ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধে বিএসএমএমইউর গাইডলাইন প্রকাশ
‘অহেতুক ভয় পাবেন না, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধযোগ্য’
মেডিভয়েস রিপোর্ট: ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অহেতুক ভয় পাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য।
আজ বুধবার (২ জুন) বিএসএমএমইউর ডা. মিল্টন হলে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক গাইডলাইনের প্রকাশনা’ অনুষ্ঠানে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অহেতুক ভয় পাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য। হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আবশ্যক। সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ছত্রাক বিরোধী ওষুধ বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ জরুরিভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পাশিপাশি ঝুঁকিসমূহ যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে আক্রান্ত অঙ্গে সার্জারি করতে হতে পারে বা কোনো কোনো সময়ে তা কেটে ফেলে দিয়ে জীবন রক্ষা করতে হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারীর সঙ্গে ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রাদূর্ভাবের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে কয়েকজন রোগী পাওয়া গেলেও এই মুহূর্তে ভারতের মত মহামারীর আশঙ্কা নেই। বিএসএমএমইউর বর্তমান প্রশাসন সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায়, বিশেষ করে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আইসিইউ ও বেড সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়িয়ে, হাইফ্লো অক্সিজেনের সরবরাহ সম্প্রসারিত করে ও পূর্ণ উদ্যমে ভ্যাক্সিনেশন এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে সরকার, চিকিৎসক সমাজ, সাংবাদিক ও জনগণকে সঠিক ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করতেই বিশ্ববিদ্যালয়েরর পক্ষ থেকে গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বিশেষ ধরণের অনুবীক্ষনিক ছত্রাকের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগকে বোঝায়। এর মধ্যে রাইজোপাস প্রজাতি সবচাইতে বেশি দায়ি তবে অন্যান্য জীবানু যেমন মিউকর, কানিংহামেলা, অ্যাফোফিজোমাইসেস, লিচথিমিয়া, সাকসেনিয়া, রাইজোমুকর এবং অন্যান্য প্রজাতিও এই রোগের অন্যতম কারণ। এই ছত্রাক সাধারণত মাটি পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে থাকে তবে সংক্রমণ ক্ষমতা এতই কম যে প্রতি লাখে মধ্যে মাত্র এক থেকে দুই জন সংক্রমিত হতে পারে। সর্বোচ্চ লাখে ২০-৩০ জন হতে পারে।
এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বিশেষত কিটো অ্যাসিডোসিস আক্রান্ত রোগীরা, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী,অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, গর্ভবতী মহিলা, অত্যাধিক মাত্রায় বা অপ্রয়োজনীয় স্টেরয়েড গ্রহণ করা, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগীরা আক্রান্তের ঝুঁকি থেকে থাকেন। এছাড়াও চরম অপুষ্টিজনিত রোগী, চামড়ার গভীর ক্ষত ও পোড়া ঘায়েও এই রোগ হতে পারে। কোভিড ভাইরাসে দীর্ঘমেয়াদে আক্রান্ত বা চিকিৎসাধীন রোগী এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, মিউকর ছত্রাকের হাইফাগুলো মানুষের রক্তনালীগুলিতে আক্রমণ করে, যা থেকে থ্রম্বোসিস ও টিস্যু ইনফার্কশন, নেক্রোসিস এবং পরিশেষে গ্যাংরিন তৈরি করে। সুস্থ মানুষের রক্তের শ্বেতরক্তকণিকা বা নিউট্রোফিল এই ছত্রাকের বিরুদ্ধে মূল প্রতিরক্ষার কাজ করে থাকে। এ অবস্থায় ডায়াবেটিস, স্টেরয়েড ব্যবহারকারী ও এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। আক্রান্ত অঙ্গের উপর ভিত্তি করে মিউকরমাইকোসিস রোগটি ছয় ধরণের হলেও রাইনো-অরবিটাল-সেরেব্রাল রোগ নাক, নাকের ও কপালের সাইনাস, চোখ ও ব্রেইন বা মস্তিস্কের সংক্রমণ করে বলে এটাই সবচাইতে বিপদজনক। তাছাড়া ফুসফুসীয়, আন্ত্রিক, ত্বকীয় সংক্রমণও হতে পারে। আক্রান্ত অংশ আর নাকের শ্লেষ্মা, কফ, চামড়া ও চোখ কালো রং ধারণ করে বলে একে কালো ছত্রাক নামে ডাকা হয়।
আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা না করতে পারলে শতকরা ৫০ ভাগ থেকে ৮০ ভাগ রোগী মৃত্যুবরণ করে থাকে। এছাড়া সংক্রমণের মৃত্যুর হার ১০০ ভাগের কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ, নাক কান গলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী প্রমুখ।
-
০২ জুন, ২০২১
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধে বিএসএমএমইউর গাইডলাইন প্রকাশ
‘অহেতুক ভয় পাবেন না, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধযোগ্য’
-
২৮ মে, ২০২১
-
২৫ মে, ২০২১