কেন করোনাতেও ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা নেওয়া জরুরি?

মো. মনির উদ্দিন: করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা চতুর্থ দফায় পিছিয়ে যায়। বারবার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও পরীক্ষায় বসতে না পারায় প্রফ শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে প্রায় একটি বছর। তাদের সঙ্গে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থী প্রফ পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার্নশিপ শুরু করেছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিসিএসসহ সরকারি-বেসরকারি নানা চাকরিতে যোগদানের।
এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সেবার সনদ পেতে মরিয়া ঢাবির মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নিপতিত হয়েছেন দুশ্চিন্তার অতল অন্ধকারে। করোনা স্বাস্থ্য সংকট হওয়ায় এ মহামারির মধ্যেই ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, চিকিৎসক হওয়ার পর তাদেরকে তো করোনা রোগীদেরকেই স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা
দীর্ঘ দিন ধরে পরীক্ষার আয়োজন না হওয়ায় মানসিক চাপে থাকার কথা উল্লেখ করে এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন কায়েস মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা কখনোই একবারে ৪/৫ মাসের জন্য পেছায়নি। প্রতিবার ১ থেকে দেড় মাস করে পিছিয়েছে। ১ বছর আগে বলা হয়েছিল, নভেম্বরেই হবে, তারপর জানুয়ারি, মার্চ... এভাবে ৮ মাস পার হয়ে গেছে। ফলাফল নিরবচ্ছিন্ন মানসিক চাপ। প্রতিমাসে পরীক্ষার জন্য তৈরি হওয়া আর তারপর আগমুহূর্তে এসে প্রস্তুতি ভেস্তে যাওয়া যে কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় তৈরি করতে পারে তা অভাবনীয়? মেডিকেল প্রফ মানেই বিভীষিকা আর সেখানে যদি আট মাস ধরে অনিশ্চয়তায় কাটাতে হয়, তাহলে এর ফলাফল কি দাঁড়ায়? ভয়াবহ রকমের ডিপ্রেশন আর মারাত্মক স্ট্রেস। পেইনকিলার, এন্টিডিপ্রেস্যান্ট, সিডাটিভ, এংজিওলাইটিক ও এন্টাসিড। বিগত ৮ মাস ধরে এই ওষুধগুলো আমার নিত্যসঙ্গী। মেয়েদের অবস্থা তো আরো করুণ। স্ট্রেসের জন্য অনেকেই মেনোরেজিয়া, ডিসমেনোরিয়াতে ভুগছেন। তাহলে বলুন, যে পরিমাণ মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট ভোগ করে বেঁচে আছি, এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে? এ অবস্থায় আমাদের কি করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের ৯০% এর বেশি ভ্যাক্সিনেটেড। ঠিক সময়ে পরীক্ষা হলে আজ ইন্টার্ন হিসেবে অসংখ্য রোগীর মাঝে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতাম। সেখানে পরীক্ষা দেওয়া তো অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ। পদ্ধতির যাতাকলে পড়ে যদি আমাদের এই মানসিক যন্ত্রণা, ডিপ্রেশন আরো দীর্ঘায়িত হয়, তার ফলাফল হিসেবে অনেকেই হয়তো জীবনের পথ হারিয়ে ফেলবে কিংবা সত্যিকারের মানসিক রোগীতে পরিণত হবে। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ, দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নিয়ে এই প্রহসন থেকে মুক্তি দিন।’
একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকল কলেজের নাঈমা তাসনিম মেডিভয়েসকে বলেন, প্রথমত মহামারী এখন একটি অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। কার্যক্রম বন্ধ না করে বিকল্প অথবা সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এখন আমাদের জীবনে চলতে হচ্ছে। অথচ ফাইনাল প্রফের মতো একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চারবার পিছিয়ে দেওয়া হলো। এই পরীক্ষা দিয়েই আমাদের পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বেশি চলতে হবে কোভিড আক্রান্তদের নিয়েই। তাহলে শেষ একটি পরীক্ষা যার উপর শিক্ষার্থীদের জীবনের অনেক কিছু নির্ভরশীল, সেটিকে এভাবে স্থগিত করে রাখা আমার মতে মোটেই যুক্তিসংগত নয়। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই হলে অবস্থান করেন এবং প্রায় সবাই কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রাটা তুলনামূলক কমই থাকে। তারপরও কঠোর লকডাউনে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর বাসা থেকে চলাচলের জন্য কর্তৃপক্ষ চাইলেই আওতামুক্ত রাখা বা বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা যেত। জরুরি সেবাগুলো আওতামুক্ত আছে এবং এই কয়েকদিনে আমরা যা দেখেছি, সেনাবাহিনীর নজরদারিতে জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নির্দ্বিধায় চলাচল করতে পারছেন। সেভাবেই অনাবাসিক প্রফ পরীক্ষার্থীদের জন্য চলাচলের অনুমতিপত্র দেওয়া যেত। এভাবে প্রফ বারবার শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিতে আমাদের মানসিক অবস্থা যতটা বিপর্যস্ত তার চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা শেষ করা অনেকাংশে ভাল ছিল। আর সর্বশেষ যদি স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া, কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে তার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রাখা, এসব উদ্যোগ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা উচিত। আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, ১০০ বছরে পৃথিবীতে এমন মহামারী আসেনি। তাই এক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনতেই হবে, পরিবর্তনের মধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার ধারাটা ধরে রাখতে হবে। সবকিছু চালু রেখে শিক্ষার্থীদের জীবন আটকে দেওয়া অযৌক্তিক।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ আব্দুল্লাহ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ফাইনাল প্রফ হওয়ার কথা নভেম্বর ২০২০ এ। আমরা তখন থেকে মোটামুটিভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকি। আর ফাইনাল প্রফের প্রস্তুতি নেওয়া কতটা কষ্টসাধ্য, সেটা যারা ফাইনাল প্রফ পাস করেছেন তারাই কেবল জানেন। যাই হোক পরীক্ষার রুটিন আসে, পিছিয়ে যায়। আবার প্রস্তুতি নিই, আবার পিছিয়ে যায়। এই নিয়ে চারবার এমনটা হলো আমাদের সঙ্গে। কেউ কি আমাদের কথা একটু ভেবে দেখেছেন, চারবার প্রস্তুতি নেওয়া মানে চারবার ফাইনাল প্রফ দেওয়ার সমান কষ্ট। কষ্টের কথা বাদই দিলাম। কেউ কি ভেবে দেখেছেন শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার কথা। মানসিকভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থী দিশেহারা। একই সেশনের স্টুডেন্ট হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরা ইন্টার্নশিপে আর আমরা পরীক্ষার একটা তারিখের জন্য পথে পথে ঘুরছি।’
জানতে চাইলে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চতুর্থবারের মত এমবিবিএস ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা স্থগিত করা, পরীক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো মানসিক ট্রমা। আমরা এরই মধ্যে ছয় মাস পিছিয়ে গিয়েছি। আমাদের অনেকেই হতাশায় ভুগছেন। বারবার পরীক্ষার রুটিন দিয়ে পরীক্ষা শুরুর একদিন অথবা দুইদিন আগে করোনার কথা বলে পরীক্ষা স্থগিত করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যেখানে হাসপাতাল খোলা, স্যাররা নিয়মিত হাসপাতালে আসছেন, আউটডোর-ইনডোরে রোগী দেখছেন। সেখানে পরীক্ষা নিতে অসুবিধা কোথায়? আমাদেরকে ডাক্তার হয়ে যেহেতু করোনা রোগী দেখতে হবে সেক্ষেত্রে করোনার কথা বলে পরীক্ষা না নেওয়ার কোন কারণ দেখি না। আমরা আর পেছাতে চাই না, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।’
সম্পন্ন দুই ডোজ টিকা নেওয়া
অনতিবিলম্বে প্রফ পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মুর্তজা শাহরিয়ার মেডিভয়েসকে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘দিন যত যাবে, শিক্ষার্থীরা তত পেছাতে থাকবে। ক্লিনিক্যাল নলেজ প্র্যাক্টিসের সাথে সাথে বাড়ে। এতদিন ওয়ার্ড থেকে দূরে থাকায় আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি বাড়ছে। দ্রুত প্রফ পরীক্ষা নিয়ে আমাদেরকে প্রফেশনাল লাইফে পদার্পণের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। পরীক্ষার পরে আমাদেরকে এই করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবাই করতে হবে। যেহেতু দুই ডোজ টিকা অধিকাংশেরই দেওয়া হয়ে গেছে, সেহেতু করোনা পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সব দিক বিবেচনা করেই পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া উচিত।
কেন এই মুহূর্তে প্রফ পরীক্ষা জরুরি
কেন এই মুহূর্তে প্রফ পরীক্ষা আয়োজন করা জরুরি জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শাহরিয়ার নবী মেডিভয়েসকে বলেন, ‘একাডেমিক ক্যালেন্ডার নিয়মিত রাখা জরুরি। প্রায় সকল কিছুই চলমান আছে। তাই প্রফ পরীক্ষা বন্ধ রাখা একেবারেই অর্থহীন ও আত্মঘাতী। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা বেশ পিছিয়ে গেছে। শিক্ষা কার্যক্রমটা ধরে রাখতে চাইলে অনতিবিলম্বে পরীক্ষার আয়োজন করতেই হবে। যেহেতু এই করোনার মধ্যেই অন্যান্য প্রফ পরীক্ষা আমরা নিতে পেরেছি। সেহেতু ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা কেন বারবার পেছাবো?’
তিনি আরও বলেন, ‘এত দিন শিক্ষার্থীরা করোনাসহ নানা কারণে পরীক্ষা দিতে অনিহা প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু এখন করোনা নিয়ে তাদের মধ্যে আগের মতো ভয়ভীতি নাই। বাস্তবতাকে তারা বুঝতে পারছে। এভাবে চলতে চলতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার থেকে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারা পরীক্ষা দিতে প্রবলভাবে আগ্রহী। কারণ পাস করার পাশাপাশি কর্মজীবনে প্রবেশ করাসহ অনেক কিছু এর সঙ্গে জড়িত। যেহেতু অন্য প্রফ পরীক্ষাগুলো খুব সুন্দরভাবে হয়েছে, সেহেতু এই পরীক্ষাও ভালোভাবে আয়োজনের জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
ডা. শাহরিয়ার নবী বলেন, করোনা একটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংকট। আর স্বাস্থ্য খাতের যে কোনো সংকটে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাই সম্মুখযোদ্ধা। অতএব করোনার কারণে ভাবী চিকিৎসকদের চূড়ান্ত পরীক্ষা বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নাই। তারা ডাক্তার হবে, আর পাস করার পরই কাজই হবে করোনার চিকিৎসায় মনোনিবেশ করা। সুতরাং করোনার কারণে তাদের পরীক্ষা এড়ানো বা পেছানোর সুযোগ নাই। করোনার মধ্যে তাদের পরীক্ষা আয়োজন করা হলে সেটা হবে প্রফের সঙ্গে আরেকটি পরীক্ষা, যেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আসলেই প্রত্যেক মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি।
ইন্টার্নশূন্য হচ্ছে হাসপাতালগুলো
ঢাবি মেডিসিন অনুষদের ডিন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে প্রফ পরীক্ষার আয়োজন না হওয়ায় দেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আগামী কয়েক মাস পরে এ শূন্যতা গোটা স্বাস্থ্য খাততে ভোগাবে। পরের ব্যাচের শিক্ষার্থী চলে আসছে। নতুন সেশনের শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব কারণে পরীক্ষা আয়োজন করা জরুরি।
হাসপাতালগুলো ইন্টার্নশূন্য হতে চলেছে জানিয়ে কিশোরগঞ্জ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী বিজয় সাহা বলেন, ‘যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল প্রফ পরীক্ষাও শেষের পথে; সেখানে একই দেশে বসবাসরত একই ভর্তিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আসা অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এভাবে বারবার পিছিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? শুধু আমরা যে এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছি সেটা না, আমাদের হাসপাতালগুলোও কিন্তু ইন্টার্নশূন্য হচ্ছে। সেটা মেডিকেল কলেজগুলোর স্বাস্থ্য সেবার মানকেও অনেকখানি কমিয়ে দিবে।’
একই সুর ঢাকা মেডিকেল কলেজের (কে-৭৩) ব্যাচের জাহিনুল আনাম ফায়েদের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, করোনায় সব পরীক্ষা থেমে থাকলেও ফাইনাল প্রফ পরীক্ষাকে অবশ্যই আলাদাভাবে আমাদের দেখতে হবে। অধিকাংশ মেডিকেল অতি শীঘ্রই ইন্টার্ন সংকটে পড়তে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা দেরি করার কোন কারণ নেই। করোনাতেও মেডিকেল স্টুডেন্টরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অবশ্যই দিতে পারে।
আট মাস ছাত্রাবাসে বন্দি বিদেশি শিক্ষার্থীরা
পরীক্ষা আয়োজনের ঘোষণার পর থেকে বিগত আট মাস ধরে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থীরা। করোনায় গত বছর ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো রকম নির্দেশনা ছাড়াই নিজ দেশে পাড়ি জমান বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থীও ক্যাম্পাস ত্যাগ করেননি। ওই সময় থেকে হলে অবস্থান করা এসব শিক্ষার্থী একটি জায়গায় মাসের পর অবস্থানের কারণে তারা মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত। তাই দ্রুততম সময়ে পরীক্ষার আয়োজন করে শ্বাসরুদ্ধকর এ পরিস্থিতি থেকে তাদের উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক রাজধানীর এনাম মেডিকেল কলেজ ও আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত নেপালি, কাশ্মীরি ও ভারতীয় একাধিক শির্ক্ষাথীর মেডিভয়েসের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, চিকিৎসক হওয়ার সনদ লাভের আশায় প্রায় এক বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন তারা। এক দিকে স্বজনদের থেকে দূরে থাকা অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা তাদের অস্বাভাবিক জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বাধা কোথায়?
পরীক্ষা আয়োজনে বাধা কোথায়—জানতে চাইলে ঢাবি ডিন বলেন, ‘ডিন থেকে অফিস থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে। প্রশ্ন সব জেলায় পৌঁছেও গেছে। জেলা পর্যায়ে প্রশ্নগুলো ট্রেজারিতে আছে। ওই জায়গা থেকে প্রশ্নগুলো কেন্দ্রে নিয়ে আসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা জরুরি। আমাদের কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে হবে। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব না। তাই তাঁদের সহযোগিতা প্রত্যাশ করছি।’
এই মুহূর্তে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘অবশ্যই হওয়া উচিত। এ পর্যন্ত আমাদের যতদূর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাহলো: যত দ্রুত সম্ভব ফার্স্ট ও ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা হয়ে যাবে। ফার্স্ট প্রফের জন্য তিন মাস সময় দিতে হবে, সেজন্য আমরা তাদেরকে আগে নিয়ে আসতে চাই। আর ফাইনাল প্রফ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগের ঘোষিত সম্ভাব্য সময়ে ডিজি মহোদয় চিন্তা করছেন। পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সবাই প্রস্তুত আছেন। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ডিন মহোদয় পর্যন্ত প্রস্তুত হয়ে আছেন। এমনকি শিক্ষার্থীরাও পূর্ণ প্রস্তুত। পরীক্ষার সকল সিদ্ধান্ত ডিন অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই পরীক্ষা নিতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার এখতিয়ার নেই। এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
তবে এ ব্যাপারে সাবধানী জবাব স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা বন্ধ করেনি জানিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ডিজি বলেন, ‘এটা আমার ব্যাপার না। পরীক্ষা নেয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁরা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চান, তাহলে আমরা করি। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডিন অফিস চিন্তা করবে, পরীক্ষার আয়োজন করা উচিত নাকি উচিত না। আমরা সব সময় চাই, সেশন ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।’
-
২৮ মার্চ, ২০২৩
-
১৬ জানুয়ারী, ২০২২
শিক্ষাকাল পূর্ণ হওয়ার আগে রুটিন
ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা পেছানোর দাবি রাবির মেডিকেল শিক্ষার্থীদের
-
১০ নভেম্বর, ২০২১
-
২৪ অক্টোবর, ২০২১
-
১৮ অক্টোবর, ২০২১
-
১৮ অক্টোবর, ২০২১
-
০৮ অগাস্ট, ২০২১
-
০৩ অগাস্ট, ২০২১
-
৩১ জুলাই, ২০২১
-
১৭ জুলাই, ২০২১