১৪ এপ্রিল, ২০২২ ০৭:৩৫ পিএম

এক সঙ্গে চার প্রফের রুটিন, বিপাকে থার্ড প্রফের রি-সাপ্লির পরীক্ষার্থীরা

এক সঙ্গে চার প্রফের রুটিন, বিপাকে থার্ড প্রফের রি-সাপ্লির পরীক্ষার্থীরা

সাখাওয়াত হোসাইন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত একটি বেসরকারি মেডিকেলের ২০১৬-১৭ সেশনের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী কল্পনা (ছদ্মনাম)। পাঁচ বছরের মধ্যে এমবিবিএস শেষ করার কথা তাঁর। কিন্তু  করোনাসহ নানা জটিলতায় কেটে গেলো প্রায় সাত বছর। এতে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার করে টাকা গুনতে হয়েছে তাঁর। 

২৮ বছর বয়স্ক এই মেডিকেল শিক্ষার্থী মেডিভয়েসকে জানান, দীর্ঘ সময়েও এমবিবিএস পাস করতে না পারায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তিনি। শরীর ভেঙে গেছে। বেড়ে গেছে প্রেসার। বাবা অনেক কষ্ট করে খরচ চালাচ্ছেন। কখন তার জীবনে কী পরিণতি নেমে আসে তা একেবারেই অনিশ্চিত!

এ রকম শুধু কল্পনার নয়, ঢাবি অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর জীবন এ রকম অন্ধকার কানাগলিতে নিমজ্জিত।

একাধিক শিক্ষার্থী মেডিভয়েসকে জানান, থার্ড প্রফেশনাল শিক্ষার্থীদেরকে দুইবার সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। একবার দেওয়া হয় আলাদা সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা, আরেকবার সুযোগ হয় পরের ব্যাচের থার্ড প্রফের সাথে অর্থাৎ রি-সাপ্লি পরীক্ষা। পরে রি-সাপ্লিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়। এবার এক সঙ্গে চার প্রফেশনাল পরীক্ষার রুটিন দেওয়ায় ফাইনাল প্রফে বসতে আরও ছয় মাস পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের।

শিক্ষার্থীদের দাবি, নিয়মিত থার্ড প্রফেশনাল ও ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা একসাথে অনুষ্ঠিত হয় না। নিয়মিত থার্ড প্রফ হয় মে মাসে আর নিয়মিত ফাইনাল প্রফ হয় নভেম্বর মাসে। এবার একসাথে নিয়মিত থার্ড ও ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছে ঢাবি।

এর আগে গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষায় নিয়মিত ব্যাচের সাথে সাপ্লিমেন্টারী (নভেম্বর) ব্যাচকে একসাথে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭-১৮ সেশনের থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষা গত মার্চ মাসে না নিয়ে ১২ মাসের কারিকুলাম ১৫ মাসে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। এসব কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। 

তাদের দাবি, ঢাবি অধিভুক্ত এমবিবিএস ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পিছিয়ে আগস্ট মাসে আয়োজন এবং থার্ড প্রফের রেজাল্ট জুলাই মাসের মধ্যে যেন দেওয়া হয়।

১৮ মাসের বিশাল সিলেবাস ১৪ মাসে শেষ করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তারা আরও বলছেন, এ কারণে বেশির ভাগ নিয়মিত ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার্থীরাও চাচ্ছেন পরীক্ষা পিছানো হোক। তারা রুটিন প্রকাশের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

তাদের দাবি, ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার পেছানোর দাবি নিয়ে চার বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকে তাদেরকে আলাদা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রিসাপ্লি পরীক্ষার আয়োজন করার আশ্বাস দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা কার্যকরে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

যা বললেন ঢাবি ডিন

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শাহরিয়ার নবী মেডিভয়েসকে বলেন, এসব শিক্ষার্থীদেরকে দুইবার থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে, তারপরও তারা পাস করতে পারেনি। এখন বছরে দুইবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। থার্ড টাইমেও তারা এ সুযোগটা পাবে। এখন তারা পরীক্ষায় পাস করে নভেম্বরের ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার্থীদের সাথে বসতে পারবে, কোনো সমস্যা নেই।

শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে--বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে বসিয়ে রাখতে পারি না। এর পর পরীক্ষা দিয়ে যারা পাস করবে না, তারা বলবে পরীক্ষা আরও পিছানো হোক। শিক্ষার্থীদের সব কথা আমলে নেওয়া যায় না। এখন ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পিছানোর কোনো সুযোগ নেই। রিসাপ্লি দেওয়া এ শিক্ষার্থীরা পাস করলে নভেম্বরের ফাইনাল পরীক্ষার সাথে বসতে পারবে।’

ডা. শাহরিয়ার নবী বলেন, ‘আমাদের সঠিক নিয়ম পদ্ধতি মেনে চলতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম যেন ভালোভাবে চলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশে এমনিতেই চিকিৎসক তৈরি নিয়ে হাজারও প্রশ্নের সম্মুখীন। সুতরাং তাদেরকে এখন সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত