বায়ুদূষণে কয়েকগুণ বেড়েছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগী

আসাদুল ইসলাম দুলাল: সড়কে দীর্ঘ দিন ধরে চলা ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সৃষ্ট ধূলায় দূষিত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। এ দূষণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এতে নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। চিকিৎসকরা বলছেন, সম্প্রতি বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধূলায় মিথেনসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাসীয় পদার্থ রয়েছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় সম্প্রতি যা কয়েকগুণ বেড়েছে। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, বাসযোগ্যতা ও নাগরিক সুবিধাগত দিক থেকে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অবস্থান বিষয়ক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) একটি তালিকা প্রকাশ করে। ২০২১ সালে প্রকাশিত বসবাসযোগ্য শহরের এ তালিকায় অযোগ্য শহর হিসেবে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
আর ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগী শহরে নামিয়ে আনার পেছনে যে নিয়ামকগুলো দায়ী তার অন্যতম ‘বায়ু দূষণ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭ মিলিয়ন (অর্থাৎ ৭০ লাখ) মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পরিবেষ্টিত বায়ু দূষণের কারণে ৪.২ মিলিয়ন এবং গৃহ-অভ্যন্তরীণ কারণে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ১.২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর বিশ্ব ব্যাংক-২০১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ঢাকায় ১০ হাজার মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়। গত কয়েক বছর ধরেই বায়ু দূষণ মাত্রাতিক্ত বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বায়ু দূষণ এমন বেড়েছে যে, তা মানুষের শরীরকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করে না; মানসিক অবস্থাকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে।
ক্যাপসের গবেষণায় জানা গেছে, বায়ু দূষণের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভৌগলিক কারণ উল্লেখযোগ্য। মানব সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটা ও শিল্প কারখানা, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া যানবাহনের কালো ধোঁয়া, আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণ, গৃহস্থালী ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক এবং বর্জ্য পোড়ানোর থেকে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার আশপাশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইটভাটায় চালু থাকে। এই ভাটাগুলো বছরের নানা সময়ে বায়ুর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন দিক হতে ইটের ভাটায় উৎপন্ন বায়ু দূষণগুলো ঢাকা শহরে দিকে প্রবাহিত করে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ইটের ভাটাগুলো ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য ৫৮ ভাগ দায়ী। এ থেকে ঢাকার বায়ু দূষণে ইটের ভাটার ভূমিকা বোঝা যায়। ভরা মৌসুমে ইটের ভাটা দৈনিক প্রায় ১০ টন কয়লা পোড়ায়। এক টন কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রায় ২.৮ টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে (অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ ও বস্তুকণা ১০), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2), কার্বন মনোক্সাইড (CO), ডাই অক্সিন এবং ফুরান নিঃসরিত হয়।
অন্যদিকে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী খোলা অবস্থায় পরিবহনও বায়ু দূষণ ঘটায়। ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ, পুরনো, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি এবং বিরামহীন যানজট বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের এক রিপোর্টে জানা যায়, ৫৮.৬% হালকা যানবাহন, ৬৯% ট্রাক, ৮৪% বাস এবং ৮৭.২% মোটরসাইকেল ‘জাতীয় দূষণ মান’ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ ছাড়া যানজটের কারণে গাড়িগুলোকে অতিরিক্ত সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করতে হচ্ছে, এতেও বায়ু দূষণ বেড়ে যাচ্ছে। এরপর রয়েছে আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ, যা সারা দেশের অনেক স্থানের বায়ু দূষণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা শহরসহ অন্যান্য শহর অঞ্চলের বায়ু দূষণের অন্যতম একটি উৎস গৃহস্থলী ও রান্নার চুলা। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় কাঠের কিংবা কয়লার চুলা ব্যবহার করার কারণে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
কোন সময় বায়ুদূষণ বেশি হয়, জানতে চাইলে ক্যাপসের পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার মেডিভয়েসকে বলেন, এবারের শুষ্ক মৌসুমে বায়ুর মান যথেষ্ট খারাপ ছিল। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বায়ুর মান খারাপ থাকে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় বাতাসে ধূলিকণাগুলো খুব সহজে উড়ে বেড়ায়। বায়ুর মান খারাপ হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সারা বছরের প্রায় ৬০ ভাগ বায়ু দূষণ হয়ে থাকে এবং বর্ষাকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ ভাগ বায়ু দূষণ হয়।
ঢাকা শহরে মৌসুমভিত্তিক বায়ুমান পরিস্থিতি
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছে ক্যাপস। সেখানে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়। ওই গবেষণার অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের যথাক্রমে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমণ্ডি-৩২, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ বায়ু মানের তথ্য উপাত্ত নিউজিল্যান্ডে প্রস্তুতকৃত US EPA সার্টিফাইড Areroqual S-500 মেশিন দ্বারা সংগ্রহ করা হয়।
এসব স্থানের বস্তুকণা ২.৫ ও বস্তুকণা ১০ এর উপাত্তসমূহ প্রাক-বর্ষা, বর্ষাকাল, বর্ষা-পরবর্তী, শীতকাল চারটি মৌসুমে বিভক্তির বিশ্লেষণে দেখা যায়, চার মৌসুমের মধ্যে শীতকালে দূষণের পরিমাণ অন্য মৌসুমের তুলনায় বেশি ছিল। শীতে গড়ে বস্তুকণা ২.৫ উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০১ মাইক্রোগ্রাম এবং বস্তুকণা ১০ এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২১ মাইক্রোগ্রাম। বর্ষা মৌসুমে গড়ে বস্তুকণা ২.৫ উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম এবং বস্তুকণা ১০ এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৬২ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ বর্ষাকালের তুলনায় শীতকালে বস্তুকণা ২.৫ এর পরিমাণ প্রায় ২.৫ গুণ বেশি এবং বস্তুকণা ১০ এর পরিমাণ প্রায় ২ গুণ বেশি ছিল।
অন্যদিকে মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে বস্তুকণা ২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায় এবং জুলাই মাসে ২৯.০১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। এটি স্পষ্ট যে শীত মৌসুমে বর্ষা মৌসুমের তুলনা বায়ুমান বেশি খারাপ থাকে।
বায়ুতে কোন ধরণের গ্যাসীয় পদার্থ রয়েছে, জানতে চাইলে ড. কামরুজ্জামান বলেন, ধূলিকণা ছাড়াও বায়ুতে কিছু গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। যেমন: সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, ওজন, মিথেন। এই গ্যাসীয় দূষণগুলো মানবদেহের বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব ভয়ে নিয়ে আসে। এই রোগগুলো ধূলা ও গ্যাসীয় দূষণের বাইরে এটাকে ভারী খনিজ বা ভারি মেটাল বলা হয়ে থাকে। যেমন: শীসা, লেড ও ক্যাডমিয়াম এগুলো বিভিন্ন আশ্চর্যজনক পর্যায়ে যায় এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের জন্য এগুলা দায়ী থাকে। এই তিনটি বায়ুদূষণ উপাদানের বাইরে আরও একটি দূষণ পাওয়া গেছে। এটি হলো, প্যাথজেনিক বায়ু দূষণ বা মাইক্রোভিয়াল বায়ুদূষণ। এটাকে বাংলায় অণুজীব বলা হয়ে থাকে। এটা ব্যাকটেরিয়া, ফ্যাঙ্গাস বা ভাইরাস হিসেবে মানবদেহে আক্রান্ত করে থাকে।
ফার্মেসির ওষুধ বিক্রির উপর পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ ইনহেলার বিক্রি হয়। কিংবা বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে যে পরিমাণ মানুষ চিকিৎসার জন্য যায়, সেটি বর্ষাকালের তুলনায় কখনোও কখনোও দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ক্যাপস জানিয়েছে, গত ৫ বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বায়ু দূষণ ৮.৯ ভাগ বেড়েছে। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীবাসী একদিনও স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ দিনের মধ্যে ৫ দিন ঢাকার বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর, ২০ দিন ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বায়ুমান ১০ দিন অস্বাস্থ্যকর, ১৭ দিন ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত মান মাত্রায় ৫০ একিউআই বায়ুকে স্বাভাবিক ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত বায়ুমান সূচককে অস্বাস্থ্যকর এবং ২০০-৩০০ পর্যন্ত বায়ুমান সূচককে খুবই অস্বাস্থকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বায়ুর মানের এই পরিস্থিতিতে নগরবাসীর কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, জানতে চাইলে ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এইসব দূষণ মানবদেহের মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যারা শিশু (১০-১২) এবং বয়স্ক (৫০-৬০) বছর, একইসাথে গর্ভবতী মহিলারা এই তিন শেণীর লোক খুব সহজেই বায়ুদূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি যাদের পূর্ববর্তী অবস্থায় বা আগে থেকে ফুসফুসজনিত, অ্যাজমাজনিত, বংশগতভাবে সমস্যা রয়েছে, তাদের শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণজনিত কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়।
ক্যাপসের তথ্যের সাথে রাজধানী শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিসংখ্যানেও সত্যতা মেলে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বায়ুমান সূচক যখন ২০৭, তখন এই হাসপাতালের ফুসফুসে বায়ু প্রবাহের বাধাজনিত রোগ বা সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগী ছিল ৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচক বেড়ে যখন ২২২.১৩ তখন রোগীর সংখ্যা ৩৪ জনে পৌঁছেছে। অর্থাৎ প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ডিসেম্বরে অ্যাজমা রোগী ছিল ১২ জন, সেটা জানুয়ারিতে বেড়ে ২৭ জনে পৌঁছেছে।
বায়ু দূষণের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যার বিষয়ে রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার মেডিভয়েসকে জানান, বায়ু দূষণটা একটি সমস্যা। বর্তমানে বায়ু দূষণটা আরও বাড়ছে। বায়ূদূষণের কারণে গত কয়েক বছর ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বায়ু দূষণের ফলে আবহাওটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ যখন বাড়ে, তখন এটা বিভিন্নভাবে মানব দেহে ক্ষতি করে।
অন্যদিকে ওই হাসপাতালের ২০২১ ও ২০২২ এর ফেব্রুয়ারির রোগীর সংখ্যা তুলনা করলে দেখা যায়, ২০২১ সালে যখন সিওপিডি ১৯ ও অ্যাজমা রোগী ১১ জন। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৪ ও অ্যাজমা রোগী ২০ জন।
বায়ুদূষণে কোন ধরণের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে জানতে চাইলে ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত কয়েক বছরে বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা ও ফুসফুসের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে, যা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। কারণ এটা মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। অনেক সময় শ্বাসের মাধ্যমে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ করার ফলে মানবদেহের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে ক্যান্সার ও হাইপারটেনশনসহ স্ক্রিনের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া এই দূষণের ফলে কিডনিসহ মানবদেহের সম্পূর্ণ অঙ্গ আস্তে আস্তে অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতনতার বিষয়ে ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় তিন ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। যথা: ১. স্বল্প মেয়াদি ২. মধ্য মেয়াদি ৩. দীর্ঘ মেয়াদি।
স্বল্প মেয়াদি: এটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে নিজেদের সচেতন হতে হবে। দূষিত জায়গায় কাজ করা থেকে নিজেকে পরিহার করতে হবে। ঘরের ভিতরের পরিবেশে ভ্যান্টেলেটর ব্যবহার করতে হবে। অনুপযুক্ত স্থানে ব্যক্তিগত সুরক্ষা টুলস যেমন: পিপিআই, মাস্ক ও গগলস পরিধান করতে হবে। নিজে ব্যক্তিগতভাবে কোনোরকম দূষণে জড়ানো যাবে না।
মধ্য মেয়াদি: বায়ুদষণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেখানে সরকারের একক কোনো প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে পারবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরকে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। একইভাবে সিটি কর্পোরেশনের সেবাদানকারী সংস্থাগুলো যত্রতত্র সংস্কার, নির্মাণ বহির্ভূতভাবে কাজ শুরু না করে, সেটি সিটি কর্পোরেশনকে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পগুলো যেন নির্মাণ বিধি মেনেই তাদের সামগ্রী পরিবহন এবং কন্সট্রাকশনের কাজ করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
দীর্ঘ মেয়াদি: সিটি গভর্ন্যান্স চালু করতে হবে। শহরের যে কোনো স্থানে উন্নয়ন প্রকল্প মনিটরিং এবং এটি সমন্বয়ের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে পালন করতে হবে। দেশব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বাজেট এবং জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিজ্ঞানভিত্তিক অংশীদারিত্বমূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ বিষয়ে ডা. আয়েশা আক্তার জানান, কার্বনটা কমানোর জন্য নিজস্ব গাড়ি কম ব্যবহারের পাশাপাশি বাস ট্রান্সপোর্ট বেশি ব্যবহার করতে হবে। এসি ব্যবহারের পর বন্ধ করে রাখতে হবে। বায়ুদূষণ রোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ রোধে সরকারের নির্দেশনা জনগণকে মেনে চলতে হবে। পরিবেশটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ও মাস্ক পরিধান করতে হবে।