্রয়োজন। এজন্য মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে 'স্বাস্থ্য অর্থনীতি' বিষয়ে একটি আলাদা বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত, যাতে চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জানতে পারেন।
আমার কাছে বিভিন্ন পেশার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। এর বড় অংশ অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর। অনেকেই ভালোমানের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকরা যখন প্রেসক্রিপশনে দামি ওষুধ লিখেন তখন রোগীরা অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে কয়েকদিন খেয়ে বাদ দেন। ওষুধ নিয়মিত না করার আরো কারণ রয়েছে। তবে সচেতনভাবেই আজকের আলোচনা শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েই করতে চাচ্ছি।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় দামি ওষুধ আবশ্যক হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে বাছবিচারের সুযোগ থাকে না। জীবন বাঁচানোর জন্য তখন অর্থনৈতিক সঙ্গতির চিন্তা করলে চলে না। এজন্য মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরিতে খরচ বেশি হলেও এক্ষেত্রে আপোস করা ঠিক হবে না।
তবে ওষুধ কোম্পানিগুলো বেশিরভাগক্ষেত্রে প্রচারণা চালায় কেবল দামি ওষুধের। অত্যাবশকীয়, কিন্তু কমদামি ওষুধ যেমন: অ্যাসপিরিন (Aspirin) অনেক কোম্পানি বাজারজাত করে না। ডায়াবেটিসের কার্যকরী ওষুধ গ্লিবেনক্লামাইড (Glibenclamide) রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির। কারণ, ওষুধটির দাম কম। আবার কিছু দিন পর পর দেখা যায়, কমদামি ওষুধের নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফলাওভাবে প্রচার করা হয়।
অনেক সময় গাইডলাইনগুলোতে দামি ওষুধের আধিক্য দেখা যায়। এজন্য দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্ডারটেবিল কোন মেকানিজম আছে কিনা তা জানা নেই।
প্রায়শই ওষুধের স্ট্রিপে ওষুধের দাম লেখা থাকে না। অনেক কোম্পানির এমআর কে ওষুধের দাম জিজ্ঞাসা করলে থতমত খেয়ে যায়। তাদের প্রচারণার লিফলেটে দামের ব্যাপারে কদাচিৎ দেখা যায়। ওষুধ আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা দামের প্রসঙ্গ উঠলেই একদল লোক কেবল চিকিৎসকদের কমিশন-উপহার নিয়ে হইচই শুরু করে। এরাই মূলত বুঝে হোক আর না বুঝে হোক; ওষুধ কোম্পানি ও ক্লিনিক মালিকদের অনৈতিক সুযোগ করে দেয়।
দেশের বেশিরভাগ চিকিৎসক কমিশন গ্রহণ করেন না। আর যারা কমিশন গ্রহণ করেন, তারা সুস্পষ্ট অন্যায় করছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ কতৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই কমিশন বাণিজ্য ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দামবৃদ্ধির একটি কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়।
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি খুব সহজেই চোখে পড়ে, অথচ কত অত্যাবশকীয় ওষুধের দাম বেড়েই চলছে তা কারও চোখে পড়ছে না। তবে যার বাড়িতে দুই-একজন দীর্ঘমেয়াদি রোগী রয়েছেন তিনি আসল কষ্টটা বুঝতে পারছেন। মানুষ যাতে সঠিক দামে ওষুধ সংগ্রহ করতে পারে, এজন্য ওষুধ ও ইনভেস্টিগেশনের ন্যায্য দাম নির্ধারণ করতে হবে।
ওষুধ কোম্পানি ও ক্লিনিকের পাশাপাশি রোগীদের স্বার্থও রাষ্ট্রের দেখা উচিত। এজন্য অত্যাবশকীয় ও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভর্তুকি দেওয়া উচিত। কোম্পানিগুলোর উচিত সামাজিক দায়িত্ব রক্ষায় কমদামি কিন্তু কার্যকরী ওষুধ তৈরি করা।
যতটা সরলীকরণ করলাম, বিষয়টি এতটা সরল নয়। তবুও স্বল্পজ্ঞানে কিছু চিন্তা উপস্থাপন করলাম। বিজ্ঞ নীতিনির্ধারণী মহল আশা করি আরো কার্যকরী কিছু করবেন। এই প্রত্যাশাই করছি।
এএইচ