মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করা হলো না মেডিকেল শিক্ষার্থী আতিকের

সাখাওয়াত হোসাইন: আর কয় দিন পরই বহু প্রত্যাশিত ঈদ। খুশির ঈদে মা-বাবার সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করবেন বলে চোখে-মুখে টিকরে পড়ছিল উচ্ছ্বাসের আলো।
এ আনন্দকে ষোলকলায় রূপ দিতে কয়েক দিন আগেই বাড়ি চলে যাওয়ার চিন্তা উঁকি দেয় মনে। তাই শনিবার (২৩ এপ্রিল) ভোর রাতে সেহেরি খেয়ে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছেন দুই বন্ধু। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তারা। বলছিলাম, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম ও তার বন্ধু ড্যাফোডিল ইন্ট্যারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহিম মাসুদের কথা।
আতিকের বন্ধু ও সাহাবউদ্দিন মেডিকেলের শিক্ষার্থী মোঃফাইয়াজ আজিম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আজ শনিবার (২৩ এপ্রিল) ভোর রাতে সেহেরি খেয়ে গ্রামের বাড়ি খুলনার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন আতিক ও মাসুদ। বাইক চালিয়েছেন মাসুদ আর পেছনে বসা ছিলেন আতিক। পথিমধ্যে ঢাকা-খুলনা রোডে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী গেলে মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষের শিকার হন তারা। ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসুদ। পরে আতিককে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
আতিকের গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিসপুর উপজেলায়। মাসুদের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলা হলেও মা-বাবা চাকরিসূত্রে বসবাস খুলনায়। আতিকের একমাত্র বড় বোন লিজা পেশায় চিকিৎসক। বাবা-মার একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে আচ্ছন্ন পুরো পরিবার।
আতিকের অমায়িক ব্যবহারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফাইয়াজ বলেন, ‘আতিক আমাদের খুব ভালো বন্ধু ছিল। সাহাবউদ্দিন মেডিকেলের সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। সিনিয়ররা তাঁকে অনেক পছন্দ করতেন। ২০১৮-১৯ সেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ ছিল আতিক। ভদ্র ও নম্র ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন তিনি। যখনই আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন, হেসে কথা বলতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও কেউ এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আতিক এমন সড়ক দুর্ঘনার শিকার হতে পারে। কারণ গতকাল আমার সঙ্গে ইফতার করেছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগে দ্বিতীয় প্রফের ফরম পূরণ করেছিলেন, এরপর বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। এখন আর বাবা-মার সাথে ঈদ করা হবে না তাদের। আমরা হারালাম ভালো বন্ধু।’
ফাইয়াজ আরও বলেন, ‘আতিক পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। চোখে মুখে বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বড় চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল তাঁর। একটি দুর্ঘটনা তছনছ করে দিয়েছে আতিকের জীবন। আর কোনো দিন তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা হবে না...।’
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কাশিয়ানীর মাঝরা বাস স্ট্যান্ডের কাছে হাইওয়ের সামনে প্রচুর জ্যাম ছিল। মোটর সাইকেলটি একটি ট্রাককে ওভারটেক করে সামনে চলে যায়। এর পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মোটর সাইকেলটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটরসাইকেলটি রাস্তার এক পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান মাসুদ। আর মারাত্মভাবে আহত হন আতিক।
কাশিয়ানী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক সজিব কুমার মন্ডল বলেন, সকালে ওই দুই যুবক মোটর সাইকেলে করে ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছিলেন। তাদের মোটর সাইকেলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি মহাসড়কের পাশের গাছের সাথে সজোড়ে ধাক্কা খায়, আর মোটরসাইকেলটি খাদে ছিটকে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মাসুম নিহত ও তার বন্ধু আতিকুল মারত্মক আহত হন। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা আতিককে উদ্ধার করে কাশিয়ানী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাশিয়ানি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ আলম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলটি বর্তমানে ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির হেফাজতে রয়েছে। নিহতদের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে কাশিয়ানী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রায়হান মেডিভয়েসকে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।