
ডা. রীপা চক্রবর্তী
এম এস সি পাব্লিক হেলথ (অন কোর্স)
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিন
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:৩৬ পিএম
করোনা ভ্যাকসিন: আবিষ্কার আর কতদূর?

একটি ভ্যাকসিনই আপাতত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভরসা বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীতে স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা, গুটি বসন্ত, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা এরকম আর কোন মহামারির সময় একটি প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য মানুষ এতটা সংগ্রাম করেনি।
সারা বিশ্বের প্রায় দুইশটির মতো কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে মানবদেহে ট্রায়ালে এগিয়ে রয়েছে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। ছয়টি ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
কিন্তু জটিল এই প্রক্রিয়া সফল হলেও মহামারি পুরোপুরি দূর হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভাইরাসের মিউটেশনের কারণেই বার বার নতুন টিকার প্রয়োজন হবে।
যেকোনো প্রতিষেধক তৈরির জন্য আসলে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। তবে কোভিড-১৯ ঠেকাতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা নিরাপদ ও রোগ ঠেকানোর ক্ষেত্রে সম্ভাবনাপূর্ণ!
করোনাভাইরাস ঠেকাতে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকাটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ এবং সেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে তুলতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। প্রায় ১,০৭৭ মানুষের ওপর পরীক্ষার পর দেখা গেছে, এই টিকার ইনজেকশন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং হোয়াইট ব্লাড সেল বা শ্বেতকণিকা তৈরি করে, যা শরীরের ভেতর করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
একে একটি বড় রকমের সম্ভাবনাপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তবে এটি পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারবে কি-না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। এ নিয়ে ব্যাপক আকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও চলছে। যুক্তরাজ্য এর মধ্যেই ১০ কোটি টিকার জন্য চাহিদা জানিয়েছে।
টিকা কীভাবে কাজ করে?
ChAdOx1 nCoV-19 নামের এই টিকাটি তৈরি করতে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। শিম্পাঞ্জির শরীরের সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, এমন একটি ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন করে এই টিকাটি তৈরি করা হচ্ছে। এটাকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে এটা মানব শরীরে সংক্রমণ তৈরি না করে। এটাকে করোনাভাইরাসের কাছাকাছি একটা সাদৃশ্যও দেয়া হয়েছে।
যে টিকাটি তৈরি করা হচ্ছে, তার ভেতরে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিনগত বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে (যে অংশটি আমাদের কোষকে আক্রমণ করে) দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মানে হলো, টিকাটি করোনাভাইরাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তখন শরীরের ভেতর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বুঝতে পারে যে, কীভাবে করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে পরাস্ত করা যাবে।
অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল কী?
করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অ্যান্টিবডির দিকে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ মাত্র। অ্যান্টিবডি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তৈরি করা ছোট আকারের প্রোটিন, যা ভাইরাসের সঙ্গে সেটে গিয়ে সেটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
আর টি-সেল রক্তের সাদা একটি অংশ আক্রান্ত কোষগুলোকে খুঁজে বের করতে আর ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। প্রায় সব কার্যকর টিকা অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কাজ করে।
টিকা দেয়ার ১৪ দিন পরে টি-সেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় আর অ্যান্টিবডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় ২৮দিনের মধ্যে। তবে দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাপারটি কেমন হতে পারে, সেটি এখনো যাচাই করে দেখতে পারেননি গবেষকরা।
এটা কি নিরাপদ?
এটা নিরাপদ, তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। যদিও সেগুলো খুব বিপদজনক কিছু নয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে, টিকা নেয়ার পর তাদের জ্বর অথবা মাথাব্যথা হয়েছিল।
গবেষকরা বলছেন, প্যারাসিটামল খেয়ে এটা সামলানো যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, ''কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় আমাদের টিকা কাজ করবে, সেটা বলার আগে আমাদের আরও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পাওয়া ফলাফল বেশ আশা যোগাচ্ছে।''
অনেক দেশ বা প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে তাই!!
ফলাফল কি হতে পারে?
এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল যদিও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক, কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্য হলো সব মানুষকে দেয়ার জন্য নিরাপদ কিনা, সেটা নিশ্চিত কি? গবেষণায় এটা জানা যায়নি যে, এটা মানুষজনকে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করবে নাকি তাদের কোভিড-১৯ উপসর্গ কমিয়ে দেবে।
পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় যুক্তরাজ্য জুড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। তবে এই পরীক্ষাটি অন্যান্য দেশেও করা হবে। যেহেতু যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস রোগীর সংক্রমণের হার এখন কম, তাই টিকাটি কতটা কার্যকর তা সেখানে বের করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা চলবে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই হাজার আর ব্রাজিলে পাঁচ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হবে।
মানবদেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রথম ধাপে স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে সংগৃহীত রক্তের নমুনায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি অ্যান্টিবডি ও টি-সেল উৎপাদন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েছে। শরীরের ইমিউন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টি-সেল। অর্থাৎ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি ও টি-সেল; উভয়ই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এবং করোনার বিরুদ্ধে যুগল সুরক্ষা দেবে।
খবরে বলা হয়েছে, এই আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যান্টিবডি কয়েক মাসের মধ্যে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টি-সেল কয়েক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সমন্বয় মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ফল চরম আশাব্যঞ্জক। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে করোনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
সূত্রটি বলেন, আমি বলতে পারি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে উভয় ভিত্তিই তৈরি হয়, এটি টি-সেল ও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই সমন্বয় মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র আরও বলে, এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালো। এটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কিন্তু আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে।
মহামারিতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জোরালো প্রচেষ্টা চললেও এখন পর্যন্ত কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন সম্ভব হয়নি। বিশ্বে তৈরি দুই শতাধিক ভ্যাকসিনের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ১৫টির। এরমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ উৎপাদনকারী অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরীক্ষামূলক প্রকল্পটি প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে তারাই সবথেকে এগিয়ে রয়েছে। করোনায় এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত ও অন্তত ৫ লাখ ৮২ হাজারের মৃত্যু হয়েছে।
বার্কশায়ার রিসার্চ এথিকস কমিটি অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান ডেভিড কার্পেন্টার বলেন, ভ্যাকসিন টিম সঠিক পথেই আছে। তবে কেউই চূড়ান্ত দিনের কথা বলতে পারে না। এখনও তা চূড়ান্ত নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বড় ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার ফলে ভ্যাকসিন সেপ্টেম্বরে পাওয়া যেতে পারে। সবাই এই লক্ষ্যে কাজ করছেন।
কার্পেন্টার জানান, যদি ভ্যাকসিন কার্যকরী হয় তাহলে সবার আগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা প্রবীণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে।
অক্সফোর্ডের এই টিকা উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্য সরকার ও ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট আস্ট্রাজেনেকা। গত সপ্তাহে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা প্রতিষেধকের সুরক্ষার মেয়াদ নিয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার কার্যনির্বাহী প্রধান প্যাসকাল সরিওট। তিনি বলেছিলেন, এ প্রতিষেধক এক বছর পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
তবে অক্সফোর্ডের প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ ড. সারা গিলবার্টের দাবি, তাদের তৈরি করোনার প্রতিষেধক আরও বেশি সময় ধরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি প্রতিষেধকটির তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে আট হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
এর আগে, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিউক গুদ্যাট জানান কোভিড ১৯-এর মোকাবিলা করার মতো কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ এখনও বেরোয়নি ঠিকই। কিন্তু ১০ হাজার কম্পাউন্ডের মধ্যে ৬টি ড্রাগ ক্যান্ডিডেড বা উপাদান দিয়ে করোনা ভাইরাস নির্মূল করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত তাঁর এই বক্তব্যের ওপর জোর দিয়েছেন অনেক বিজ্ঞানীই।
লিউক জানান এখনও অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা বাকি। মূল প্রজেক্ট কোভিড-১৯ ভাইরাস এনজাইম, যার নাম এমপ্রো বা মেন প্রোটিস, তাকে নির্মূল করা। এই মুহূর্তে ড্রাগ স্ক্রিনিং-এর ওপর কাজ চলছে। তৈরি করা হচ্ছে কম্পিউটার সফটওয়্যার। এই কাজে সময় লাগবে।
তবে এখনও পর্যন্ত যতদূর কাজ এগিয়েছে, সফলতা মিলেছে। যে ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, তা সরাসরি গিয়ে এই ভাইরাস বা এনজাইমের ওপর কাজ করবে। শুধু করোনা ভাইরাসই নয়, এই ধরণের ড্রাগ বা ওষুধ হৃদরোগ, আর্থারাইটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো রোগেরও উত্তর হতে পারে বলে জানান লিউক। তিনি বলেন করোনার উত্তর রয়েছে ওই ৬টি ড্রাগ কম্পাউন্ডের মধ্যে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসর সুনেত্রা গুপ্তর আশা যে অধিকাংশ মানুষেরই করোনার টিকা লাগবে না। তাঁকে প্রফেসার রিওপেন বলে ডাকা হয়, কারণ তিনি বরাবরই লকডাউনের বিরুদ্ধে মত রেখেছেন। সুনেত্রা বলেন যে এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে যারা শারীরিক ভাবে সুস্থ, বয়স্ক নন ও শরীরে বড় কোনও রোগ, তারা সেভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন না। তাদের জন্য এটি সাধারণ জ্বরের থেকে বড় কিছু হবে না বলে তাঁর বিশ্বাস।
একবার টিকা আবিস্কার হলে মূলত যাদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাদের জন্যেই ব্যবহৃত হবে বলেই তাঁর আশা। অন্যদের এই নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
সুনেত্রা গুপ্ত মনে করেন যে ধীরে ধীরে মহামারী শেষ হবে যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে হয়েছিল। তবে তিনি আশা করেন যে তাঁর আগে মৃত্যুর সংখ্যা যেন সেই মহামারীর মতো না হয়।
করোনাভাইরাসের টিকা বানানো খুব শক্ত না বলেই তিনি মনে করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই বোঝা যাবে টিকা কাজ করছে কি না, বলে তিনি জানান।
টিকা না বেরোলে শুধু লকডাউনে কাজ হবে না বলেও জানান তিনি। দ্বিতীয় বার ভাইরাস বিশ্বের অনেক জায়গায় ছড়াচ্ছে, এই নিয়েও সতর্ক করেন তিনি।
আশার কথা:
যুক্তরাজ্যে শুরু হলো মানুষের দেহে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই ভ্যাকসিন প্রথম ডোজটি দিয়েছেন একজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে। আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়েছেন মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন। মূলত করোনা ভ্যাকসিনের কাযকারিতা তুলনা করতেই দুই জনকে দুই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ এ টিকা নিয়ে খুবই আশাবাদী। এটা প্রথমজনের শরীরে ইতিবাচক ফল দিলে শনিবার আরো ছয় জনকে দেয়া হবে। এবং সোমবার থেকে এক হাজারের বেশি মানুষের শরীরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ব্রিটেনের করোনার প্রথম ভ্যাকসিন প্রথম যে দুই ব্যক্তি শরীরে নিলেন তারাও কিন্তু সাধারণ কেউ নন। করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন ড. এলিসা গ্র্যানাটো। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অনুজীব বিজ্ঞানী। আর মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন এডওয়ার্ড ও’নিল, তিনিও অক্সফোর্ডের একজন ক্যানসার গবেষক। তারা এই মহামারীর সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানেরা তাগিদ থেকেই এটি করছেন। গ্র্যানাটো ভ্যাকসিন নিয়েছেন তার ৩২তম জন্মদিনে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিতে পেরে তিনি খুবই গর্ববোধ করছেন।
গ্র্যানাটো বিবিসিকে বলেন, যেহেতু আমি ভাইরাস বিষয়ে পড়াশোনা করিনি, তাই এই সময়টাতে নিজেকে খুবই অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। এইসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবচেয়ে সহজ একটা উপায় বলে মনে হলো এটি।
আর ও’নিল বলেন, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এবং কম সময়ের মধ্যে জয়লাভ করার উপায় হিসেবে এটিই সঠিক কাজ বলে আমার মনে হয়েছে।
ভ্যাকসিন ট্রায়াল টিমের প্রধান অধ্যাপক সারা গিলবার্ট বলছেন, তিনি এই ভ্যাকসিন নিয়ে খুবই আশাবাদী। তবে এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। একাধিক ধাপে পরীক্ষায় ১ হাজার ১০২ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেবেন। অক্সফোর্ড, সাউদাম্পটন, লন্ডন এবং ব্রিস্টলে বড় পরিসরে এটির পরীক্ষা শুরু হবে।
লিডিয়া গাথ্রি আগামী সপ্তাহেই এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেন, তারা (ভ্যাকসিন ট্রায়ার টিম) শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবীদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে খোলাখুলি বলে আসছেন। আর এ কাজটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে প্রতিটি ধাপে আমাদের পরিষ্কার সম্মতি দিতে হয়েছে। আমাদের কেউ চাইলে যেকোনো পযায় থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, তাকে করোনা ভ্যাকসিন বা মেনিনজাইটিস যেটিই দেয়া হোক না কেন তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন এবং কেমন বোধ করছেন, কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখবেন। স্বেচ্ছাসেবীদের কাজই এটি।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী জন জুকস। অক্সফোর্ডশায়ারে উইটনির এ বাসিন্দা আগামী সোমবার ভ্যাকসিন নিতে পারেন। তিনি ডেইলি মেইলকে বলেন, আমি যেটি করছি সেটি মোটেও নায়কোচিত কিছু নয়। আমি এমন একটা কাজ করতে যাচ্ছি যা বিপুল সংখ্যক মানুষের উপকারে আসতে পারে। এ সুযোগ আমি নিতে চাই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি থামাতে সারা বিশ্বেই ভ্যাকসিন তৈরির তোড়জোড় চলছে। সাধারণত একটি ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রয়োগের জন্য উন্মুক্ত করতে দুই তিন বছর লেগে যায়। সেখানে করোনার ভ্যাকসিন এ বছরই প্রয়োগযোগ্য করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গবেষকরা ভ্যাকসিনের জন্য ২ কোটি পাউন্ডেরও বেশি নগদ অর্থ অনুদান পেয়েছেন। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে এ ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনে গবেষকরাও এমনটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন। সেটিও এ বছরের শেষ নাগাদ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা শুরু হতে পারে। তারা সরকারের যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন।
-
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
-
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
২৮ অগাস্ট, ২০২৩
-
২০ অগাস্ট, ২০২৩
-
১৯ অগাস্ট, ২০২৩
-
০৮ অগাস্ট, ২০২৩
-
০৫ অগাস্ট, ২০২৩
-
২২ জুলাই, ২০২৩
-
১৫ জুলাই, ২০২৩