০৮ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩৭ পিএম

তিনজনের শলা পরামর্শে নিষেধাজ্ঞা, কমলনগরের ইউএইচএফপিওকে তলব

তিনজনের শলা পরামর্শে নিষেধাজ্ঞা, কমলনগরের ইউএইচএফপিওকে তলব
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবির বলেন, ‘অফিস আদেশের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কারও কাছ থেকে অনুমতি নেননি ডা. আবু তাহের। আদেশ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি।’

সাখাওয়াত হোসাইন: কর্মস্থলে তিন বা তার বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর শলা-পরামর্শে নিষেধাজ্ঞা জারি করা কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. আবু তাহেরকে তলব করেছে লক্ষ্মীপুর জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।

আজ বুধবার (৮ মার্চ) রাতে বিষয়টি মেডিভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবির।

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অফিস আদেশ দেওয়ার কোনো বিধান বিদ্যমান আইনে নেই। আজকে ডা. আবু তাহেরকে তলব করা হয়েছে এবং বিভাগীয় পরিচালকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা ক্ষুদ্ধ, কেন এ ধরনের আদেশ দেওয়া হলো?’

তিনি আরও বলেন, ডা. তাহেরের বিরুদ্ধে যতটুকু শাস্তি দেওয়া দরকার, ততটুকুই দেওয়া হবে। এ ধরনের আদেশ তিনি করতে পারেন না। আর তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন একটা, হয়ে গেল আরেকটা। তার ভাষাটাই ঠিক হয়নি। এখন তো কারফিউ জারি হয়নি যে, তিনজনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় তাকে যতটুকু বলার তা হয়েছে, ভবিষ্যকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়া তিনি কোনো অফিস আদেশ দিতে পারবেন না।

ডা. আহাম্মদ আরও বলেন, অফিস আদেশ দেওয়ার আগে আমাদের কারও কাছ থেকে অনুমতিও নেননি ডা. আবু তাহের। আদেশ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে সোমবার (৭ মার্চ) ডা. আবু তাহেরের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে, কোন কোন কর্তকর্তা বা কর্মচারী তিনি বা তার বেশি সংখ্যক একত্রিত হয়ে শলা পরামর্শ করে থাকেন। যা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক কিংবা পারিবারিক, সরকারি চাকুরীর আচরণ বিধির বহির্ভূত। যদিও কোন কাজ করার প্রয়োজন মনে করলে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যৌক্তিকতার মাধ্যমে উপস্থাপন করার জন্য সকলকে প্রদান করা হলো। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানানো হবে।’

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে না জানিয়ে ওই উপজেলা কমপ্লেক্সে অনেক অনুষ্ঠানাদি আয়োজন করতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপেক্ষিতে এ আদেশ দেন ডা. আবু তাহের। তবে এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা। তারা বলছেন, এ অফিস আদেশ সংবিধান পরিপন্থি। কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো মতেই ঠিক হয়নি বা তার ইখতিয়ারে নেই।

ডা. আবু তাহেরের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার ফেইসবুকে লিখেন, ‘কোন আইনে তিনজনের বেশি একত্রিত হয়ে পরামর্শ করা যায় না? এ রকম কোন কিছু আছে কি?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জানা মতে, ১৪৪ ধারা জারি হলে কেবল তিনের বেশি এক সঙ্গে হতে পারে না। এটা সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও নিষিদ্ধ? কোন সমাজে? হতে পারে আমার জানার ভুল। তবে এই পত্রের দ্বারা বোঝা গেল চিকিৎসকরাও আমলাতান্ত্রিক হয়ে উঠছেন।’

এ রকম আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা ইউএইচএফপিওর নেই উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান মেডিভয়েসকে বলেন, এ ধরনের আদেশ তিনি দিতে পারেন না।

এমইউ 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক