২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০১:৫১ পিএম

ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে বছরে কোটি মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা

ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে বছরে কোটি মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা
গবেষণার তথ্য, কোনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ৯৮ ভাগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেই কাজ করতে পারছে না।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী ‘ইকোলাই’ ব্যাকটেরিয়া অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কোনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ৯৮ ভাগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেই কাজ করতে পারছে না।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার’র ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে’ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, গবেষণায় ১২টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা দেখা হয়।

এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যৎ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় বিপৎসংকেত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইনফেকশন প্রিভেনশনাল কন্ট্রোল (আইপিসি) বিভাগের সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘একটিমাত্র ব্যাকটেরিয়া বা ইকোলাই নিয়ে এ গবেষণা হলেও এর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের একটি চিত্র উঠে এসেছে। এ চিত্র জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় বিপদের সংকেত দিচ্ছে।’

গত ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক সপ্তাহ পালিত হয়েছে। এই সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য ছিল অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। ‘সচেতনতা ছড়িয়ে দিন, অকার্যকারিতা রোধ করুন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সপ্তাহটি পালিত হয়। এরই মধ্যে গত বুধবার এ গবেষণা প্রকাশিত হয়। এ গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার ওপর ১২টি বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। যেখানে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং বা পূর্ণ জিন নকশা উন্মোচনসহ অত্যাধুনিক গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে সম্পন্ন এই গবেষণার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসান মাহমুদ রেজা। এই প্রকল্পে আরও কাজ করেছেন সহযোগী অধ্যাপক প্রীতি জৈন ও অসীম কুমার ব্যাপারী।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে ২৫০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে বাছাইকৃত ১০০টি নমুনা বিশেষভাবে পরীক্ষা করেছেন। জৈব রাসায়নিক পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়েছে, সেগুলো হলো এমোক্সিসিলিন, জেন্টামাইসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, নরফ্লক্সাসিন, সেফুরক্সিম, ইমিপেনেম, মেরোপেনেম, ক্লোরামফেনিকল, এজিথ্রোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রাইমোক্সাজল এবং পিপেরাসিলিন-টাজোব্যাক্টাম। পরীক্ষায় দেখা গেছে, নমুনার ৯৮ ভাগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এমোক্সিসিলিন অকার্যকর। সেফুরক্সিম ও কোট্রাইমোক্সাজলের জন্য তা যথাক্রমে ৭৫ ও ও ৬২ ভাগ।

ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ওষুধের অকার্যকারিতা বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে বছরে প্রাণ হারাবেন প্রায় এক কোটি মানুষ, যাঁদের বেশির ভাগই হবেন এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। এসবের মূলে রয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক প্রয়োগ এবং সঠিক নিয়মে ওষুধ গ্রহণ না করা। বিপদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক-বিরোধী জিনের ছড়িয়ে পড়া। বিশেষত, ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বিভিন্ন বিটা-ল্যাকটামেস জিনের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

সংক্রমণ চিকিৎসায় ইমিপেনেম ও মেরোপেনেম অ্যান্টিবায়োটিক অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের শেষ ভরসা। নর্থ সাউথের গবেষণায় দেখা গেছে, ৩২ থেকে থেকে ৩৮ ভাগ নমুনার ক্ষেত্রে এসব অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করছে না।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত