১৬ জানুয়ারী, ২০২২ ০৪:৪৩ পিএম
শিক্ষাকাল পূর্ণ হওয়ার আগে রুটিন

ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা পেছানোর দাবি রাবির মেডিকেল শিক্ষার্থীদের

ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা পেছানোর দাবি রাবির মেডিকেল শিক্ষার্থীদের
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেশনজট ও ইন্টার্ন সংকট অবসানে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টার্নশিপ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে ফাইনাল প্রফের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে।

মো. মনির উদ্দিন: ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, কম সময়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করা গেলেও যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক হওয়া যায় না। তাই যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নির্ধারিত শিক্ষাকাল পূর্ণ হওয়ার পর প্রফেশনাল পরীক্ষা আয়োজনের দাবি তাদের।

তবে সেশনজট ও ইন্টার্ন সংকট অবসানে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইন্টার্নশিপ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে ফাইনাল প্রফের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে। তাদের দাবি, ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা কয়েক মাস এগিয়ে আনার কারণে এখন যারা নানা সমালোচনা করছে, গতবারের মতো সবার আগে চিকিৎসক হয়ে চাকরিতে প্রবেশে সুযোগ পেলে তারাই এ উদ্যোগের প্রশংসা করবে।

যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক হতে চাই পূর্ণ শিক্ষাকাল

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইনাল প্রফের এক শিক্ষার্থী মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বাচ্চারা খেলে পুতুল নিয়ে আর রাবি খেলছে ফাইনাল প্রফের স্টুডেন্টদের জীবন নিয়ে। মর্গে না পাঠানো পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। ১ বছর ৫ মাসের ফাইনাল প্রফ এখন ৭-৮ মাসে টেনে নিয়ে এসে ইতিমধ্যে পরীক্ষার রুটিন পর্যন্ত দেওয়া হয়ে গেছে। আমরা রাবি তো ঢাবি, সিএমইউ, সাস্ট’র সঙ্গেই থার্ড প্রফ দিয়েছি। ... তো অন্যরা যখন এখনো প্রফ নিয়েই কিছু বলেনি, যেখানে ঢাবি’র ফাইনাল প্রফের সাপ্লি জানুয়ারিতে, সেখানে আমরা নিয়মিত রাবির ফাইনাল প্রফ ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখ থেকে কিভাবে দিবো? আবার প্রি প্রফ শেষ হবে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখের দিকে। আমরা তাহলে প্রি প্রফের পর ১০ দিন পড়াশোনা করে ফাইনাল প্রফ দিবো?’

‘তিনটা প্রফ একই সময়ে দিয়ে আসছি আমরা, তাহলে এখন কেন এতো ব্যবধানে (৫/৬ মাস আগে) আমরা ফাইনাল প্রফ দিব’, যোগ করেন তিনি?

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা অন্যান্য প্রফের মতো না। এ প্রফে পড়াশোনা অনেক বেশি, সকল সিনিয়রই এ বিষয়ে অবগত। তাছাড়া লকডাউনে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। এতে আমাদের অনেক শূন্যতাও রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কম সময়ে পাস করে হয় তো চিকিৎসক হওয়া যাবে। কিন্তু আগামী জানুয়ারি থেকে ৪/৫টা মাস পড়াশোনার সুযোগ পেলে নিজেদের যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।’

অন্যান্য মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ফাইনাল প্রফ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

যা বললেন রাবি ডিন

বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি না হলে পরীক্ষা পেছানো হবে না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিসিন অনুষদের ডিন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. নওশাদ আলী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেবো। তাদের কল্যাণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা না চাইলে পরীক্ষা নেবো না। তাতে আবার চিকিৎসক সংকট দেখা দেবে। 

রাবি মেডিসিন অনুষদের ডিন বলেন, ‘আমাদের এক বছর সেশনজট আছে। পরীক্ষাগুলো যদি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিই, তাহলে এটা ঠিক করতে তিন বছর সময় লেগে যাবে। এ পথে হাঁটলেও তিন বছরে এ জট ঠিক করা যাবে না। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগুচ্ছি। তিন বছরে ঠিক করে ফেলতে পারলে শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবনটা স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় এ সেশনজট আমাকে তিন বছর বয়ে বেড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে যাবে।’ 

‘এ ছাড়া ফাইনাল প্রফের সঙ্গে ইন্টার্নি সংকট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি এ পরীক্ষা যথাসময়ে নেওয়া না যায়, তাহলে হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংকট হয়ে যায়। এতে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় বাজে প্রভাব পড়ে। চলমান ইন্টার্নরা চলে যাওয়ার পর নতুনরা যেন যোগ দিতে পারে, সেজন্য নানা বিচার-বিশ্লেষণ করে এ পরীক্ষা এগিয়ে আনা হয়েছে’, যোগ করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।

শিক্ষার্থীদের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা পেছানো হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নওশাদ আলী বলেন, ‘তারা পরীক্ষা দিতে না চাইলে, পরীক্ষা প্রয়োজনে এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হবে। তবে বিএমডিসির নীতি অনুযায়ী, কারিকুলামে এক বছরের ইন্টার্নশিপের বাধ্যবাধকতা আছে। এক বছর ইন্টার্নশিপ যথাযথভাবে নিশ্চিত হলে ফাইনাল প্রফের অনেক শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়। চূড়ান্ত বর্ষের একটি সুবিধা হলো, এখানে যে ব্লক পোস্টিং, ওয়ার্ড অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা থাকে—ইন্টার্নশিপের সময় ওয়ার্ডে কাজের মধ্যে এ প্রশিক্ষণ হয়ে যায়, এটা আমরা চিন্তা করেছি। কাজেই এটা কোনো সমস্যা হবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ওদেরকে চিকিৎসক বানাতে। সেশনজট কমানোর জন্য, হাসপাতালে ইন্টার্ন সংকট দূর করার জন্য।’

চিকিৎসক হলেই বিসিএস-পোস্ট গ্রাজুয়েশনের পথ সুগম 

গত বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর সুফল পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকেই ৪২তম বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলো, অনেকের চান্সও হলো। অথচ অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পায়নি। তখন হয় তো সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাবি শিক্ষার্থী সবার আগে চিকিৎসক হতে পারায় শিক্ষার্থীরা তো বটেই, অন্য অনেকেই আমাদের প্রশংসা করেছেন। বাস্তবতা হলো, পরীক্ষা দিয়ে দিলেই তারা ডাক্তার হবে, বিসিএস ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে চান্সের পথ সুগম হবে। এটা পরীক্ষা না দিয়ে সম্ভব না।’

বিশেষ পরিস্থিতি না হলে পেছাবে না পরীক্ষা 

এর পরও পরীক্ষাদের দাবি কিংবা করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে দেবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. মো. নওশাদ আলী বলেন, ‘এরই মধ্যে পরীক্ষা তারিখ ঘোষণা হয়ে গেছে। ট্রেজারের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে। তিনি সম্মত আছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধিভুক্ত সব মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির উপস্থিতিতে একাডেমিক কাউন্সিল ও ফ্যাকাল্টিদের নিয়ে মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল আছে। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে পেছানোর সম্ভাবনা নাই। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও পিছিয়ে দেবো, কোনো সমস্যা নাই। তবে করোনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে যথাসময়ে আয়োজন করতে পারবো কিনা, এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে। অমিক্রনের ঢেউটা যদি দেশে বেড়ে যায়, তাহলে তো আর কিছু করার থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে যদি পরীক্ষা নেওয়া না যায়, তাহলে আবার চিকিৎসক সংকট দেখা দেবে।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত