এমবিবিএসের সংশোধিত সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, পরিবর্তন দাবি

সাখাওয়াত হোসাইন: দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হচ্ছে এমবিবিএসে সংশোধিত সিলেবাস। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় থাকবে ফার্মাকোলজি আর তৃতীয় প্রফেশনালে প্যাথলজি, পুরাতন সিলেবাসে যা পড়ানো হতো চতুর্থ বর্ষে।
নতুন সিলেবাস ঘিরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা। তারা বলছেন, রোগ সম্পর্কে না জানার আগে ওষুধের নাম মুখস্থ করানো হবে। তাতে ছাত্র-ছাত্রীরা কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাবে। এই সিলেবাস পরিবর্তনের জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে নতুন সিলেবাসকে যুগোপযোগী দাবি করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বলেছে, সংশোধিত সিলেবাস আধুনিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য মানানসই। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সিদ্ধান্তের আলোকে এটি সাজানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রোগের কারণ ও নাম না জেনেই ফার্মাকোলজি পড়ানো হবে। এমবিবিএস পড়ানোর পর আমাদেরকে ফার্মেসির দোকানদার বানানো হবে নাকি? প্যাথলজি না পড়ে ফার্মাকোলজি পড়া কিভাবে সম্ভব? ওষুধের নাম মুখস্ত করে হাতুড়ে চিকিৎসক হওয়ার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলাম। এখন শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকা লাগবে।’
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি না পড়ে ফার্মাকোলজি পড়ানো হবে, ভাবতেই অবাক লাগে। এই সিলেবাস পরিবর্তন করে যুগোপযোগী এবং আরও আধুনিক করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল প্রফের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের চলমান কারিকুলামটা যে খুব সুন্দর, তা নয়। নতুন প্রণীত সিলেবাস শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো হবে, ব্যাপারটা এমনও নয়। প্যাথলজি না পড়ে ফার্মাকোলজি পড়ানো হলে শিক্ষার্থীদের অনেক বিষয় অজানা থেকে যাবে। এতে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হবে। প্যাথলজি হলো কিভাবে একটা রোগ হয় এবং তার কারণ জানা যায়। এটা জানা গেলে রোগের চিকিৎসা দেওয়া খুবই সহজ হয়ে যায়। আর ফার্মাকোলজি হলো অনেকটা মুখস্ত বিদ্যা। নতুন এই সিলেবাসে এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য নেতিবাচক দিক বেশি। প্যাথলজি না পড়ে ফার্মাকোলজি পড়লে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পড়বে। কারণ ফার্মাকোলজি পড়ার পর মেডিসিন পড়তে একটি দীর্ঘ বিরতি পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, এই সিলেবাস পরিবর্তন করে দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক ও প্যাথলজি আর তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিসহ অন্যান্য বিষয় যুক্ত করলে ভালো হবে।
রাজধানীর শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে। চতুর্থ বর্ষের চাপ অনেকটা কমানো হয়েছে। তবে প্যাথলজি দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় আর ফার্মাকোলজি তৃতীয় প্রফে দিলে সিলেবাস খুবই সুন্দর ও আধুনিক হবে। ফার্মাকোলজি পড়ার জন্য প্যাথলজি জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ প্যাথলজিতে কোন রোগটা কখন ও কিভাবে হচ্ছে এবং এর চিকিৎসা কি? এগুলো শিখানো হয়। রোগের ধরন না জেনে ড্রাগস সম্পর্কে পড়ানো হবে, তখন বিষয়টা উল্টো হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আগে প্যাথলজি আর পরে ফার্মাকোলজি পড়ালে ভালো হবে।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
জানতে চাইলে বিএমডিসির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘নতুন সেশন থেকে এই সিলেবাস বা কারিকুলাম কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্ত অনেক আগে নেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর তিনি বলেন, ‘তারা পড়াশোনা করতে থাকুক। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই কারিকুলাম ভালো হবে। বিজ্ঞ কমিটির সবাই মিলে অনেক চিন্তা-ভাবনা পর পরিবর্তন আনা হয়েছে। যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে চলার জন্য সিলেবাসের পরিবর্তন করা হয়েছে।’
অধ্যাপক রওশন আরা বলেন, ‘যদি মনে হয় এই সিলেবাস ভালো হচ্ছে না, আবার পরিবর্তন করা হবে এবং আরও আপডেট করা হবে।’
বিশেষজ্ঞ ভাবনা
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের সময়ে তৃতীয় বর্ষে ওয়ার্ডে প্লেস করানো হতো। ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য ওষুধ-পত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। আমাদেরকে ফার্মাকোলজি আগে পড়ানো হতো। পরে প্যাথলজি পড়ানো হতো চতুর্থ বর্ষে গিয়ে। বর্তমান সিলেবাসটা যৌক্তিক, অযৌক্তিক কিছু নয়। আর এগুলো পরিবর্তনশীল। ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসক হওয়ার জন্য যা ভালো মনে করা হয়, তাই করা হয়।’