১৭ মার্চ, ২০২১ ১০:১৫ এএম

মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ

মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ
ছবি: সংগৃহীত

মেডিভয়েস রিপোর্ট: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মদিন আজ। প্রতি বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে আজ একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এবার জাতির পিতা শেখ মুজিুবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী হিসেবে মুজিববর্ষ জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবর রহমান ১৯২০ সালের এদিন তৎকালীন ভারতবর্ষের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা শেখ সায়েরা খাতুন। লুৎফর-সায়েরা দম্পতির এ সন্তানই পরে এদেশের মানুষের মুক্তির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে স্ব-পরিবারে নিহত হন।

পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু তার গতিশীল নেতৃত্বে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেন। তার নির্দেশনায় দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

২০২০ সাল ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী। বছরব্যাপী জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান সরকারি এবং বেসরকারিভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু করোনার প্রকোপে অনেক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়, যা এবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া মুজিববর্ষের কলেবরও কিছুদিন বাড়ানো হয়েছে। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালিত হবে।

মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার পালিত হতে যাচ্ছে টানা ১০ দিনের অনুষ্ঠান। যাতে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিদেশি অতিথিরা অংশ নেবেন। মুজিব চিরন্তন শিরোনামে এ ১০ দিনের অনুষ্ঠান চলবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে সংবাদপত্রগুলো। অনলাইন মাধ্যম এবং টেলিভিশনে বিশেষ রিপোর্ট এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দেশব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি আয়োজিত হবে বিশেষ প্রার্থনা সভা। এতিমদের মধ্যে বিতরণ করা হবে উন্নতমানের খাবার।

বুধবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ হবে। যাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিকাল সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আগামী রবিবার (২১ মার্চ)  সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিব শতবর্ষ উৎযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ১০ দিনের কর্মসূচিতে থাকছে-১৭ মার্চের আয়োজনের থিম ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়। এদিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহীম মু. সালেহ উপস্থিত থাকবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভিডিওবার্তা দেবেন।

এ ছাড়া দেশব্যাপী মসজিদে দোয়া মাহফিল ও মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে। এ সময়ে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্তপর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।

এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বেশিদিন দেশ গঠনের কাজ করে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক