ডা. রীপা চক্রবর্তী

ডা. রীপা চক্রবর্তী

এম এস সি পাব্লিক হেলথ (অন কোর্স)

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিন

লন্ডন, যুক্তরাজ্য।


১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:১৮ পিএম

সিঙ্গাপুরে করোনার বিস্তার: কী ঘটেছিল সেই গির্জায়?

সিঙ্গাপুরে করোনার বিস্তার: কী ঘটেছিল সেই গির্জায়?

জানুয়ারির ১৯ তারিখ সিঙ্গাপুরের দ্য লাইফ চার্চ এ্যান্ড মিশন নামের গির্জাটিতে রোববার সকালের প্রার্থনায় যারা জড়ো হয়েছিলেন, তারা কেউ ভাবতেই পারেননি যে এখান থেকে করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের সূচনা ঘটতে যাচ্ছে। সেদিন সেই প্রার্থনায় উপস্থিত ছিলেন এক প্রৌঢ় দম্পতি।

সে সময় চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা অনেকেই জানতেন, কিন্তু সবারই ধারণা ছিল কোভিড-১৯ এ কেউ সংক্রমিত হলে তা বোঝা যাবে তার ঘনঘন কাশি দেখে। ওই দম্পতিটির দু’জনেরই বয়স ৫৬ – দুজনের কারোরই কোন কাশি ছিল না, অন্য কোন উপসর্গ বা স্বাস্থ্য সমস্যাও ছিল না। ফলে গির্জার কারোরই তাদের নিয়ে অন্য কিছু ভাবার কোন কারণ ছিল না।

সমস্যা হলো, তারা সেদিন সকালেই সিঙ্গাপুর আসেন চীনের উহান শহর থেকে – যা তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রার্থনা শেষ হবার সাথে সাথেই তারা চার্চ থেকে চলে গিয়েছিলেন। এরপর তিনদিন যেতে না যেতেই ঘটনা খারাপ দিকে মোড় নিতে শুরু করলো। জানুয়ারির ২২ তারিখে প্রথমে সেই মহিলাটি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, আর দু’দিন পর অসুস্থ হলেন তার স্বামী। পরে এক সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গাপুরের তিনজন স্থানীয় লোক অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

কোথায় থেকে, কীভাবে তারা সংক্রমিত হলেন – কেউ বুঝতে পারছিল না। সিঙ্গাপুরে করেনাভাইরাস বিস্তারের সেখান থেকেই সূচনা।

রোগের উৎস সন্ধানকারী গোয়েন্দা:

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ভারন লী বলেন, ‘আমরা একেবারেই বোকা বনে গিয়েছিলাম। যাদের দেহে রোগের কোন লক্ষণ নেই , তারা কী করে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে?’

কোভিড-১৯ সম্পর্কে তখন তাদের যেটুকু জানা ছিল – সেই জ্ঞান দিয়ে তারা বুঝতেই পারছিলেন না যে কী করে লোকের মধ্যে রোগটা ছড়াচ্ছে।

ড. লী তখন পুলিশ এবং রোগ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা তদন্ত শুরু করলেন। কে কখন কবে কোথায় ছিলেন তার একটা মানচিত্র তৈরি করলেন। এটাকেই বলে কনট্যাক্ট ট্রেসিং - যার মাধ্যমে কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তা জানা যায় এবং রোগ বিস্তার ঠেকানো যায়।

বলা হয় সিঙ্গাপুরের তদন্তকারীরা এ কাজে বিশেষ দক্ষ। কয়েকদিনের মধ্যে তার সেই গির্জার ১৯১ জন লোকের সাথে কথা বললেন এবং বের করলেন যে তাদের মধ্যে ১৪২ জন সেই রোববারের প্রার্থনায় উপস্থিত ছিলেন। এটাও বেরিয়ে এলো তার মধ্যে যে দু‌’জন সংক্রমিত হয়েছিলেন – তারা সেই চীনা দম্পতির সাথে একই প্রার্থনায় ছিলেন।

‍“হয়তো তারা কথা বলেছিলেন, বা পরস্পরকে সম্ভাষণ করেছিলেন – যা গির্জায় প্রার্থনার সময় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা‍” – বলছিলেন ড. লী।

এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। কিন্তু যে প্রশ্নের জবাব মিলছে না তা হলো: “সেই চীনা দম্পতির দেহে তো সংক্রমণের কোন লক্ষণ ছিল না। তাহলে তারা কিভাবে ভাইরাস ছড়ালেন ?”

তার ওপর আরো কঠিন একটি ধাঁধাঁরও কোন উত্তর পাওয়া গেল না। সেটা হচ্ছে , সিঙ্গাপুরের যে ৫২ বছর বয়স্ক মহিলা তৃতীয় সংক্রমিত ব্যক্তি ছিলেন – তিনি সেই প্রার্থনায় উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু ওই গির্জাতেই সেদিন অন্য একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাহলে কীভাবে সংক্রমিত হলেন?

অপ্রত্যাশিত তথ্যপ্রমাণ মিললো সিসিটিভিতে:

সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে তদন্তকারীরা গির্জার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে শুরু করলেন। তা থেকেই বেরিয়ে এলো এক অপ্রত্যাশিত তথ্য। চীনা দম্পতি গির্জা থেকে চলে যাবার পর তারা যে চেয়ারে বসেছিলেন, কয়েক ঘন্টা পর সেই চেয়ারেই এসে বসেছিলেন আক্রান্ত মহিলাটি।

বোঝা গেল, চীনা দম্পতিটির হয়তো নিজেদের কোন অসুস্থতা ছিল না বা কোন উপসর্গ ছিল না – কিন্তু তা সত্বেও তারা না জেনেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে অন্যদের সংক্রমিত করেছেন। হয়তো তাদের হাতে ভাইরাস লেগে ছিল, বা হয়তো তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে এটা ছড়িয়েছে। ঠিক কী ঘটেছে তা স্পষ্ট নয় – কিন্তু এর তাৎপর্য ছিল বিশাল।

আবার, এমন ঘটনা পৃথিবীর বেশ কিছু দেশেই ঘটেছে যে কোভিড নাইনটিন আক্রান্ত রোগী সেরে উঠেছেন - তার দেহ করোনাভাইরাস মুক্ত বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে - কিন্তু কিছুদিন পরই তার দেহে আবার এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। সাধারণ ঠান্ডার ক্ষেত্রে একবার আক্রান্ত হলে রোগীর দেহে সাধারণত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কোভিড নাইনটিনের বেলায় তা হচ্ছে না কেন?

ঘটনাটা খেয়াল করেছিলেন টোকিওর ডাক্তার ও গবেষকরা। ফেব্রুয়ারি মাসে টোকিওর একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছিলেন। তাকে যথারীতি অন্য রোগীদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হয়।

জাপানের এনএইচকে টিভির সংবাদ অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি কিছুদিন পর সেরে ওঠেন এবং হাসপাতাল ছেড়ে যান। আগের মতই স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন পর লোকটির আবার জ্বর দেখা দেয়।

তিনি আবার সেই হাসপাতালে ফিরে আসেন এবং বিস্মিত ডাক্তারকে বলেন, তিনি আবার অসুস্থ বোধ করছেন। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন, লোকটি আবার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।

জাপানে কিন্তু এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। একজন রোগীর দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে ফিরে আসার ঘটনা কমই ঘটে, কিন্তু সংখ্যাটা যে একেবারেই কম - তাও নয়।

এমনটা ঘটে কেন?

স্পেনের জাতীয় বায়োটেকনোলজি কেন্দ্রের একজন ভাইরোলজিস্ট লুইস এনজুয়ানেস বলছেন, কোভিড নাইনটিন ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়েছেন এমন লোকদের ১৪ শতাংশের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমিত হবার ঘটনা ঘটেছে।

তার মতে, এটা ঠিক দ্বিতীয় সংক্রমণ নয়, বরং আসলে যা হচ্ছে তা হলো - ভাইরাসটা শরীরের কোথাও লুকিয়ে ছিল, এবং তা আবার ফিরে আসছে। এনজুয়ানেসের কথায়, একবার সংক্রমণ হলে মানুষের দেহে ভাইরাস প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু কিছু লোকের ক্ষেত্রে তা ঘটে না।

ভাইরাস শরীরের ভেতরে 'লুকিয়ে থাকতে' পারে:

এমন কিছু ভাইরাস আছে যা মানবদেহের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। এনজুয়ানেসের কথায়, দেহের কিছু প্রত্যঙ্গের এমন কিছু টিস্যু যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে রয়ে যায় - সেখানে ভাইরাস বসে থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস যে এত তাড়াতাড়ি তার লুকানো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে আবার আঘাত হানতে পারে - এটাই বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ভুল তথ্য এবং ভুয়া খবর রোগের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে এসব গুজবে আশ্বাস খুঁজছে। কিন্তু তাতে মিলছে কি সমাধান?

না। প্রথম কথা যেকোনো মহামারীর ক্ষেত্রে যে গুঁজবে কান দেবেন না। গুঁজব শুধুই বিপদ বাড়াবে!

এ জন্য বিবিসি রেডিও ২ এর উপস্থাপক স্টিভ রাইট তার শোতে ডা. হিলারি জোন্সকে করোনার অসুস্থতা সম্পর্কিত বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন করেছিলেন। জনমানসের ভীতি কাটাতে তিনি এমন ৩৮টা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা সবার জন্য জরুরি।
 
১) হ্যান্ড ওয়াশিং কি ভাইরাসকে পরাজিত করার একমাত্র উপায়?

উত্তর: হ্যান্ড ওয়াশিং অবশ্যই জরুরি, তবে এটাই একমাত্র উপায় নয়। আমরা টিস্যুও ব্যবহার করতে পারি এবং সামাজিকভাবে নিজেকে খুব বেশি লোকের থেকে দূরে রাখতে পারি।

২) করোনা ভাইরাস কি বছরের পর বছর ধরে আছে ও থাকবে?

উত্তর: এটি ঠিক নয়, এটি কেবলমাত্র ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাইরাস ছিল।

৩) এই মহামারী কি শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে?

উত্তর: এটি শীঘ্রই কোনও সময় শেষ হবে না, আমরা মাত্র কয়েক মাস হল এটা সম্পর্কে জানতে পেরেছি, তাই কেবল ধৈর্য ধরুন।

৪) মাস্ক পরলে কি আমার করোনা ঝুঁকি কম করবে?

উত্তর: মাস্ক করোনা প্রতিরোধে সত্যই সহায়তা করে এমন কোনও প্রমাণ নেই। বাস্তবে এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে কারণ মাস্ক পরার ফলে আপনি আরও আপনার মুখের স্পর্শ করেন। তবে মেডিকেল সেবার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এটা প্রয়োজন।

৫) কাশি হলেই কি কাউকে আইসোলেশনে পাঠানো উচিত?

উত্তর: কাশি হলেই পাঠাতে হবে এমনটি নয়। যদি নতুন কাশি, অবিরাম কাশি যা শুকনো কাশি এবং জ্বর হয় তাহলে অবশ্যই নিজের  থেকে আইসোলেশনে যাওয়া উচিত।

৬) আমার কি খাবার ও ওষুধ মজুদ করা দরকার?

না, মজুদ করা হলে অন্য জনস্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি হবে। এটির কোনও প্রয়োজন নেই, মানুষদের এটা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

৭) আমার পোষা প্রাণী কি আক্রান্ত হতে পারে?

উত্তর: না, এটি একটি প্রজাতির নির্দিষ্ট ভাইরাস এবং আপনার পোষা প্রাণী সম্ভবত এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ।
 
৮) আমি যখন সেলফ আইসোলেশনে যাব তখন কি পুরো পরিবার থেকেও আলাদা হওয়া উচিত?

উত্তর: আইসোলেশনে নিজেকে আলাদা ঘরে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এসময় পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে আপনার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৯) করোনার প্রতিরোধে ভিটামিন গ্রহণের সম্পর্কে কি?

উত্তর: অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ এখানে সহায়তা করবে বলে কোনও প্রমাণ নেই। তবে প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এতে করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তি যোগায়।

১০) আমার কি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার বন্ধ করা উচিত?

উত্তর: এসময় আমাদের সবার উচিত বাসায় থেকে কাজ করা। বাইরে বের হওয়া একেবারেই উচিত নয়। তবে একান্ত প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার সম্ভবত বড় কোন ঝুঁকি নয়।

১১) আমি কি আমার বাচ্চাকে কোলে নেওয়া বন্ধ করবো?

উত্তর: সুসংবাদটি হল বাচ্চা এবং যুবকেরা করোনভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন না, তবে যদি তাদের মাঝে লক্ষণগুলি পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে তাদের পৃথক রাখাই শ্রেয়।

১২) মদ খাওয়া যাবে কি? মদ খেলে কি করোনার ঝুঁকি কমে?

উত্তর: না, আমরা আর সমস্যা চাই না! অ্যালকোহল দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে পারেন, পেট নয়।
 
১৩) খাবার সরবরাহ করা কি নিরাপদ?
 
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি নিরাপদ দূরত্বে থেকে খাবার সরকরাহ করতে পারেন। তবে এজন্য আপনাকে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
১৪) আইসোলেশন কি ভাইরাসের চেয়েও খারাপ হতে পারে?
 
উত্তর: আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নতা অনেক সময় বৃদ্ধ মানুষের জন্য সমস্যা। তাই তাদের সংস্পর্শে থাকা প্রয়োজন তবে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
 
১৫) করোনার সঙ্গে গ্লাভস পরার সম্পর্ক কী?
 
উত্তর: গ্লাভস আসলে কোন কাজে আসে না। কারণ আপনি যদি গ্লাভসের সাহায্যে কোনও কিছু স্পর্শ করেন তবে আপনি খালি হাতে যেমন ভাইরাসটি আপনার মুখের মধ্যে সঞ্চার করতে পারেন, গ্লাভস পরা থাকলেও একই ঘটনা ঘটবে। এ ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিং সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
 
১৬) আমার কতক্ষণ সেলফ আইসোলেশনে থাকা উচিত?
 
উত্তর: যদি আপনার জ্বর, শুকনো বা নতুন কাশি হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায় তবে সাত দিন। তবে আপনি যদি তখন ভাল অনুভব করেন তবেই এটি শেষ।
 
১৭) আমার কখন চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে?
 
উত্তর: আপনার যদি শ্বাস নিতে অসুবিধায হয় এবং  আপনার লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে।
 
১৮) আমি যদি করোনায় সংক্রমিত হই তবে এটি কতক্ষণ চলবে?
 
উত্তর: ভাইরাসটি আপনাকে কতটা হালকা বা পরিমিতরূপে সংক্রমণ করে এটি তার উপর নির্ভর করে। এটা কারও ক্ষেত্রে ১০ দিন আবার কারও ক্ষেত্রে ১৪ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে সুস্থ হওয়ার পরও নিজেকে আরও ১৪ দিন বিচ্ছিন্ন করে রাখা উচিত।
 
১৯) এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও কী এটা আজীবনের জন্য আমার মাঝে থাকবে?
 
উত্তর: আমরা খুব আশা করি তেমনটা যেন না হয়।  তবে আমরা এই বিশেষ ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানি না। এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
 
২০) সংক্রমণ হওয়ার পরে আমি কখন সামাজিকভাবে পুনরায় মিশতে পারবো?
 
উত্তর: আমরা এই ভাইরাসের সাথে পুরোপুরি নিশ্চিত নই, তবে আপনি সম্পূর্ণ ফিট এবং সুস্থ বোধ করার পরে আরও ১৪ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকা প্রয়োজন।
 
২১) খাবারে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে?
 
উত্তর: এমন কোনও প্রমাণ এখনও নেই যে খাবারের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। তবে সাবধানতা হিসেবে আপনার খাবারটি গরম করে খাবেন। তাহলেই সম্পূর্ণ নিরাপদ।
 
২২) সাপ্লাইয়ের পানির সঙ্গে কি ভাইরাসের কোন সম্পর্ক আছে? এটা কি নিরাপদ?
 
উত্তর: একেবারে নিরাপদ। এটি ক্লোরিনযুক্ত পানি এবং আমাদের নলের পানিতে ভাইরাসটি টিকে থাকতে পারে তার কোনও প্রমাণ নেই।
 
২৩) বাচ্চাদের সাঁতার কাটা বন্ধ করা উচিত?
 
উত্তর: না, এটা করার দরকার নেই - সুইমিং পুলগুলি ক্লোরিন পূর্ণ এবং ভাইরাস ক্লোরিনযুক্ত পানিতে বাঁচতে পারে না।
 
২৪) বৃদ্ধ আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করা উচিত?
 
উত্তর: একেবারেই না. যদি আপনার মাঝে কোনও লক্ষণ না পাওয়া যায় তবে তাদের আপনার সমর্থন এবং ভালবাসা দরকার। করোনায় আক্রান্ত না হলে তাদের পাশেই থাকুন।
 
২৫) করোনাভাইরাস কি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় দ্বিগুণ হয়?
 
উত্তর: এটার সছিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে মানবদেহে এটা দ্রুত বংশ বিস্তার করে।
 
২৬) ডাক্তারের সাথে জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন হলে আমি কী করব?
 
উত্তর: ডাক্তাররা এই মুহুর্তে টেলিফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছেন। করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে টেলিফোনে পরামর্শ নিবেন। ফোনে ডাক্তারকে কল করুন বা স্কাইপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন।
 
২৭) আইসোলেশনে থাকলে কিভাবে আমি কী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা করব?
 
উত্তর: আইসোলেশনে থাকার অর্থ আপনি করোনায় আক্রান্ত কি-না সেটা পরীক্ষা করা হবে না। এই টেস্টগুলি কেবলমাত্র হাসপাতালের পরিবেশে করা হবে।
 
২৮) তারা করোনভাইরাস পরীক্ষা কিভাবে করবেন?
 
উত্তর: এটি নাক এবং গলার পিছনে একটি সহজ লালার পরীক্ষা।
 
২৯) কত দ্রুত এই পরীক্ষার ফলাফল আসবে?
 
উত্তর: সাধারণত ফলাফল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাওয়া যায়। আশা করি এটা আরও দ্রুত হবে।
 
৩০) কারও মাঝে করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করার কোন উপায় আছে কি?
 
উত্তর: এখনও নেই, তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা আশা করি এটি এক মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে।
 
৩১) সরকারের উপদেষ্টাদের কি বিশ্বাস করা যায়?
 
উত্তর: অবশ্যই, আমরা তাদের উপর ভরসা রাখতে পারি, তারা অন্যান্য বিজ্ঞানীর সাথে প্রচুর পরিমাণে কথা বলে এবং তারা সঠিক পথে রয়েছে।
 
৩২) অন্য দেশের তুলনায় কেন যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া আলাদা?
 
উত্তর: কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আলাদা, পরিস্থিতি আলাদা, জনসংখ্যা আলাদা। আমাদের উপদেষ্টাদের বিশ্বাসও আলাদা।
 
৩৩) এই ভাইরাসটি কি ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর মতো?
 
উত্তর: না এটি একই নয় - তবে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, কারণ এটিও মহামারি। তবে আমরা কীভাবে মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বেশি রক্ষা করতে পারি সে প্রচেষ্টা এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক ভালো জানি।
 
৩৪) এই ভাইরাসের শেষ কখন হবে?
 
উত্তর: এটি এমন একটা প্রশ্ন যার উত্তর কেউ জানে না।  তবে বিশেষজ্ঞরা জুনের মাঝামাঝি এই ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসবে বলে আশা করছেন।
 
৩৫) ভাইরাসটি নির্মূল হতে কত দিন লাগবে?
 
উত্তর: এটি বলা বেশ কঠিন। কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে, আবার কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে। আসলে এই মহামারিটির শেষ কোথায় আমরা এখনও সেটা দেখতে পাচ্ছি না।
 
৩৬) স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা কি ঝুঁকিতে আছেন?
 
উত্তর: আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি - ইতালি থেকে যে পরিসংখ্যান আমরা জানি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০ শতাংশের চেয়ে বেশি সংক্রামিত হতে পারে এবং তাদের মধ্যে কিছু এরই মধ্যে মারা গেছে। আমাদের সত্যই আমাদের স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের দেখাশোনা করতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা উচিত।
 
৩৭) এনএইচএস কি এই সংকট মোকাবেলা করতে পারে?
 
উত্তর: আমি মনে করি না, বিশ্বে একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে যা সত্যিই এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারে। আমরা যা করতে পারি তা হল বিস্তার রোধ করা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করা।
 
৩৮) এই সংক্রমণের জন্য কি কোনও কার্যকর চিকিৎসা থাকবে?
 
উত্তর: বর্তমানে আমাদের কোন কার্যকর নিরাময় নেই, তবে আমাদের যা আছে তা সহায়ক চিকিৎসা যা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে কার্যকর হতে পারে। আমরা ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে খুব কঠোর পরিশ্রম করছি।

  ঘটনা প্রবাহ : করোনাভাইরাস
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
করোনা ছড়ায় উপসর্গহীন ব্যক্তিও
একদিনেই অবস্থান বদল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

করোনা ছড়ায় উপসর্গহীন ব্যক্তিও