১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৪৯ এএম

বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা: কেন্দ্রে গিয়ে পাঠ্য বইয়ে দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো

বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা: কেন্দ্রে গিয়ে পাঠ্য বইয়ে দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো
নাজমুস সাকিবের পরামর্শ, ‘পরীক্ষার সময় খুব কাছে, তাই যেসব বই পড়া হয়েছে অবশ্যই সেসব বইয়ের দাগানো লাইনগুলো পড়তে হবে।’ ছবি: সাহিদ

আগামী ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ২০২১-২২ সেশনের বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ পরীক্ষার জন্য শেষ দিকের অতি মূল্যবান সময়ের যথাযথ ব্যবহার ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রস্তুতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের সাফল্য ও ব্যর্থতা। এ সময় একজন শিক্ষার্থীর কৌশল নিয়ে মেডিভয়েসের সঙ্গে কথা বলেছেন ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম নাজমুস সাকিব রাহাত। পরীক্ষার্থীদের করণীয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দিয়েছেন মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: আসাদুল ইসলাম দুলাল। 

মেডিভয়েস: শেষ পর্যায়ে ডেন্টালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয় সম্পর্কে বলুন? 

নাজমুস সাকিব রাহাত: একজন ছাত্রের কলেজ জীবন থেকে মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয়। যেহেতু পরীক্ষার সময় খুব কাছে, তাই নতুন করে পড়ার কিছু নেই। যেসব বই পড়া হয়েছে অবশ্যই সেসব বইয়ের দাগানো লাইনগুলো পড়তে হবে। অধ্যায় শেষে প্রতিটি বইয়ের অনুশীলনী এমসিকিউ দেওয়া থাকে, এইগুলো পড়তে হবে। এক্ষেত্রে পদার্থ বিজ্ঞানের ইসহাক ও তপন স্যারের অনুশীলনীর এমসিকিউগুলো অবশ্যই পড়তে হবে। রসায়ন বিজ্ঞানের জন্য হাজারী নাগ ও কবীর স্যারের বই এবং জীববিজ্ঞানের জন্য মাজেদা ও আলীম স্যারের বই। এ ছাড়াও হাসান স্যারের বইয়ের অনুশীলনীর এমসিকিউগুলো পড়তে হবে। পাশাপাশি দাগানোর জন্য আজমল স্যারের বই পড়তে হবে। জিকা ইংলিশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিগত বছরের মেডিকেল ডেন্টাল এবং বিসিএসের বিষয়গুলো ব্যাখ্যাসহ প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। শেষ পর্যায়ে এগুলো শুধু পড়া যেতে পারে।

মেডিভয়েস: প্রস্তুতির এই সময়ে এসে আপনার কৌশল কেমন ছিল? 

নাজমুস সাকিব রাহাত: আলহামদুলিল্লাহ। শেষ পর্যায়ে আমার প্রস্ততি খুব ভালো ছিল। আসলে মেডিকেলের সময়ও প্রস্তুতি ভালোই ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অসুস্থ হওয়ার কারণে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভর্তির সুযোগ হয়নি। পরীক্ষার সময় করোনা বাধা হলেও পড়ার অনেক সময় পেয়েছিলাম। ওই সময় ভর্তি পরীক্ষায় ২৯৫ নম্বর পেয়েছি। আর কার্ট মার্কস হচ্ছে ২৮৪.২৫। বিষয়টি আরো সহজভাবে বলা যায়, যতজন প্রার্থী পাস করানো হবে, তার শেষ প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরই কার্ট মার্কস। আমাদের সময় প্রশ্ন খুব একটা কঠিন হয়নি। কারণ তখন নম্বরটা ছিল অনেক বেশি।

মেডিভয়েস: প্রস্তুতির বাইরে প্রশ্ন চলে আসলে করণীয় কি হবে? 

নাজমুস সাকিব রাহাত: মেডিকেল ডেন্টাল পরীক্ষার প্রশ্ন এইচএসসির বোর্ড সিলেবাস অনুযায়ী হয়। সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন হয় না। হয়তো এক লেখক থেকে অন্য লেখকের হয়, ভিন্নতা এটুকুই। এটা এমন নয় যে, অপরিচিত কিছু চলে আসবে। তবে ২-৩টি প্রশ্ন আলাদা হতে পারে। এটা না পারলে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ হারিয়ে যাবে, বিষয়টি এমনটা নয়। এক্ষেত্রে যারা ভালো শিক্ষার্থী তারাও পারবে না এবং যারা খারাপ শিক্ষার্থী তারাও পারবে না। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে এতো আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। তাই যেটা নির্দিষ্ট সময়ে এক নজরে দেখা যাবে এবং সহজ মনে হবে, সেগুলো উত্তর করতে হবে।

মেডিভয়েস: পরীক্ষার আগের রাত এবং সকালে কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর করণীয় সম্পর্কে বলুন। 

নাজমুস সাকিব রাহাত: পরীক্ষার আগের রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে আমরা অনেকে চেষ্টা করি, অনেক পড়বো কিংবা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও কারও ঘুম আসে না। মনে রাখতে হবে, এই পর্যায়ে প্রস্তুতি যাই থাকুক না কেন রাত ১০ থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। কারণ পরীক্ষার আগের রাত না পড়লে ভর্তি পরক্ষীর সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে না। যেহেতু এটা এইচএসসির পুরো সিলেবাসের পরীক্ষা, তাই এক রাতে এক বা দুই ঘণ্টা বেশি পড়ে তেমন কিছুই করা সম্ভব নয়। এজন্য রাত ১০-১১টা কিংবা সর্বোচ্চ রাত ১২টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। ৪-৫ ঘণ্টার পূর্ণাঙ্গ ঘুম হলে পরীক্ষার কেন্দ্রে ব্রেইন ভালো কাজ করবে। অর্থাৎ পরীক্ষার কেন্দ্রে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে সুন্দর পরীক্ষা দিতে পারবে। আর কেন্দ্রে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পূর্বে পৌঁছাতে হবে, এই বিষয়টা মাথায় রেখে সময় নিয়ে বের হওয়া জরুরি। পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর কোনো বই না পড়াটাই উত্তম। কারণ বই পড়লে একটার পর একটা প্রশ্নের উত্তর পড়তে মন চাইবে। মনে হবে, এই প্রশ্নটা ভুলে গেছি, এটা একটু পড়ে নিই। যখন এ রকম একটা পরিস্থিতি হয়ে যাবে, তখন আত্মবিশ্বাসের পর্যায়টা হারিয়ে যাবে। মনে হবে এটা শেষ করতে পারলাম না, ওইটা শেষ করতে পারলাম না। এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের করণীয় হবে দুরুদ বা তাসবীহ পড়া। অর্থাৎ যার যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করতে হবে। যেহেতু রমজান মাস, তাই সেহরির সময় গ্লুকোজ খাওয়া যেতে পারে। এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যা মস্তিষ্ককে ভালো রাখে। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা সকালে নাস্তা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারে। 

মেডিভয়েস: এসব পরীক্ষার আগের রাতে বা কিছুদিন আগে সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর করণীয় কি?

নাজমুস সাকিব রাহাত: আসলে ২০১৫ সালের পর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের গুজবের কিছু শুনতে পাইনি। ২০১৫ সালের পর এ রকম কোনো প্রমাণ পাইনি যে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এটা কেউ প্রমাণ দিতে পারেনি। তারপরও বিভিন্ন ধরনের গুজব কারও কানে আসতে পারে। তবে এই ধরনের গুজব কানে না দেওয়াই ভালো। এসব গুজব একজন মনোযোগী শিক্ষার্থীকে অমনোযোগী করার পন্থা বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা মাত্র। আমরা বিগত বছর বা তার আগের বছর দেখেছি, প্রশ্ন আসলে ফাঁস হয় না। একজন মনোযোগী শিক্ষার্থীকে বলবো, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। 

মেডিভয়েস: এসব পরীক্ষায় একটু স্নায়ু চাপ থাকে, এ থেকে রক্ষা পেতে কি করা যেতে পারে? 

নাজমুস সাকিব রাহাত: আসলে বড় বড় পরীক্ষাগুলোতে একটু স্নায়ু চাপ থাকে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আমারও একটু চাপ ছিল। কারণ প্রথম পরীক্ষা অর্থাৎ আগে কোনো ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই একটু মানসিক চাপ ছিল। এক্ষেত্রে যারা এবার ডেন্টাল পরীক্ষা দিবে, তারা অনেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে বসছে। তাই তারা এ বিষয়টা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। তবে যারা প্রথম ডেন্টাল পরীক্ষা দিবে, তারা পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে কোনো চিন্তা না করে স্বাভাবিক সুস্থ মস্তিষ্কে থাকার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে দুশ্চিন্তা দূর হতে পারে। 

মেডিভয়েস: কেন্দ্রে টাইম ম্যানেজমেন্টটা কেমন হওয়া উচিত?

নাজমুস সাকিব রাহাত: ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় মান বণ্টন ও প্রশ্নের নমুনা একই থাকে। গণিত বা ক্যালকুলেশন জাতীয় জটিল ধরনের প্রশ্ন আসে না। এরপরেও ২/১টি প্রশ্ন আসলে উচিত হবে, প্রথমে এক নজরে যেগুলো উত্তর করা সম্ভব, সেগুলো আগে দিতে হবে। পরে যেগুলো ফিফটি ফিফটি পারা যাবে বলে মনে হচ্ছে, সেগুলোর উত্তর করতে হবে। এভাবে ৭০-এর উপরে দাগানো সম্ভব। আমি যখন পরীক্ষা দিই, তখন ৩৮ মিনিটে ৯২ উত্তর করেছি। তবে আমার যেন সিরিয়াল ভুল না হয়, তাই প্রশ্নটা দেখার সাথে সাথে একটা পেন্সিল দিয়ে ওএমআর শিটে ছোট ফোটা দিয়ে রাখতাম। পরবর্তীতে আমি ৩০ মিনিটে ৯২টা উত্তর করেছি, তখন ওই ৮ মিনিটে গোল বৃত্তটি ভরাট করি। এক্ষেত্রে সিরিয়াল ভুল হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। সময় ঠিক রাখার জন্য এই পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। আর যদি মনে হয়, এভাবে সময় ক্ষেপণ হতে পারে, তাহলে সরাসরি প্রশ্ন দেখে উত্তর করতেও অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে খুব দ্রুত উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। তবে যেগুলো পারবে না, সেগুলো শুধু গোল দিয়ে চলে যাবে। পরবর্তীতে যেন তারা ফিরে এসে একবার হলেও এটা দেখার সুযোগ পায়, এ রকমভাবে দাগাতে হবে। কিন্তু বৃত্ত ভরাটের ক্ষেত্রে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না।

মেডিভয়েস: যাদের প্রস্তুতি কম, তাদের জন্য কী করণীয়?

নাজমুস সাকিব রাহাত: যাদের মৌলিক বিষয় ভালো, তাদের জন্য চুম্বক অংশটুকু হচ্ছে, তারা কমপক্ষে প্রতিটি লেখকের দাগানো অংশটুকু পড়তে হবে। একজন লেখকের যেসব রেফারেন্স বই আছে অর্থাৎ যেগুলো বিভিন্ন কোচিং থেকে দাগিয়ে দেওয়া হয়, যাতে বিভিন্ন বোল্ড লাইন আকারে থাকে, এইগুলো পড়তে হবে। এ ছাড়া বইয়ের মধ্যে বা বইয়ের শেষে সারসংক্ষেপ থাকে তারা এগুলোও পড়বে। পাশাপাশি একজন লেখক বা অন্য লেখকের অনুশীলনীর এমসিকিউগুলো অবশ্যই পড়তে হবে। আর জিকা ইংলিশের ক্ষেত্রে কমপক্ষে হলেও বিগত মেডিকেল-ডেন্টালের বিষয়ের ব্যাখ্যাসহ পড়বে এবং ইংলিশের ক্ষেত্রে বিসিএস এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন পড়বে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন পড়ার সুযোগ না পেলে, মেডিকেল ডেন্টাল ও বিসিএসের প্রশ্নগুলো বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করেও একটু হলে পড়তে হবে। এভাবে পড়লে তাদের অবশ্যই কাজ হবে।

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত