বিচ্ছিন্ন কবজি জোড়া লাগিয়ে প্রশংসায় সিক্ত প্রচারবিমুখ ডা. সাজেদ ফারুকী

মো. মনির উদ্দিন: চট্টগ্রামে লোহাগাড়ায় দা’য়ের কোপে বিচ্ছিন্ন পুলিশ কনস্টেবল জনি খানের (২৮) কবজি জোড়া লাগিয়েছেন ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকী। টানা ১১ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে বিচ্ছিন্ন কবজি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন ডা. ফারুকীর নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের দল। গতকাল রোববার (১৬ মে) রাজধানীর আল মানার হাসপাতালে জটিল এ অস্ত্রোপচার হয়।
ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকী বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউটে হ্যান্ড অ্যান্ড মাইক্রোসার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নিজ খরচে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতায় গত ২০ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিস্তৃত কর্মজীবনে এ রকম বহু জটিল অস্ত্রোপচারে দেখেছেন সাফল্যের মুখ। দলগতভাবে করোনা-ডেঙ্গুর মতো দুর্যোগেও অব্যাহত রাখেন স্বাস্থ্যসেবা।
তবে প্রচারবিমুখ হওয়ায় পাদপ্রদীপের আলোয় আসার সুযোগ পায়নি স্বাস্থ্যসেবায় তাঁর এসব অবদান।
অস্ত্রোপচারে পাঁচ সদস্যের দলে অংশ নেওয়া অন্য চিকিৎসকরা হলেন হাসপাতালটির প্লাস্টিক সার্জন ডা. হাসান নাজিরুদ্দীন সুমন, ডা. শাকেরা, অ্যানেসথেশিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আলাউদ্দীন ও ডা. মোস্তফা কামরুল ইসলাম।
বহু চেষ্টার পরও এই অস্ত্রোপচার নিয়ে নিভৃতচারী ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকীর মুখ খোলা যায়নি। কারণ আড়ালে থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দলগত কাজ করে যেতে ভালোবাসেন তিনি।
এক নজরে ডা. সাজেদুর রহমান ফারুকী
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা গ্রামের সন্তান ডা. সাজেদুর রহমান ফারুকীর জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, কুষ্টিয়ায় নানা বাড়িতে।
তিনি আইডিয়াল স্কুল কে ১৯৮৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৮৬ সালে রাজধানীর নটরমেড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।
এর পর চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৩ সনে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ডা. সাজেদুর রহমান ফারুকী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকে অর্থোপেডিকসে এমএস পাস করেন।
এর পর তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ভারতের গঙ্গা ও বুম্বে হাসপাতাল এবং সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
তাঁর পিতা ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাটমিক অ্যানার্জি কমিশনের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা। ইংল্যান্ডে পিএইচডি পড়াকালীন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষ নেন দেশের এই প্রথম জিওফিজিস্ট (ভুগোল-পদার্থ বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ)।
শঙ্কামুক্ত পুলিশ কনস্টেবল
এদিকে জটিল এ অস্ত্রোপচারের পর পুলিশ কনস্টেবল জনি খান এখন শঙ্কামুক্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোগীর হাতের স্বাভাবিক রঙ চলে এসেছে। জোড়া লাগানো নার্ভগুলোর কার্যকারিতাও চলে আসতে শুরু করেছে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় হাতে উষ্ণতাও চলে এসেছে।
কবজি বিচ্ছিন্ন যেভাবে
লোহাগাড়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের লালারখিল এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে কবির আহমদ (৩৫) এলাকায় দুর্ধর্ষ হিসেবে পরিচিত। নানা অপরাধে জড়িত এ সন্ত্রাসীকে ধরতে গত রোববার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে নিয়মিত মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে লালারখিল এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ।
এ সময় আসামি কবির আহমদ গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য ধারালো দা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ধারালো দায়ের কোপে পুলিশ সদস্য জনি খানের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া আরেক পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পালিয়ে যান কবির আহমদ।
অভিযানে অংশ নেন লোহাগাড়া থানার এসআই ভক্ত চন্দ্র দত্ত, এএসআই মজিবুর রহমান, কনস্টেবল জনি খান ও শাহাদাত হোসেন।
গুরুতর অবস্থায় পুলিশ কনস্টেবলে জনি খানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় শাহাদাতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সংকটাপন্ন হওয়ায় জনি খানকে সেখান থেকে আকাশ পথে রাজধানীর আল মানার হাসপাতালে পাঠানো হয়।