রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি পরীক্ষা পেছাবে না: বিএসএমএমইউ ভিসি

সাখাওয়াত হোসাইন: করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি কোর্স জানুয়ারি-২০২০ এর লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তবে কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা কক্ষে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে মেডিভয়েসকে এসবকথা জানান তিনি।
বিএসএমএমইউর ভিসি বলেন, ‘এ মুহূর্তে রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি কোর্সের পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই, আমাদের তো নিয়ম আছে। যারা অসুস্থ, তারা পরবর্তীতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এক হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জনের জন্য পরীক্ষা পেছানোর কোনো নিয়ম নেই। পরীক্ষাগুলো ধারাবাহিকভাবে চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। যাদের করোনার লক্ষণ রয়েছে, টেস্ট করার পর করোনা নেগেটিভ হলে পরীক্ষা দিতে পারবে। যারা করোনায় আক্রান্ত, তাদেরকে আলাদা রুমে নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে পারি কিনা চিন্তা-ভাবনা চলছে। ওরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলেই সেই ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গেছে, আগামী ১ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএসএমএমইউ এবং অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি, এমএস, এমমেড, এমফিল ও ডিপ্লোমা কোর্সের জানুয়ারি ২০২২ সেশনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা পেছানোর জোর দাবি শিক্ষার্থীদের
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমণ অত্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী। তাদের মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থী কোভিড পজিটিভ এবং করোনা উপসর্গে ভুগছেন। এমতাবস্থায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাতায়াতের ফলে আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু চিকিৎসক, ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষকবৃন্দ কোভিড আক্রান্ত এবং মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
তারা আরও বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সশরীরের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় তারাও কিছুদিনের জন্য পরীক্ষা স্থগিত চান।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের সাথে প্রায় ৫০ শতাংশ পরীক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত বা তাদের পরিবার মারাত্মকভাবে করোনায় আক্রান্ত। আর যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি, তাদের পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে তিনজনেরই করোনা পজিটিভ। পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসে পরীক্ষা দেবে। কেউ রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম থেকে আসবে। আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে এবং আসতে হবে। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিটা আরও অনেক বেশি।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এক সহপাঠীর বাবার অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের পরিবারের অনেকেই করোনা আক্রান্ত। আগে ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষার্থী পেছানোর জন্য আন্দোলন করতো, আমাদের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। আমরা একটি সংকটাপন্ন মুহূর্তে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে কিছুদিনের জন্য সময় চাচ্ছি। অনেক টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছি। সবাই চাইবে পরীক্ষা দিতে। অনেকে করোনা লক্ষণ লুকিয়েও পরীক্ষা দিবে। আমরা যারা করোনা নন-পজিটিভ, পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাদেরও ঝুঁকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতি আমরা কিছুদিনের জন্য স্থগিত চাই।
পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনায় আমার বাবা বৃহস্পতিবার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমাদের কথা বলার কোনো ভাষা জানা নেই। আমার আইসিইউতে থাকাবস্থায় আমাদের বিএসএমএমইউতে দরখাস্ত নিয়ে গিয়েছিলাম, পরীক্ষাটা পেছানোর জন্য। পরে ওইখান থেকে বললো বিএসএমএমইউ ভিসি বরাবর দরখাস্ত লিখতে। ভিসি বরাবর লিখলাম তাও জমা রাখা হলো না। শেষ পর্যন্ত এতটা অসুস্থ হয়ে পড়ি যে, আমার পক্ষে দোঁড়াদৌড়ি করা সম্ভব হয়নি। এই মুহূর্তে পরীক্ষাটা কিছুদিনের জন্য পেছানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।’
