২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১২:১৭ পিএম

তৃণমূলের মানুষের ভোগান্তি লাঘবে কাজ করতে চান ডেন্টালে দ্বিতীয় অমিত

তৃণমূলের মানুষের ভোগান্তি লাঘবে কাজ করতে চান ডেন্টালে দ্বিতীয় অমিত
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন অমিত। ৮০তম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কিছু মানুষ জীবনের পথে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। আপোষহীন সাধনার মাধ্যমে এক পর্যায়ে পৌঁছে যান বিজয়ের বন্দরে। তেমনই এক নিরব সাধক অমিত সাধু।

ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। তার প্রাপ্ত নম্বর ৯১.৭৫। মোট নম্বর ২৯১.৭৫। এর আগে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন অমিত। ৮০তম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ডিএমসি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

এইচএসসিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে পূর্ণ সিলেবাসের আলোকে অনুষ্ঠিত ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জনের কৌশল বিষয়ে মেডিভয়েসের সঙ্গে কথা হয় এ কৃতি শিক্ষার্থীর। জানান, নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত।

পাঠকদের সামনে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. মনির উদ্দিন। 

গৌরবান্বিত ফলাফলে অনুভূতি

ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় আকাশ ছোঁয়া সাফল্যে উচ্ছ্বসিত অমিত সাধু বলেন, ‘বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় সারাবাংলাদেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতে পেরে খুবই ভালো অনুভব করছি। এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এমবিবিএসে ভালো করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সকলের ভেতর থেকে নিজেকে আবার প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছি। এজন্য খুবই ভালো লাগছে।

কাঙিক্ষত ফলাফল

এমন ফলাফলের প্রত্যাশা ছিল কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যাশা কিছুটা ছিল। কারণ মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় কিছু ভুলত্রুটি ছিল, যেটা সংশোধনের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি আরও ভালো করার। সে জায়গা থেকে ভালো ফলাফলেরই প্রত্যাশা ছিল এবং সেটা ধরা দিয়েছে।

প্রস্তুতির সূচনা 

অমিত সাধু বলেন, এইচএসসির পর থেকেই মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেই আলোকেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিই। এর পর ডেন্টালের জন্য পড়াশোনার তেমন সুযোগ হয়নি। সেভাবে বসতে পারিনি। অর্থাৎ এমবিবিএসের প্রস্তুতিতেই ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিই। মূলত আমার এই সাফল্যের প্রস্তুতি ছিল এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই।

প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো হয়

প্রতিদিনের পড়াশোনার পদ্ধতি জানিয়ে তিনি বলেন, কোচিংয়ের ভাইদের প্রতিটি নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো সিলেবাসটা কাভার করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। যেহেতু আমরা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সেখানে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। এর ফলশ্রুতিতেই এই পর্যায়ে আসা। কোচিংয়ের বই থেকে উপকৃত হয়েছি। পাশাপাশি মূল বই পড়েছি। 

নিজের দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ

প্রস্তুতির সময় নিজের দুর্বলতা চিহ্নিতকরণের উপায় তুলে ধরে অমিত বলেন, পরীক্ষার পর যেসব প্রশ্নের উত্তর ভুল হতো, সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করতাম, কেন ভুল হলো? পড়াশোনায় ঘাটতি কোথায়? এভাবেই নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতাম। 

ডেন্টালে দ্বিতীয় হলেও আগ্রহ এমবিবিএসে 

অমিত সাধু এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় আশিতম স্থান অর্জন করেছেন। জানালেন, ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হলেও এমবিবিএস পড়ার বিষয়ে আগ্রহী তিনি।

তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা দিতেই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা

তৃণমূলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা তাকে চিকিৎসক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে জানান অমিত সাধু।

ছোট বেলা থেকেই মানুষের সেবা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ি গ্রাম্য এলাকায়। সেখানে চিকিৎসা সেবা খুব একটা সহজলভ্য না। আমার বাবা-বা, দিদিদের সমস্যা হলে শহরে যাওয়ার প্রয়োজন হতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে। চিকিৎসা সেবা পেতে তাদের বেশ ধকল পোহাতে হতো। তা দেখে ভাবতাম, নিজে চিকিৎসক হতে পারলে হয় তো তৃণমূলের মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হবে। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই মেডিকেলে পড়ার অনুপ্রেরণা পাই।

তাহলে তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনোবল আছে, যদি সুযোগ পাই, তাহলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো, যাতে তাদের সেবাটা দিতে পারি। শহরের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পেতে অত বেগ পোহায় না, কষ্টটা মূলত গ্রামের মানুষের।’

টাকা কামাই নয়, সেবা দেওয়াই উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থ উপার্জন যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হতো, তাহলে অন্য অনেক পেশার চিন্তা করতে পারতাম, যেখানে বিপুল রোজগারের সুযোগ রয়েছে। সেই চিন্তা করছি না। যেহেতু চিকিৎসা পেশাকে বেছে নিয়েছি, সেহেতু গ্রামের মানুষের সেবা করার তীব্র ইচ্ছা আছে।’

সাফল্যের পেছনের গল্প

সাফল্যের পেছনে মা-বাবা’র সর্বাধিক ভূমিকার কথা জানিয়ে অমিত বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের পেছনে সব সময় মাকে পাশে পেয়েছি। কাজের সূত্রে বাইরে থাকায় বাবাকে পাওয়া যায়নি, কিন্তু তিনি সব সময় আমাকে সাহস ও মনোবল জোগাতেন। দিদিরাও বাইরে থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ যেভাবে সম্ভব পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এই সময়টায় সমানভাবে সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। আর এর সুবাদেই অভাবনীয় সাফল্য।

যে কারণে সাফল্য ধরে রাখা যায় না 

অনেকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে আমরা বাংলা মাধ্যম থেকে পড়াশোনা করেছি। সে ক্ষেত্রে ২/৩টি বাধা থাকতে পারে। যেমন: আমরা আসলে প্রায়োগিক জীবন সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তেমন শিক্ষা পাই না। ডাক্তারি বিদ্যা পুরোটাই প্রায়োগিক। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা থাকলে সহজতর হয়। অনেকে হয় তো এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারে না। এ ছাড়া কতটুকু পড়াশোনা করা প্রয়োজন, এ ব্যাপারে অনেকের ধারণা থাকে না। কিভাবে পড়লে কাঙিক্ষত সাফল্য ধরা দেবে, বা অতীত সাফল্য ধরে রাখা যাবে—এটাও হয় তো অনেকের কাছে অজানা। সুতরাং পথপরিক্রমাটা নতুন কিংবা ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারণে হয় তো কেউ কেউ সাফল্য ধরে রাখতে পারে না। 

করোনার প্রতিবন্ধকতা উৎরে যাওয়া

করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা হয় উল্লেখ করে অমিত বলেন, ওই সময়টায় কলেজে যেতে পারিনি। শিক্ষকদের সান্নিধ্য ওইভাবে পাইনি। কিন্তু মুঠোফোন, অনলাইন কিংবা অন্য সম্ভাব্য উপায়ে উপদেশ নিয়ে বাসায় বসে পড়ার চেষ্টা করেছি। মূল বই ফোকাস করে পড়ার চেষ্টা করেছি, যে কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটাই ভর্তি পরীক্ষার সময় সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নটাও অনেকটাই শর্ট সিলেবাস থেকেই এসেছে। পুরোটা না হলেও শর্ট সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করেই প্রশ্নপত্র সাজানো হয়েছে। করোনা কিছুটা ধাক্কা দিলেও ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলাম, বাসায় নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনার মাধ্যমে। পাশাপাশি অনলাইন থেকেও কিছুটা সহায়তা নিয়েছিলাম। বাধা এলেও আমি আমার লক্ষ্যে অনড় ছিলাম।

বেড়ে ওঠা

অমিত সাধুর বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি গ্রামে। আট নম্বর কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিএসসি পাস করে কপিলমুনি সহচরি বিদ্যা মন্দির থেকে জেএসসি পাস করেন। একই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এ প্লাস নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২১ সালে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন।

তার বাবা প্রদীপ সাধু একজন ব্যবসায়ী। বাবা খুলনার কয়রা উপজেলায় ব্যবসা করেন। মা অশোকা সাধু একজন গৃহিণী। 

বড় চিকিৎসক হয়ে জাতির সেবা করতে সকলের আশির্বাদ প্রত্যাশা করেন অমিত। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা
কমিউনিটি ক্লিনিকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে ডা. মোদাচ্ছের

কমিউনিটি ক্লিনিক: বঙ্গবন্ধুর দর্শনই প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাস্তবায়ন

কমিউনিটি ক্লিনিকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে ডা. মোদাচ্ছের

কমিউনিটি ক্লিনিক: বঙ্গবন্ধুর দর্শনই প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাস্তবায়ন

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
নম্বরের কথা চিন্তা করে পড়াশোনা করিনি: ডা. জেসি হক
এমআরসিপিতে বিশ্বসেরা বাংলাদেশি চিকিৎসক

নম্বরের কথা চিন্তা করে পড়াশোনা করিনি: ডা. জেসি হক