০৭ মার্চ, ২০২২ ১২:৩৭ পিএম

পেছাবে না এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা, হবে পূর্ণ সিলেবাসেই 

পেছাবে না এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা, হবে পূর্ণ সিলেবাসেই 
সংশ্লিষ্টরা বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা সবার জন্য সমান চ্যালেঞ্জের। আংশিক কিংবা পূর্ণ সিলেবাসের কথা বলে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

মো. মনির উদ্দিন: পূর্ণ সিলেবাসে এবং ঘোষিত তারিখেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা সবার জন্য সমান চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করে তারা বলেন, আংশিক কিংবা পূর্ণ সিলেবাসের কথা উচ্চারণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। 

তারা মনে করেন, দেহ-মনের অসুস্থতা উপশমের রক্ষাকবচ মেডিকেল শিক্ষার জন্য উপযুক্ত মেধাবীদের বাছাইয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ও সর্বাধিক যৌক্তিক পথ অবলম্বন করবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে বিপন্ন হবে নাগরিকদের জীবন।

চলতি বছরের এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া উচিত বলে বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মত দিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানোর পর পুরো সিলেবাসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ভাবনাকে অযৌক্তিক বলেও আখ্যা দেন মন্ত্রী। 

তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।  

বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব মেডিভয়েসকে বলেন, অন্যান্য বছর যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। এবারও একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে,  অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে

এর প্রায় দেড় সপ্তাহ পর গত ৪ মার্চ রাজধানীতে ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া এডুকেশন ফেয়ার-২০২২’—এর উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে পুনর্বিন্যস্ত (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে সে সিলেবাসেই তাঁদের ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত।’

আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার এক মাস আগে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ভর্তিচ্ছুসহ স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন শনিবার (৫ মার্চ) মেডিভয়েসকে বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি পরিষ্কার করা আছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নাই। তবে এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি তিনি। 

এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির একই দিন মেডিভয়েসকে বলেন, এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। যোগ্যতায় যে উত্তীর্ণ হওয়ার সেই হবে, না হয় হবে না। এখানে পূর্ণ-আংশিক সিলেবাসের কিছু নাই। সবার জন্য একই নিয়ম। এটা লুকোচুরিরও কিছু নাই। আগে থেকেই জানানো হয়েছে। বিজ্ঞাপনে নম্বরের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভর্তি কমিটি যা সিদ্ধান্ত দেবে, এটাই চূড়ান্ত।

অধ্যাপক ইউসুফ ফকির বলেন, প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল। মিছিল-মিটিং, বেদিতে ফুল দেওয়া—সবই চলছিল, তবে স্কুল বন্ধ ছিল। যাদের সন্তান আছে, তারা এর ক্ষতিটা প্রত্যক্ষভাবে আন্দাজ করতে পারছেন। এই দুই বছরের শূন্যতা শিক্ষার্থীরা কিভাবে পূরণ করবে? এমন হলে তো পৃথিবীতে গুরুগৃহ শিক্ষাই থাকতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এসে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেছিল, সেটা হতো না। ১৭৮০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম যাত্রা শুরু করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকবে তাহলে তো এটার দরকার ছিল না।

সংক্ষিপ্ত-পূর্ণ সিলেবাসের কথায় সংশয়

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল রোববার (৬ মার্চ) মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি অবগত না। এটা বিএমডিসির এখতেয়ারাধীন, তারাই ঠিক করবে। দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকরা সেখানে আছেন। তারা যেভাবে মনে করবেন, সেভাবেই আয়োজন করবেন। এটা মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ই না। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পূর্ণ সিলেবাস—এসব বলে বলে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করা হচ্ছে।’ 

সব কিছুই চলমান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে মেধাবী, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সেখানে অধিকতর যোগ্যদেরই বাছাই করতে হবে, তা না হলে আপনার-আমার জীবন বিপন্ন হবে।’

এদিকে গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি, আমাদের মূল কাজটা শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কাজেই তাদের বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তাদের কোনটা ভালো, কোনটা প্রয়োজন সেটাই সবার আগে আমরা দেখবো।’

এর আলোকে লিখিত কোনো নির্দেশনা এলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, ‘নির্দেশনা এলে বিবেচনা করতে হবে। তবে লিখিত কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্ত আমার একারও না। এজন্য সমৃদ্ধ একটি কমিটি আছে।’

‘আজ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি, আমরা পূর্ণ সিলেবাসে নেওয়ার বিষয়েই প্রস্তুত আছি’, যোগ করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। 

তিনি আরও বলেন, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা তো কোনো ব্যাপার না। তবে সেটাও যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জানানো হবে। কারণ যথাসময়ে না জানানো হলে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন প্রস্তুত করতে হবে, যা কষ্টসাধ্য। ১ এপ্রিল এমবিবিএস পরীক্ষা। অন্তত ১৫ তারিখের মধ্যে অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত আসতে হবে। কারণ পরীক্ষা নির্বিঘ্ন ও প্রশ্নমুক্ত রাখতে অনেকগুলো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র চাইলে সব কিছু সম্ভব। ভর্তি পরীক্ষা না নিয়েও এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতেও ভর্তি নেওয়া যাবে। আমাদের সময় মেট্রিক-ইন্টারমেডিয়েটের মার্ক দেখে ভর্তি নেওয়া হতো। কিন্তু এটা ক্ষতিকর। আমরা ওই ধারায় ফিরতে চাই না। আমরা চাই, এটা আরও প্রতিযোগিতামূলক হোক। যেই রুমে প্রশ্ন তৈরি করা হয়, সেই রুমে আমি এবং ডিজি স্যারও ঢুকেন না, যাতে আমাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। বিষয়টি মূলত অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান স্যার দেখেন, তাকে আমরা স্বাধীনতা দিয়ে রাখি।’

বিষয়টি জানতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসানকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। 

জানতে চাইলে বিএমডিসি সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম রোববার (৬ মার্চ) মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। নির্ধারিত কমিটিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে আমরা কোনো কথা বলবো না। অধিদপ্তরের শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা শিক্ষার্থীদের জন্য সখকরই হবে। এ ব্যাপারে বিএমডিসির তরফ থেকে আলাদা করে বলার কিছু নাই।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশের বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে একাধিক দিন দফায় দফায় ফোন দেওয়া হয়েছে, পাঠানো হয়েছে ক্ষুদেবার্তাও। তবে কোনোটারই সাড়া মেলেনি।

পেছাচ্ছে না ভর্তি পরীক্ষা

অন্যদিকে পরীক্ষা এক মাস পেছানো হবে কিনা, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, ‘এটা সম্ভব না। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে অনেক ঝামেলা হবে। একে তো করোনা পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, ২২ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সেশন জট বাড়ছে, এটা যত কমানো যায়—ততই শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক। এক মাস পর ভর্তি পরীক্ষা হওয়া মানে, এক মাস পর ক্লাস শুরু হবে। সময় মতো পরীক্ষা না নেওয়া গেলে ইন্টার্ন সংকটও তৈরি হবে। এতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

‘কিছু শিক্ষার্থী সব সময়ই থাকবে, যারা কখনোই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক না’—যোগ করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কী পরীক্ষা হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমডিসি সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা সারা বছরই পড়াশোনা করেছে। সে কি বাংলা পড়েনি, ইংরেজি পড়েনি, সাধারণ জ্ঞান পড়েনি? সব কিছুই পড়েছে।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক