বিশ্বের প্রথম বাংলা ভাষায় মেডিসিন রেফারেন্স বই

সাখাওয়াত আল হোসাইন: বিশ্বের প্রথম বাংলা ভাষায় মেডিসিন রেফারেন্স বই লিখেছেন অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান। দীর্ঘ চার বছরের সাধনার পর বাংলা ভাষায় মেডিসিন রেফারেন্স বইটি লেখা সমাপ্ত করেন তিনি।
আলোচিত ওই বই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক মেডিভয়েসকে বলেন, ছাত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে ও পাঠদান করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে যে, আধুনিককালের অধিকাংশ ছাত্র যতই ইংরেজিতে জিপিএ-৫ অর্জন করুক না কেন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার তাদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কাজেই অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে এই ভাষা পড়া, বুঝা ও লেখা অত্যন্ত কঠিন। অনেকসময় অনেক রোগ সম্পর্কে বুঝতে না পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা ওই সম্পর্কে বর্ণিত পাঠের উল্টো বা ভুল বুঝে থাকে। এইভাবে বিদেশি ভাষায় মেডিসিন চর্চা করতে গিয়ে রোগ বালাই, তার লক্ষনাদি ও চিকিৎসা সম্পর্কে সম্যক ধারনার অভাবে ওই ছাত্র ভবিষ্যতে ভাল চিকিৎসক হতে পারে না। কাজেই ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি যদি কোনো বাংলা ভাষায় সহায়ক পুস্তক হিসেবে থাকে তবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ বুঝতে খুবই সুবিধা হবে। এই আশাবাদ নিয়ে মেডিসিনের বাংলা বই লেখার কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, জাপান, জার্মান, রাশিয়া ও চীন প্রভৃতি দেশে যেরূপ মাতৃভাষার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা হয়। তদ্রুপ অন্তত এমবিবিএস কোর্স পর্যন্ত বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা হলে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিপুলভাবে উপকৃত হবে।’
বইটি দুটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মূলনীতি ও চিকিৎসার প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিভিন্ন অঙ্গতন্ত্র ও সেগুলোর রোগসমূহ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক বলেন, ‘বাংলায় বইটি লেখার পূর্বে ইংরেজিতে রচিত অনেক মেডিসিনের বইপত্র ও জার্নাল পড়েছি কিন্তু বাংলা ভাষায় একটিও মেডিসিনের বই পাইনি। বইটি সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। এজন্য দূর্বোধ্য বাংলা শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করে সহজ বাংলা শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। যে সমস্ত ইংরেজি শব্দের বাংলা অনুবাদ কোথাও পাইনি বা অনুবাদ করতে পারিনি পাঠকের সুবিধার্থে সেগুলো অবিকল ইংরেজি ভাষায় রেখে দিয়েছি, বিশেষভাবে মেডিকেল টার্মগুলো।’
একনজরে ডা. আজিজুল হক
অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক ১৯৫৮ সালে রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তৎকালীন কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ মিডিয়াম অ্যান্ড প্রিপারেটরি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। মাধ্যমিক স্তরে তিনি রাজশাহী সরকারী ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় স্থান লাভ করেন। রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও একই বোর্ড থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৮তম স্থান অধিকার করেন তিনি।
ছোটবেলায় পিতা মারা যাওয়ায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি নিজ জেলার বাইরে বা দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা না করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ১৯৭৮ সালে ভর্তি হন। তিনি ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস পাস করেন।
১৯৮৩ সালে চাকরিতে যোগদান করে বিভিন্ন ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যপ্রকল্প ও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এ চিকিৎসক। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সময়ে ইনডোর মেডিকেল অফিসার, রেজিষ্ট্রার, আরপি (মেডিসিন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রেজিস্ট্রার থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৯৮ সালে তদানিন্তন আইপিজিএমআর (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এমডি (ইন্টারনাল মেডিসিন) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করেন।
এরপর তিনি ২০০০ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন এবং ২০০৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তিনি সর্বশেষ মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে অবসরে যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক।
অবসরের পর তিনি বাংলা ভাষায় মেডিকেলের বই লেখায় মনোনিবেশ করেন। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী নানকিং দরবার হলে তাঁর এই কাঙ্ক্ষিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়।
-
২২ অগাস্ট, ২০২৩
-
১৬ অক্টোবর, ২০২২
-
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
-
৩০ অগাস্ট, ২০২২
-
১২ অগাস্ট, ২০২২
-
২২ মার্চ, ২০২২
-
১৭ জানুয়ারী, ২০২২
-
২৩ ডিসেম্বর, ২০২১