২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৫:৪৫ পিএম

সত্য-সুন্দরের বোধ জাগিয়ে তোলায় লেখকের স্বার্থকতা: ডা. নিসর্গ মেরাজ

সত্য-সুন্দরের বোধ জাগিয়ে তোলায় লেখকের স্বার্থকতা: ডা. নিসর্গ মেরাজ
ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, সমাজকে অনেক উপায়ে দেওয়া যায়। লেখালেখিটা এর একটি মাধ্যম হতে পারে।

নিজের অভিব্যক্তিগুলো প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের মনে সত্য ও সুন্দরের বোধ জাগিয়ে তোলার মধ্যেই একজন লেখকের প্রকৃত স্বার্থকতা নিহিত বলে মনে করেন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। আর এ রকম পরিবর্তনের অনুসঙ্গ হয়ে ওঠা কোনো গ্রন্থ লিখতে ব্যাকুল তাঁর হৃদয়।

এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখকের ভ্রমণ কাহিনীধর্মী গ্রন্থ খেমারদের দেশে। উপকথা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই ও লেখালেখির সূচনা জানতে এই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয় মেডিভয়েসের। বইয়ের উপজীব্য তুলে ধরার পাশাপাশি জানিয়েছেন সাহিত্য রচনার প্রেরণা ও লেখালেখি ঘিরে তাঁর স্বপ্নের কথা। কথা বলেছেন মো. মনির উদ্দিন।

ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে লেখালেখি

ডা. নিসর্গ মেরাজ বলেন, ‘একজন লেখক হিসেবে প্রথম চাওয়া থাকে, নিজের মনের অভিব্যক্তিগুলো প্রকাশ করে মানুষকে জানানো, যাতে এর মাধ্যমে তাদের মনে সত্য ও সুন্দরের বোধোদয় হয়। এর মধ্যেই একজন লেখকের স্বার্থকতা। সে দিক থেকে হিসাব করলে আমার বইগুলো মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলছে। তারা গ্রহণ করছেন, ভাবছেন। এর আলোকে নিজেদের মধ্যে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তবে আমূল পরিবর্তনের মতো কোনো লেখা এখনো লিখতে পারিনি। এ নিয়ে আমার মধ্যে একটি তৃষ্ণাবোধ আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নানামুখী কাজের কারণে একজন চিকিৎসক হিসেবে লেখালেখিতে যুক্ত থাকা আমাদের জন্য বর্তমান সময়ে চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি চাকরির ব্যস্ততার ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এসবের মধ্যেই অনেক চিকিৎসক ভালো বই লিখছেন। তাদের মধ্যে যেটুকু সৃজনশীলতা রয়েছে, এটাকে যদি প্রাধান্য দেওয়া যায়, মন উন্মুক্ত রাখা যায়, তাহলে আমাদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সমাজকে অনেক দিক থেকে দেওয়ার থাকে। এই লেখালেখিটাও দেওয়ার একটি মাধ্যম হতে পারে।’

ডা. নিসর্গ মেরাজ বলেন, ‘লেখালেখি একটি সৃজনশীল জায়গা, সে কারণে মনোজগৎ তৈরি করে নিতে হয়। পেশাগত কাজের ফাঁকে বাড়তি একটি মনোযোগ তৈরি করে নিতে হয়। সময় বের করার ক্ষেত্রে খানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই হয়। তারপরও এটা আমি খুব আনন্দের সঙ্গেই করি। যতটুকু সময় পাই, নিজের মতো করেই চেষ্টা করি। আর যেহেতু গবেষণাধর্মী কাজগুলো করি, সেগুলো পড়ালেখা করেই করতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণ পড়ালেখা করার পর যখন একটি বিষয়ে আমার ধারণা তৈরি হয়, তখন লিখতে বসি। কোনো একটি বিষয় দাঁড় করাতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যায়।’

‘খেমারদের দেশে’ বইয়ের উপজীব্য

খেমারদের দেশে বইয়ের উপজীব্য নিয়ে লেখক ডা. নিসর্গ মেরাজ মেডিভয়েসকে বলেন, উপকথা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটি মূলত ভ্রমণ কাহিনীধর্মী। প্রথম যখন ক্যাম্বোডিয়ার কথা শুনি, তখন এর নাম ছিল কাম্পুচিয়া। সেই দেশটির অন্যতম প্রধান অধিবাসী জাতির নাম খেমার। সেই নামের সাথে জড়িত খেমার রুজ নামের একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী দলের। তারা পতন ঘটিয়ে ছিল গণতন্ত্রের। তারও আগে তারা রাজতন্ত্রকে বিদায় বলে রাজাকে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল গণতন্ত্র। সেই দেশটি ইতিহাসের পাতায় কখনো অনেক আলোচিত, কখনো একেবারে নিষ্প্রভ। এই খেমার জাতিই হাজার বছর আগে গড়ে তুলেছিল পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দির এং কর ওয়াট। সৃজন করে নতুন রাজ্য খেমার রাজ্য। একবিংশ শতাব্দীর এই বর্তমান থেকে আমার পর্যবেক্ষণ ছিল, সেই প্রাচীন রাজ্যের ইতিহাসের প্রতি। ছিল ইতিহাসের এক কালো বাহিনী খেমার রুজের বর্বরতার চাক্ষুস সত্যতার পর্যালোচনা। পৃথিবীর সব যন্ত্র, মন্ত্র, তন্ত্রের ভিড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গড়ে ওঠা আজকের ক্যাম্বোডিয়াকে দেখা, সেই প্রাচীনত্বের সহাবস্থানে। আর এই নিয়ে ফিকশন-ননফিকশন ধাঁচের মেলবন্ধনে আমার লেখা বই ‘খেমারদের দেশে।’

লেখকের অন্যান্য বই

ডা. নিসর্গ মেরাজের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে: মহাস্থবির শীলভদ্র, সেই আগুন সেই আলো এবং আলাওল ও সেই সময়।

লেখালেখির হাতেখড়ি

সাহিত্যানুরাগী ও সংস্কৃতিপ্রেমী পরিবার হওয়ার সুবাদে পারিবারিকভাবেই তাঁর লেখায় হাতেখড়ি। ছোটবেলা থেকেই করে আসছেন সাহিত্য চর্চা। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ছিল সমান পদচারণা। আবৃত্তি ও বিতর্কে ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। এ পথ ধরে ২০০৯ সালে প্রথম গল্পের বই প্রকাশ পায়, সাদা কাক কলো পানি। এর পর প্রকাশিত হয় সমকালীন উপন্যাস। মূলত তিনি ঐতিহাসিক উপন্যাসে মনোযোগী হয়ে উঠেন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত মহাস্থবির শীলভদ্র বেশ জনপ্রিয় উপন্যাস। কুমিল্লার অতি সাধারণ পরিবারের শীলভদ্র পরবর্তীতে ভারতে নারেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন। তার বেড়ে ওঠার ইতিহাস ও পরের যুগ নিয়ে উপন্যাসটি রচিত।

মহাস্থবির শীলভদ্র প্রকাশিত হয় কলকাতার খোয়াবনামা প্রকাশনী থেকে। সেখানে বইটি বেশ সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবরে এটি দেশে প্রকাশ করে উপকথা প্রকাশন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গল্পের বই দিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। সে সময়ের বইগুলো ছিল সমকালীন বিষয় অবলম্বনে। ছিল ঐতিহাসিক উপন্যাস, ব্রিটিশ শাসন আমলে কুমিল্লার বিপ্লবী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এ পথ ধরে আরাকানে রাজকবি মহাকবি আলাওল নিয়ে গত বছর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য থেকে।’

শিক্ষা ও কর্মজীবন

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০০৪ সনে এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। সেখান থেকে ২০১০ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে ২০১৮ সালে অ্যাপ্লায়েড এপিডিমিওলজিতে এমএমসি সম্পন্ন করেন।

২০১৩ সালে স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। কর্মজীবনের সূচনা হয় চৌদ্দগ্রামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। এরপর কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন।

পরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনয়িা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে কিছু দিন দায়িত্ব পালনের পর চলে আসেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে। এ উপজেলায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করেন। নতুন বছরে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : অমর একুশে বইমেলা
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত