ডা. শাহজাদা সেলিম 

ডা. শাহজাদা সেলিম 

সহযোগী অধ্যাপক,
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় 


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৯:২৮ পিএম

ডায়াবেটিস রোগীদের ৫৬ ভাগ জানেন না নিজের আক্রান্তের কথা 

ডায়াবেটিস রোগীদের ৫৬ ভাগ জানেন না নিজের আক্রান্তের কথা 
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে সন্তান জন্মের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। ফাইল ছবি।

মেডিভয়েস: ডায়াবেটিস নেই এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। অথচ ডায়াবেটিস রোগীদের অন্তত ৫৬ শতাংশ জানেন না যে, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর অন্যতম কারণ, এ রোগে আক্রান্তদের বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সুস্থ জীবন-যাপন পদ্ধতি অবলম্বন করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ডায়াবেটিস 

রক্তের গ্লুকোজ কোনো কারণে বেড়ে গেল। এভাবে যদি বাড়তেই থাকে, তাহলে সেটিকে ডায়াবেটিস বলে। আবার বেড়ে গিয়ে যদি এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে সেটিকে ডায়াবেটিস বলা যাবে না। ইনসুলিন রক্ত থেকে গ্লুকোজকে কোষের ভেতরে নিয়ে যায় এবং গ্লুকোজ তখন শরীরের ব্যবহারের উপযোগী হয়। প্রধানত একজন মানুষের যদি ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায়, বা কোনো কারণে ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে তাহলে গ্লুকোজটা রক্তে থেকে যাবে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হওয়াকে ডায়াবেটিস বলে। 

সাধারণত চার ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে। টাইপ-১, টাইপ-২, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস। টাইপ-১ মানে হলো, ইনুসুলিন উৎপাদন যদি সরাসরি কমে যায়, তার কারণে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। টাইপ-২ হলো, ইনসুলিনের উৎপাদন যদি কিছুটা কমে যায় এবং একইসাথে ইনসুলিনের ব্যবহার করার সুযোগ কমে যায়, মানে ইনসুলিন রেজিটেন্স আছে এ দুটোর সমন্বয় ঘটলে টাইপ-২।

লক্ষণ

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সবাই বুঝতে পারে। যেমন: ওজন কমে যাওয়া। শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া। পানির পিপাসা অনুভূত হওয়া। সমস্যা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়। তাঁরা বুঝতেই পারেন না যে, তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। বারবার প্রস্রাব করা, খাবার খেয়েও ক্ষুধা না মেটা, ক্লান্ত লাগা—এ রকম কিছু লক্ষণ থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন লক্ষণ দেখা যায় না। রোগী অন্য কোনো জটিলতায় ডাক্তারের কাছে গেলে, যেমন: হৃদরোগ, বন্ধ্যত্ব বা অপারেশনের জন্য যখন ডাক্তারের কাছ যাওয়া হয়, তখন পরীক্ষা করে দেখা গেল ডায়াবেটিস আছে। কেউ যদি পরীক্ষা না করে লক্ষণের জন্য অপেক্ষা করেন, তাহলে জল অনেক দূর গড়িয়ে যাবে। 

অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখে রোগীকে তিন ভাগের যে কোনো একভাগে ফেলা হয়। হতে পারে খুব ভালো আছে। হতে পারে ফ্রি ডায়াবেটিস। হতে পারে ডায়াবেটিস একবারে হয়েই গেছে।

কারণ

পরিবারের একজনের হলে আরেকজনের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। তবে পরিবারে পাঁচ জন সদস্য আছে, সবার হবে—এ রকম নয়। চারজনের হতে পারে, তিনজনের হতে পারে। এ ছাড়াও আরো যেসব কারণে হতে পারে, যেমন: জেনেটিক, ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক।

করণীয়

এখন পর্যন্ত চিকিৎসা পদ্ধতি যেভাবে চলছে, তাতে রোগটি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে আশা করা যায়, নিরাময়যোগ্য হবে। এখন পর্যন্ত একটিই কাজ, সেটি হলো-ডায়াবেটিস হলে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে সন্তান জন্মের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রেণ রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সাধারণত দুই ধরনের, যথা: জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে।

জীবন-যাপন পদ্ধতি যেমন হবে

জীবন-যাপনটা চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীকৃতি পদ্ধতির আলোকে পরিবর্তন করতে হবে। টাইপ-২ এর কথা বলা হচ্ছে। যে কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়, সেটি জীবন-যাপন পদ্ধতির কারণে। তাই মানুষকে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা উন্নত করতে হবে। আমাদের দেশে শত শত বছর ধরে একই খাদ্য পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। যেমন: প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। তিন বেলা পেট ভরে খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার খাবার- ভাত, রুটি ও পাউরুটি  খাওয়া হয়। এগুলো মানুষ যখন হজম করে তখন গ্লুকোজ হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মানুষের সারাদিনের খাবারে প্রায় আশি শতাংশই শর্করা জাতীয় খাবার। এই আশি শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস হবে না, এটি বিশ্বাস করা কঠিন। এজন্য আমাদেরকে খাবারের বিষয়ে ব্যাপক সচেতন হবে। জীবন-যাপনে যত্নবান হতে হবে।

এএইচ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত