১৮ মার্চ, ২০২২ ১১:৪৩ এএম

আশা-হতাশা নিয়ে আছেন ইউক্রেনের মেডিকেল শিক্ষার্থী রিজভী হাসান

আশা-হতাশা নিয়ে আছেন ইউক্রেনের মেডিকেল শিক্ষার্থী রিজভী হাসান
আগামী এক মাসের মধ্যে রিজভী হাসানের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থার কারণে ইউক্রেনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। কতদিন এ অবস্থা চলতে থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সবার মতো বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও। অনিশ্চিত এক গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। তবে ইউরোপের দেশগুলো শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছে। অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মান, পোল্যান্ড হাঙ্গেরি ও নেদারল্যান্ডসহ ইউরোপের অন্যদেশে চলে গেছে। এসব বিষয়ে মেডিভয়েসের সাথে কথা হয় ইউক্রেনের ওডেসার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিয়ে পড়ুয়া শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রিজভীর। তিনি গত ছয় বছর ধরে ওই মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে আসছেন। 

রিজভী হাসান বলেন, দেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তীব্র প্রতিযোগীতা হয়। এ থেকে বাঁচতে এবং ভালো পড়াশুনার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন ইউক্রেন। বর্তমানে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। ওডেসার ওই ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে তিনি একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এর আগে একই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ, ওসমানী মেডিকেল কজেলসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে কেউ কেউ ইন্টার্ন করছেন। তবে এখন থেকে ওডেসার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে না বলে জানান এ শিক্ষার্থী। 

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী চিন্তিত ও নানা সংকটে পড়েছেন । অনেকে ভাবছেন, এখানে পড়াশুনা চালিয়ে যাবেন নাকি অন্যদেশে স্থানান্তর হবেন। আগামী এক মাসের মধ্যে রিজভী হাসানের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার। পরীক্ষার অনিশ্চয়তা ভবিষ্যত নিয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। 

যারা ইউক্রেন থেকে মেডিকেলে পড়াশুনা করে আসছেন তাদেরকে ইউকে, জার্মান, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও নেদারল্যান্ডের মেডিকেল সমূহে স্থানান্তর হতে পারবে বলে দেশগুলো জানিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী স্থানান্তর হওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। 

ইউক্রেনে অধ্যায়নরত এ শিক্ষার্থী আরও জানান, যারা ফাইনাল ইয়ারে আছেন অর্থাৎ ফাইনাল প্রফ বাকি আছে অনলাইনে শিক্ষকরা যুদ্ধের মাঝখানেও তাদের ক্লাস নিচ্ছে। প্রাকট্রিকাল করাচ্ছে, ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তবে যারা ফাইনাল ইয়ারে আছে তাদের পরীক্ষা যদি না হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ ডিগ্রিগুলো দিয়ে দিবে বলে জানান তিনি। 

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে অধ্যায়নরত বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদেরকে ইউরোপসহ অনেক দেশ তাদের নিজে দেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে। যেহেতু ইউরোপের দেশগুলোর পড়াশুনার মান একই। সিলেবাসও একই রকম। এজন্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত যেনো খারাপ না হয়। সেদিকে খেয়াল রেখে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

ইউক্রেনে প্রায় ২৫ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছেন। তারা আন্দোলন করছে তাদের নিজ দেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের যে সকল শিক্ষার্থী সেখানে রয়েছেন তাদের কি হবে জানি না। যেহেতু অনেক দেশই তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগীতা করছে, আমাদেরকে সহযোগীতা করলে আমারাও দেশে ফিরে নিরাপদে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারতাম। অবশ্য, কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছে যারা এ পরিস্থিতিতে এখান থেকে গিয়ে যুক্তরাজ্য, জার্মানসহ ইউরোপের অন্যদেশে পড়াশুনা করতে চায় যোগ করেন রিজভী হাসান। 

অধ্যায়নরত জুনিয়রদের ইউক্রেনেই পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, যারা প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষে আছেন তারা চাইলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে ভাল দেশগুলোতে চলে যেতে পারবে। যেহেতু ইউরোপের দেশগুলো এ সুযোগ দিচ্ছে। তবে যুদ্ধতো একসময় শেষ হবে তাই এখানে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। আর যদি ঝুঁকি নিতে না চায় তাহলে খুব সহজে উন্নত দেশে গিয়ে ভর্তি হতে পারেন।

যুদ্ধের অবসান হোক এ প্রত্যাশা রেখে রিজভী বলেন, সবাই শান্তি চায়। কেউই যুদ্ধ চায় না। এই যুদ্ধ বন্ধ হোক। যুদ্ধের ফলে শুধু ইউক্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক মেধাবীর ভবিষ্যত। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। বড় বড় স্থাপনা  ধ্বংস হচ্ছে। এ ধ্বংসলীলা কারো কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে হুহু করে। রাশিয়ার উচিত এখনই যুদ্ধ বন্ধ করা। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক