১১ মার্চ, ২০২১ ০৫:৩৩ পিএম

সরকারিভাবে স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসি-কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ জরুরি

সরকারিভাবে স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসি-কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ জরুরি
অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ রফিকুল আলম। ছবি: সাহিদ

দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনি রোগের এ প্রকট অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়ে থাকে। চলতি বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘কিডনি রোগে সুস্থ থাকুন’। এ দিবসের বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য মেডিভয়েস মুখোমুখি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুন্নাফ রশীদ ও সাখাওয়াত আল হোসাইন। মেডিভয়েস পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

মেডিভয়েস: সার্বিকভাবে দেশে কিডনি রোগের কি অবস্থা?

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম: অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কিডনি রোগের ভয়াবহতা উল্লেখযোগ্য। অসংক্রামক রোগের মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ রোগের মাত্রা কমতে থাকে, পক্ষান্তরে অসংক্রামক রোগের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের দেশেও এ ধরনের রোগের সংখ্যা বাড়ছে।

দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনও না কোনও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগী বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এ দুটিই হচ্ছে কিডনি রোগের প্রধান কারণ।

তৃতীয় কারণ হচ্ছে নেফ্রাইটিসজনিত রোগ। এর মাধ্যমে কিডনির যে ছাকনি থাকে সেটাতে প্রদাহ হয়। যেটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করতে পারলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি ফেইলিউরে পতিত হয়, যেটাকে আমরা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলি।

এটি ভয়াবহতার আরেকটি কারণ হচ্ছে ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ। প্রথমেই যদি কিডনি রোগ শনাক্ত করা যায় বা প্রতিহত করা যায় এবং জনগণকে সচেতন করা যায়, তাহলে এর চিকিৎসা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। অসচেতনতার কারণে দিন দিন কিডনি রোগী বেড়ে যাচ্ছে। 
যত রোগীর ডায়ালাইসি দরকার তার মধ্যে মাত্র ১০ ভাগকে আমরা ডায়ালাইসিস দিতে পারি। তাদের মধ্যে তিন থেকে চার মাসের মাথায় ৭ থেকে ৮ ভাগ রোগী চিকিৎসা থেকে ঝরে পড়ে। কারণ নিজের টাকায় দীর্ঘদিন খরচ চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। এক্ষেত্রে সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরসহ অন্যান্যদেরকে এগিয়ে আসা দরকার। 

মেডিভয়েস: খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের সতর্কতা  অবলম্বন করা উচিত?

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম: আমাদের মতো দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজাল একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি পান করা; খাবারে ফলমূল, সবজি ও প্রয়োজনীয় আমিষের আধিক্য থাকবে। এই ধরনের সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কিডনি রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সমম্ভব। জাংক ফুড গ্রহণের মাধ্যমে যে স্থুলতা বা ওবিসিটি হয়ে থাকে সেটি কিডনি রোগের অন্যতম একটি কারণ।

তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে বা স্থায়ী হয়ে গেলে খাদ্যের চার্টের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এদের ক্ষেত্রে অমিষের পরিমাণ পরিমিত গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ তাদের খাবারের ক্ষেত্রে সম্পুর্ণ ভিন্ন নির্দেশনা থাকে।

মেডিভয়েস: তামাকজাত দ্রব্য কিডনি রোগের ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকি?

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম: একটা সময় ধুমপান হৃদরোগ এবং লাঞ্চ ক্যান্সারের জন্য চরম মাত্রায় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধুমাপন কিডনি রোগেরও অন্যতম কারণ। এছাড়া স্থুলতা, ধুমপান, ব্যথানাশক ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত সেবন ইত্যাদি কিডনি রোগের জন্য ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে।

মেডিভয়েস: কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর বিপরীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপাত কেমন?

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম: দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনও না কোনও কিডনি রোগে আক্রান্ত। তবে সে অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। দেশে বর্তমানে কিডনি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা আনুমানিক দুই থেকে আড়াইশোর মতো রয়েছে। তবে প্রতিবছরই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মেডিভয়েস: দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হার এবং এর প্রতিরোধে সরকারের কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত?

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম: দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার নতুন কিডনি রোগী যোগ হচ্ছে। এই সংখ্যা জাতীয় পর্যায় থেকে প্রাপ্ত না হলেও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে পাপ্ত সংখ্যাতে এমনটিই জানানো হয়েছে।

আমি মনে করি, সরকার কিডনি রোগ প্রতিরোধে সঠিক ডিরেকশনে আছে। ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর জন্য ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ডায়ালাইসি মেশিন, কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীদের জন্য যে ব্যয়বহুল ওষুধপত্র এবং ডায়ালাইসিস ফ্লুইডসহ অন্যান্য যেসব আনুষাঙ্গিক বিষয় রয়েছে—সেগুলো সহজ করা জরুরি। এছাড়া ডায়ালাইসিস ফ্লুইড দেশেই তৈরির অনুরোধ করছি। তবে যতদিন ওষুধপত্রসহ এগুলো আমদানি করতে হচ্ছে ততদিন যেন এটার উপর শুল্ক মওকুফ করা হয়।

এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেন নামমাত্র মূল্যে ডায়ালাইসি এবং কিডনি প্রতিস্থাপন করা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করবো। এটি করতে পারলে আমাদের জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।

এর বাইরে যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আওতায় আনতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে এনজিও, যুবসংগঠন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার কাজে লাগাতে পারে। এর ফলে আমরা সকল রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবো।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত