মো. এহসানুল হক অন্তু

মো. এহসানুল হক অন্তু

প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ,
সেশন-২০১৮-১৯


৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:০৬ পিএম

অতৃপ্ত যাত্রা

অতৃপ্ত যাত্রা
ছবি: প্রতীকী

মা, এই ক্রিকেট ব্যাটটা কিনে দাও না?
- যদি অংকে ১০০ পাস তবে দিব।
বাবা, চলনা আজকে শিশুপার্কে যাই?
- না, তোমার তো হোমওয়ার্ক সব বাকী। যাও আগে কমপ্লিট কর।
মা, সবাই খেলছে  মাঠে। আমি একটু যাই?
- কিসের খেলাধুলা? যাও, পড়তে বসো। পাশের বাসার ভাবীর ছেলে ১০০ তে ১০০ পেয়েছে। আর তুই মাত্র ৯৭ পেয়েছিস। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না।

মুখ কালো করে বসে আছে সবির। ইস, এমন একটা বিকেল, সবাই মাঠে খেলছে আর সে ৩ মার্ক কম পাওয়ায় বকাঝকা খাচ্ছে। সব দোষ‌ মাস্টার মশাইয়ের, কেন কেটে দিল নম্বরটা। মনে মনে ভাবছে ‘স্যার জানেন ৩ নম্বর কম পাওয়ায় আজকে মাঠে যেতে পারিনি? আমার বাকি বন্ধুরা  ঠিকি বাইরে, আর আমি বই সামনে বসে আছি।’

সেদিন সবিরের খালাতো ভাইয়ের জন্মদিন ছিলো। এবার বেশ মজা করবে, ভাইয়ের জন্য আগেই গিফট কিনে রেখেছিল। ঠিক ওইদিনই হোম টিউটরের আসার কোনো দরকার ছিল? ‘সবির,স্যারের পড়া ঠিকমতো কমপ্লিট করে, তারপর ম্যাথ গুলো করবে। আমি তোমার খালামনির বাসা থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো।’ এই কথা বলে মা চলে গেলো।

বুকটা ভীষণ ভারী হয়ে গেল। খুব কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইস, যদি এমন হতো আমিও কেক কেটে ভাইয়ের গালে মাখিয়ে দিচ্ছি, আর সবাই চিৎকার করে বলছি, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ । কোনোভাবে যদি যেতে পারতাম। এসব ভাবতে ভাবতে দু ফোঁটা জল চোখ বেয়ে নিচে চলে গেলো।

সবির এতদিনে বুঝতে শিখে গেছে, মানুষের চাওয়া পাওয়া হয়তো নির্ভর করে শুধু ভালো রেজাল্টের উপর।

মা এবাব যদি জিপিএ ৫ পাই? বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার যেতে দিবে? 
- আচ্ছা, আগে পেয়ে দেখাও। তারপর দেখব।

সবিরের এ সুযোগ‌ কোনোমতেই হাতছাড়া হওয়া যাবে না। জীবনের সমস্ত শক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে চলছে পড়াশোনা। যেভাবেই হোক শান্তি দরকার, ভালো রেজাল্ট দরকার। তবেই তো খাঁচার পাখি উড়াল দিতে পারবে। পরিক্ষা হলো, রেজাল্ট হলো। পেল উড়ার টিকিট, মানে জিপিএ-৫।

দোকানে গিয়ে ...অ্যাই মামা, সিগারেট আছে? দাও তো এক প্যাকেট?
- বন্ধুরা বিস্ময়ে, সবির কি করছিস?
আরে ব্যাটা, শান্তি খুঁজি। আমার শান্তি দরকার।
- তাই বলে, এসব খাবি?
হ্যা রে, মাত্র ৩ দিনেই শান্তির বাতাস পাব। তারপর আবার বদ্ধ ঘরে। এ জীবনে এটাই প্রথম বাসা থেকে একা বের হওয়ার আনন্দ। তোরা বুঝবি নাহ।

আসলেই তো, জীবনের শৈশবে দুরন্ত কিশোরের ছটফট, দৌড়ে নদীতে ঝাঁপ, গাছের মগডালে উঠা, ভিডিও গেমসে কাটাকাটি, সিসিমপুরের দিনগুলো সে পায়নি। কিভাবে বুঝবে একটা ভালো কাজকে, চারদিকের হাজারো মন্দ হুক লাগিয়ে ধরে রাখে।

সবির এখন মাঝেমধ্যেই বাসা থেকে বের হয় প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য। মাসের শুরুর চারদিন আর শেষ চারদিন প্রাইভেটে গেলেও মাঝের দিনগুলোতে উধাও। মা-বাবা জানে, ছেলে প্রাইভেটে। ভালো রেজাল্টেই শান্তি , আর ছেলে জানে  শান্তির পথ এখন ভিন্নদিকে টার্নওভার করেছে।

সব অতিরিক্তই নাকি খারাপ? হ্যা, অতিরিক্ত মিথ্যা আর অতিরিক্ত ফাঁকি বাজির আসনে বসে গেছে সবির। বাবাকে ফিজিক্সের টিউশন ফি দিতে বলে, মাকে বলে পদার্থ বিজ্ঞান স্যারের টাকা দাও। সব টাকা এক করে ভিতরে ভিতরে একটা হাসি দেয়। আজ বেশ শান্তি পাব রে! অনেকদিন পর  দিলে বহুত খুশি। 

ধীরে ধীরে ভয়ংকর জগতে ঢুকে গেছে সবির। বাবা মায়ের অজান্তে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মাদকের চুড়ান্ত পর্যায়ে এখন সে। এলাকার ডিলার হিসেবে পরিচিত পাওয়ার ঠিক আগে আগেই, পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত হয়ে কারাগারে। আর সমস্ত পত্রিকা, মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ: ‘বিশিষ্ট মাদকব্যবসায়ী সবির গ্রেফতার।’

সেদিনের অংকে ৩ নম্বর কমের লজ্জাটায় আজ কি তাহলে কাল হয়ে দাঁড়াল? নাকি অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর ব্যর্থতার ভয়ে এই রেজাল্ট উপহার দিল? এখন সম্মান কতটুকু আছে সবিরের বাবা-মায়ের? প্রশ্নটা থেকেই গেল।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত