
ডা. রীপা চক্রবর্তী
এম এস সি পাব্লিক হেলথ (অন কোর্স)
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিন
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১১:২৭ এএম
করোনাভাইরাস: উপসর্গহীন ও নতুন উপসর্গের নাটকীয়তা

যতই দিন যাচ্ছে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ততই নতুন নতুন সব তথ্য জানতে পারছেন। এর কিছু কিছু তাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সবাই এতদিনে জেনে গেছেন যে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে মানবদেহে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা– এসব উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু এমন কিছু লোক আছেন যাদের দেহে এমন কোন উপসর্গই দেখা দেয় না। তারা জানতেও পারেন না যে তারা করোনাভাইরাস বহন করছেন – এবং সবচেয়ে ভয়ের কথা, তারা নীরবে অন্যদের সংক্রমিত করে চলেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠিক কত মানুষের মধ্যে এরকম ‘উপসর্গ-বিহীন’ সংক্রমণ ঘটেছে, এবং এই ‘নীরব বিস্তারকারীরাই’ এই ভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী কিনা - তা জানা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার কোনও উপসর্গই নেই এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কিছু মানুষের মধ্যে করোনার নতুন নতুন কিছু উপসর্গও দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র জ্বর, সর্দি-কাশি, শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্টকে শুরুতে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ উপসর্গ বলে ধরে নেওয়া হলেও যতই দিন যাচ্ছে করোনার নতুন নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কাঁপুনি, পেশীর যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা, কিছুতে স্বাদ না পাওয়া এবং কোনও কিছুতে গন্ধ না পাওয়ার মতো লক্ষণ যোগ হচ্ছে করোনা ভাইরাসের উপসর্গের তালিকাতে। তারা বলছেন, নতুন যোগ হওয়া লক্ষ্মণগুলোকেও করোনার সিম্পটোমোলজির ভেতরে নিয়ে আসা হয়েছে, করোনার গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণ এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে চলতি সপ্তাহে। তিনি জানান কোভিড-১৯ এর যেসব প্রচলিত উপসর্গ রয়েছে সেগুলো কিছুই তার ছিল না, কিন্তু হাসপাতালে তিনি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোভিড পজিটিভ হওয়াতে সন্দেহের বশে তিনি করোনা টেস্ট করান। এরপর তিনি আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন।
তিনি বলেন, আমি কেবল কোনও কিছুতেই কোনও গন্ধ পাচ্ছিলাম না, এটা এখন করোনার লক্ষণ বলে জানা যাচ্ছে।
অপরদিকে, একজন গণমাধ্যমকর্মী জানান, তার যখন জ্বর হয় সেটা কখনোই তীব্র ছিল না, ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশিই হয়নি, বরং সাধারণ সময়ে এর চেয়ে অনেক বেশি জ্বরে ভুগেছেন তিনি, তবে ডায়রিয়া হচ্ছিল, কোভিড টেস্ট করালে তিনিও পজিটিভ বলে শনাক্ত হন।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন ( ইউএসসিডিসি)-র বরাতে জানা যাচ্ছে, করোনা ভাইরাসের নতুন উপসর্গ হিসেবে পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা দেখা দিয়েছে, তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নয়। ব্যথা যত মারাত্মক হয় ততই ফুসফুসের জটিলতম সমস্যা অ্যাকিউট রেসপিরেটর ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএসের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড মুগদা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু গণমাধ্যমকে বলেন, শুকনো কাশি, জ্বর, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা এবং গলাব্যথা এগুলো ছিল পুরনো লক্ষ্মণ। এরসঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে কাপুঁনি, পেশীর যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা, কিছুতে স্বাদ না পাওয়া এবং কোনও কিছুতে গন্ধ না পাওয়া।
এর সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত দুর্বল বোধ হওয়া, এটা অন্য ভাইরাল ডিজিজেও হয়, কিন্তু এই অতিরিক্ত দুর্বল বোধ করা আগে কোভিড এর লক্ষ্মণ হিসেবে ছিল না, জানান তিনি। অধ্যাপক মনিলাল আইচ বলেন, চোখ লাল হয়ে যাওয়াকেও (পিংক আই) আমেরিকার অ্যাকাডেমি অব অবথালমোলজি এখন করোনারর লক্ষণ হিসেবে যোগ করেছে।
এছাড়াও ইতালিতে কোভিড আক্রান্ত শিশুদের পায়ের পাতা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে , যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিড টো’, আবার পায়ের চামড়ার রঙ পরিবর্তন এবং শরীরে লালচে র্যাশ পাওয়া গিয়েছে কিছু কিছু রোগীর , জানান অধ্যাপক মনিলাল আইচ।
ডায়রিয়া সবার হয় না, আবার কারও কারও হয়, আবার পেটব্যথা নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীও পাওয়া গেছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে করোনার লক্ষণ হিসেবে হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো রোগী পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত দেশে সেরকম রোগী পাওয়া যায়নি, জানান তিনি।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ কমিটির সদস্য সচিব ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, শ্বাসকষ্ট যে কেবল ফুসফুসের সমস্যার কারণেই হয় তা নয়, রক্ত জমাট বেঁধেও হতে পারে-আর এটা কোভিড আক্রান্ত মৃত্যুর অন্যতম কারণ। একইসঙ্গে ডায়রিয়া শুরুর দিকে কোভিড এর লক্ষণ না হলেও এখন প্রচুর কোভিড আক্রান্ত রোগীর অন্যতম উপসর্গ ডায়রিয়া। আমরা শুরুর দিকে তীব্র জ্বরের কথা বললেও অনেকের ক্ষেত্রেই জ্বর কম হতে পারে। আবার অনেকেই আছেন যাদের জ্বর নেই, যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ বিষয়ক সমন্বিত কন্ট্রোল কক্ষের যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মো রিজওয়ানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ভাইরাসের মিউটেশন হয়ে তার স্ট্রেইন বদলায় আর স্ট্রেইন অনুসারে উপসর্গ বদলায়।
করোনা ভাইরাসের আরএনএ-পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা বেশি বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। উপসর্গের বৈচিত্র নির্ভর করে ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপরে, ভাইরাসের স্ট্রেইন বদলের ফলে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা বদলাতে পারে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আগে শিশুদের বেলায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম এবং বাংলাদেশে বৃদ্ধ ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের ( কোমরবিডিটি) মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকলেও পরে দেখা গেল কোনও বয়সেই একে আটকে রাখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া রোগীদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, তার কারণ স্ট্রেইন বদলিয়েছে।
আবার কোনও দেশভেদে মৃত্যুহার কমছে–বাড়ছে। তাই ভাইরাসের চরিত্রের ওপর সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা যেমন বদলায় তেমনি এর সিভিয়ারিটি বা মৃত্যুর ঝুঁকিও বদলায়।
-
০৬ জুন, ২০২৩
-
০২ জুন, ২০২৩
-
৩১ মে, ২০২৩
-
৩০ মে, ২০২৩
-
৩০ মে, ২০২৩
-
২৭ মে, ২০২৩
-
২৬ মে, ২০২৩
-
০৯ মে, ২০২৩