এমসিপিএসে নতুন নিয়ম: চিকিৎসকদের ক্ষোভ ও বিসিপিএস'র ব্যাখ্যা

মো. মনির উদ্দিন: বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) অধীনে চলমান এমসিপিএস’র নীতিমালা ঘিরে নতুন বিতর্কের তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, এমসিপিএস করার যোগ্যতা হিসেবে এমডি-এমএস’র উল্লেখ থাকার অর্থ দাঁড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এ ডিগ্রিকে অবজ্ঞা করা। নীতিমালার এ অংশকে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, এমডি-এমএস করার পর কারও এমসিপিএস করা নিষ্প্রয়োজন।
তবে বিসিপিএস বলেছে, নোটিসটি ভালোভাবে না পড়েই এ নিয়ে কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এমডি-এমএস করা চিকিৎসকদের অবজ্ঞা নয়, বরং সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব চিকিৎসকদের কেউ এমসিপিএস করতে চাইলে তাদের দুই বছরের ট্রেনিং এক্সামটেড হবে, অর্থাৎ তারা সরাসরি বসতে পারছেন?
উচ্চশিক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বহীন এমসিপিএস
কোর্স কারিকুলাম ও মেয়াদসহ যে কোনো বিবেচনায় দেশে চলমান বিদ্যমান উচ্চশিক্ষার কোর্সগুলোর মধ্যে এমসিপিএসকে সবচেয়ে গুরুত্বহীন বলে উল্লেখ করেন একাধিক চিকিৎসক।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নবীন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এমসিপিএসকে কেউ ক্যারিয়ারের মূল ডিগ্রি হিসেবে দেখতে চান না। কেউ এফসিপিএস’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এক বছরের ট্রেনিং করলে এমসিপিএস দেওয়া যায়—এই ভাবনা থেকে তিনি এ পরীক্ষা দিয়ে দেন। ডিপ্লোমা যারা করেন, তাদের অনেকেই সারাজীবন এ ডিগ্রি নিয়েই থাকেন। যারা এফসিপিএস বা এমডি-এমএস করেন তারা তো সর্বোচ্চ ডিগ্রিটাই করেন। এই বিবেচনায় এমসিপিএস ডিগ্রিটা আসলে এফসিপিএস ও এমডি-এমএস, অথবা ডিপ্লোমার তুলনায় বড় কিছু না। ফলে একজন শিক্ষার্থী এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর এফসিপিএস বা এমডি-এমএস, ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। এসবের প্রস্তুতির ফাঁকে কেউ কেউ এমসিপিএস’র একটি পরীক্ষা দিয়ে দেন। কেউ কেউ আছেন, যারা উচ্চতর বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির চেষ্টা করেছেন, কিন্তু হয়নি। এর মধ্যে বয়সও অনেক হয়ে গেছে। তাদের কেউ মনে করেন যে, কোনো একটি প্রশিক্ষণ নিই। সে হিসেবে এমসিপিএস করেন। মর্যাদার দিক থেকে এফসিপিএস, এমডি-এমএস, ডিপ্লোমা—এসব কোর্সের পরে এমসিপিএস’র অবস্থান।’
‘অথচ নতুন ঘোষণায় এ কোর্সটি করার যোগ্যতা হিসেবে এমডি-এমএসও রাখা হয়েছে। তাহলে হিসাব অনুযায়ী, এমডি-এমএসের মর্যাদা চলে গেলো, এমসিপিএস’র নিচে। অথচ কোর্সের মেয়াদের হিসাব করলেও এমডি-এমএসের জন্য তিন বছর সময় বেশি লাগে। তাহলে বিষয়টি হাস্যকর হয়ে গেল না?’—যোগ করেন এ চিকিৎসক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নবীন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এমডি-এমএস’র প্রশিক্ষণ হলো পাঁচ বছরের। ডিপ্লোমার মেয়াদকাল দুই বছরের। বিসিপিএস’র নতুন নীতিমালায় এমসিপিএস পরীক্ষার জন্য ট্রেনিংয়ের সময় নির্ধারণ করেছে দুই বছর। এখন দুই বছরের ডিপ্লোমা করা কেউ এমসিপিএস পরীক্ষা দিতে পারছেন, এটা ঠিক আছে। অন্যদিকে কেউ এমডি-এমএস ফেজ ‘এ’ সম্পন্ন করেছেন দুই বছরে। এর পর যদি এমসিপিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ পান, তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এমডি-এমএস পাস করার পর এমসিপিএস পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটি দাঁড়ালো, এফসিপিএস পাস করে কাউকে এমসিপিএস পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এমনটি তো হচ্ছে না। তাহলে বিসিপিএস কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পরিচালিত দুটি ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিগ্রির চেয়ে সেরা প্রমাণ করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে? নাকি এটা ক্ষোভ বা আক্রোশগত কোনো কারণে? এটা অযৌক্তি। বিষয়টি যুক্তিগ্রাহ্য হতো, যদি এমসিপিএস দেওয়ার যোগ্যতা হিসেবে এমডি-এমএস’র পাশাপাশি এফসিপিএসকেও রাখা হতো।’
পোস্ট গ্রাজুয়েশনে থাকুক একটি ডিগ্রি
তরুণ চিকিৎসকদের দাবি, ডিগ্রি দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ধরনের নিয়ম, আবার বিসিপিএস’র আরেক নিয়ম। প্রশিক্ষণ নিয়ে এতো ধাক্কাধাক্কি কেন? মাল্টিপল টাইপের ডিগ্রি না রেখে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশে একটি ডিগ্রি চালু করা হোক এবং সেটা একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। কর্তৃপক্ষ এই ধরনের নীতিমালায় কেন আসছেন না? এক জায়গায় আসলে সমস্যা কী? এটি হলে তো গ্রুপিং হবে না। একজন আরেকজনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীলও হবে না।
তারা আরও বলেন, জ্যেষ্ঠ যত চিকিৎসক আছেন, তাঁদের অধিকাংশই এফসিপিএস করার পর এমডি-এমএস করেছেন। ধরেন, কেউ মেডিসিনে এফসিপিএস করেছেন, তার পর তিনি হয় তো নিউরোলজি কিংবা গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি অথবা হেপাটলজিতে এমডি করেছেন। বিসিপিএসের নিয়ম অনুযায়ী ধরলেও আগে এফসিপিএস করার পর চিকিৎসকরা এমডি-এমএস করেন। অথচ এ ধারা পুরোপুরি উল্টে দিয়ে তারা বলছেন, এমডি-এমএস করে তারা এমসিপিএস করতে পারবে। মজার ব্যাপার হলো, এ ডিগ্রিটা বিসিপিএসের কাছেও গণ্য না।
বিতর্ক তৈরি হবে
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো ভাইস চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘নোটিসটি পড়ে মনে হলো, বিসিপিএস তাদের এমসিপিএস ডিগ্রিটা আপডেট করতে চায়। আগে কারও এক বছরের ট্রেনিং থাকলে এমসিপিএস পরীক্ষা দিতে পারতো। সুতরাং এখন এমডি-এমএস করার পর এমসিপিএস দেওয়ার মানেই দাঁড়াচ্ছে, তারা এটির আপডেট করছেন। ডিপ্লোমার চেয়েও উন্নতর করতে চান। বলা হয়েছে, ডিপ্লোমা করা থাকলে তারা এমসিপিএস দিতে পারবেন।’
তবে এতে জটিলতা তৈরি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটা যুক্তিসঙ্গত না। এটা খুব দূরদর্শী চিন্তা না। কী যুক্তিতে তাঁরা এটা করেছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ যেখানে এফসিপিএস-এমডি দুটি ডিগ্রি রয়েছে, সেখানে আবার এই ডিগ্রি! এমসিপিএস করা হয়েছিল, মূলত যারা এফসিপিএস করতে পারবেন না, অথবা যারা শিক্ষক হবেন না, তারা যাতে একটি ডিগ্রি নিয়ে কনসালটেন্ট হিসেবে জেলা পর্যায়ে কিংবা ছোট শহরগুলো চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। এই উদ্দেশ্যেই এত দিন এটি চলে আসছিল।’
‘দুই বছরের ডিপ্লোমা করার পর কেউ এপিয়ার করতে পারবেন, এমডি-এমএস করে এমসিপিএস করতে পারবেন—এসব নিয়ে বিতর্ক তৈরির অবকাশ রয়েছে’, যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, বিসিপিএস, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলো সর্বোচ্চ মেডিকেল বিদ্যাপীঠ। এখানে এমন কিছু করা যাবে না, যা বিতর্ক তৈরি করে। এটা শুধু বিসিপিএস’র বিষয় না। এই ডিগ্রি অর্জন করে কেউ যখন শিক্ষক হতে যাবেন, তখন এর মূল্য কী দাঁড়াবে? এটা আগে ভাবতে হবে। কারণ কেউ জুনিয়র কনসালটেন্ট হবেন, সহকারী অধ্যাপক হবেন, তাদের পদোন্নতি এই ডিগ্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আবার কোথাও কোথাও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পর্কিত।
বিএসএমএমইউ প্রো-ভিসির প্রশ্ন, এফপিএস করা কেউ এমডি ফেজ বি’তে যেতে পারেন, আবার এমডি করা কেউ এফসিপিএস ফেজ-‘বি’তে যেতে পারেন। যেহেতু দুটিই উঁচু মানের ডিগ্রি, তাই এর মধ্যে সমন্বয় হয়েছে। এর বিপরীতে এমসিপিএস কতটা মর্যাদাপূর্ণ?
নতুন নীতিমালা নিয়ে কাউন্সিলে আলোচনা হয়নি?
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) কাউন্সিলর অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান মেডিভয়েসকে বলেন, এই কোর্সটি করার পর চিকিৎসকরা বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন না। এটি সমৃদ্ধ করার জন্য অনেকে আবেদনও করেছেন। অনেক কাউন্সিলর এটা নিয়ে কথা বলেছেন। এর দ্বারা চিকিৎসকরা যদি বিভিন্ন জায়গায় কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ না পান, তাহলে এটা এ অবস্থায় রেখে লাভ কী? এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এটা দুই বছর করা হয়েছে, যাতে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে এই ডিগ্রিধারীরা চাকরিতে সুবিধা নিতে পারেন।
আপনি বলেছিলেন, বিসিপিএস ও বিএসএমইউর ডিগ্রিগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা যেতে পারে। এমসিপিএস নিয়ে নতুন নীতিমালা বিদ্যমান অন্তরায় আরও বাড়িয়ে দেবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউন্সিলে দীর্ঘ আলোচনার পর এগুলো করা হয়। যে বিষয়টি বললেন, এটা গত তিন বছর ধরে প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে আমার জানা মতে, এ নিয়ে কাউন্সিলে আলোচনা হয়নি। এমসিপিএস কী কাজের জন্য দরকার পড়বে? দেশে-বিদেশে চাকরির জন্য, নাকি প্রমোশনের জন্য?’
এমডি-এমএস পাস করার পর কারও এমসিপিএস করার দরকার নেই উল্লেখ করে, কোর্সটির নতুন নীতিমালার কিছু অংশ ন্যায্য নয় বলেও মন্তব্য করেন এ শিক্ষাবিদ।
বিসিপিএস’র বক্তব্য
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) রেজিস্ট্রেশন ট্রেনিং মনিটরিং ডিপার্টমেন্টের (আরটিএমডি) অনারারি ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মুহাম্মদ জামাল মেডিভয়েসকে বলেন, নোটিসটি ভালোভাবে না পড়েই কেউ কেউ একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অস্থির করে ফেলছেন। এর মাধ্যমে তো এমডি-এমএস’র চিকিৎসকদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যাদের কোনো একটি বিষয়ে এমডিএমএস করা আছে তাদের দুই বছরের ট্রেনিং এক্সামটেড হবে। এমডি-এমএস করে এমসিপিএস করতে হবে—এমন কোনো নোটিস তো হয়নি, এমনটি কোথাও লেখা নেই। তারা করবে কি করবে না, এমসিপিএস দেবে কি দেবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটা কি তাদের জন্য সুবিধাজনক হলো না যে, এমডি-এমএস করার কারণে তারা সরাসরি বসতে পারছেন?
অধ্যাপক আবুল বাশার মুহাম্মদ জামাল আরও বলেন, ‘বিসিপিএস বিদ্বেষী একটি গ্রুপ ইচ্ছা করে বিনা কারণে জল ঘোলা করতে চায়। তারা বলছে, এমডি-এমএস করা চিকিৎসক এমসিপিএস করবে কেন? আমরা তাদের করতে বলেছি? বরং তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা তো তাদের জন্য বাড়তি সুযোগ, যারা করতে আগ্রহী।’
এমসিপিএস পরীক্ষায় আগের নিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে কেউ যদি কার্ডিওলজি বা গ্যাস্ট্রোএন্টারলজিতে এমডি-এমএস করতো, তাকে জেনারেল মেডিসিনে আবার এক বছরের ট্রেনিং করে তারপর করতে হতো। তখন এমসিপিসের মেয়াদ ছিল এক বছর। মূলত ট্রেনিংটা এক্সামটেড করা হয়েছে।
নতুন নিয়মে দুই বছরের ডিপ্লোমা করা চিকিৎসকদের বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে ফেজ ‘এ’ সম্পন্ন করা চিকিৎসকদের সুযোগ দেওয়ার বিবেচনা করা যেতো কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেজ ‘এ’ সম্পন্ন হলে তো ডিগ্রি পূর্ণ হয়ে যায় না। এটা তো ফেজ ‘এ’, ফেজ ‘বি’ কিংবা পার্ট-১, পার্ট-২ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। সাধারণত একটি ডিগ্রি করলে তা আরেকটা ডিগ্রির জন্য এক্সামটেড হয়, এই নিয়ম দুনিয়ার সব জায়গাতেই আছে। আমি বিসিপিএস থেকে এফসিপিএস পাস করার পর তখন রয়েল কলেজ আমার পার্ট-১ এক্সামটেড করেছে। আমি সরাসরি পার্ট-২ পরীক্ষা দিয়েছি। এতে তো রয়েল কলেজেরও ইজ্জত যায়নি, বিসিপিএসেরও ইজ্জত যায়নি। তারা এটা আমার সুবিধার জন্যই করেছে। আমি সেই সুবিধাটা নিয়েছি। কেউ হয় তো এ সুবিধা নেয়নি।’
এফসিপিএস ও এমডি-এমএস’র পরস্পর স্বীকৃতিতে জরুরি দিলখোলা আলোচনা
এফসিপিএস ও এমডি-এমএস ডিগ্রির বিষয়ে বিসিপিএস ও বিএসএমএমইউ পরস্পরকে স্বীকৃতি দিতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতির দেওয়ার প্রসঙ্গটি তখন আসে, যখন দুটি কোর্সের মধ্যে সমতা নিশ্চিত হয়। একই রকম প্রশিক্ষণ হয়, অবকাঠামো কাছাকাছি থাকে। তা না হলে তো স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে না। একজনের তিন মাস পর পর সার্টিফিকেট দেবে, আরেকজনের ছয় মাস পর পর। তিন মাস, ছয় মাস কিভাবে এক হবে? এক কারিকুলাম তো আরেকটার সঙ্গে মিলবে না। তাহলে কিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব? কেউ কারও চেয়ে বড় না। যার ইচ্ছা হয় করবে। আর ইনস্টিটিউটও তো দুইটা না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে পাঁচটা। কিছু দিনের মধ্যেই খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমডি-এমএস হবে। এমনকি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষার কোর্সও এখনও চলমান আছে। সুতরাং ডিগ্রি যে দুটি, তাও ঠিক না। তা ছাড়া কেউ যদি ইংল্যান্ড থেকে এফআরসিএস-এমআরসিপি ডিগ্রি নিয়ে আসেন, তাহলে দেশের কোনো ডিগ্রি ছাড়া কি তিনি প্রাকটিস করতে পারবেন না? অধ্যাপক হতে পারবেন না? কাজেই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেষারেষি মারামারি তো নেই। যে কোনো প্রতিষ্ঠান তার মতো ডিগ্রি দেবে, কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এসবের গুণগত মান দেখবে, দেশের প্রেক্ষাপটে ডিগ্রিটা গ্রহণযোগ্য কিনা।’
স্বীকৃতি দেওয়াকে অনেক বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এজন্য সবাইকে বসতে হবে। খোলা মনে ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করলে নিশ্চয় এর একটা সমাধান মিলবে। এটা হলে ছেলে-মেয়েদের জন্য অনেক ভালো হবে। আমরা চাই, তাদের কষ্ট যেন কম হয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের লক্ষ্য হলো, পড়াশোনা করে তারা যেন বিশেষজ্ঞ হয়, যোগ্য চিকিৎসক হয়। তাতে চিকিৎসা পাবে এ দেশেরই মানুষ। সুতরাং এতে তো আমাদের কারোরই আপত্তি থাকার কথা না।’
-
২০ এপ্রিল, ২০২২
-
১৫ এপ্রিল, ২০২১
-
১৬ অক্টোবর, ২০২০