যৌন হয়রানির শিকার শেবাচিমের নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক
‘চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলাম, এর মধ্যে আবার এ হয়রানি’

মেভিয়েস রিপোর্ট: ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছি। আমার হ্যালোসিনেশন ডেভেলপ করেছে। সারাদিন মনে হচ্ছে, কে যেন দরজায় এসে নক করছে। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলাম, এটা পেশার অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি। ছাত্রাবাস থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আছি। পরিচিত মুখগুলো দেখতে পারছি না। এর মধ্যে এই যে একটা মেন্টাল ট্রমা, এটা নেওয়ার মতো মানসিক ও শারীরিক কোনো সক্ষমতাই আমার নেই।’
কথাগুলো বলছিলেন যৌন হয়রানির শিকার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক। যিনি একই হাসপাতালে কর্মরত দুই ওয়ার্ড বয়ের হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘২১ মার্চ থেকে আমার ইন্টার্ন শুরু হয়েছে। তখন থেকে একদিনের জন্যও বাসায় যাইনি। কারণ আমি চেয়েছি, সেবা দিতে গিয়ে আমি আক্রান্ত হলেও আমার বাবা-মা যেন আক্রান্ত না হন। ঈদেও বাড়ি যাওয়া হয়নি আমার।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর অক্সিজেন সিলিন্ডার চেক করার জন্য দিনের বেলায় ওয়ার্ড বয়েরা ৪/৫ বার আমার রুমে আসে। আমি মনে করেছি, এতবার এসে সিলিন্ডার চেক করা হয় তো তাদের দায়িত্বে মধ্যেই পড়ে। এরপর রাত ২টার দিকে আমার রুমে কেউ একজন ধাক্কা দিয়েছে। লাইটগুলো অফ ছিল। ঘুম ভাঙার পর ভেন্টিলেটরের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখি পিপিই পরা দুইজন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’
পরিচয় জানতে চাইলে তারা বললো, ‘ম্যাডাম আমরা ওয়ার্ড বয়। আমাদের একজন কলিগ এখানে ভর্তি আছে, তাকে খোঁজার জন্য এসেছি। আমার কাছে মনে হলো, ওরা তো এখানকার স্টাফ। তাদের কলিগকে খোঁজার জন্য নার্সের সাহায্য নিলেই তো হয়। তখন আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলি, আশ্চর্য ব্যাপার রাত ২টার সময় আপনাদের কলিগকে খুঁজতে আমার দরজা নক করছেন, এটা কোনো কথা হলো। এখানকার স্টাফ হিসেবে আপনারা তো ভালো করেই জানেন, সিস্টারকে বললে কোনো রোগী কোথায় আছে তা তারা বলে দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তারা দাঁড়িয়ে আমার সবগুলো কথা শুনলো। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আমি এতো রাতে দরজা খুলিনি। আমার কথা শেষ হওয়ার ৪/৫ মিনিট পরে তারা ওখান থেকে সরে যায়। আমি অবাক হয়েছি, এর পর তারা আর কোনো রুমে তাদের তথাকথিত কলিগকে খুঁজতে নক করেনি। এতক্ষণে তাদের খারাপ উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পেরে অনেকটাই ভেঙে পড়ি আমি। এরপর রাত ৩টা ১৯ মিনিটে একইভাবে আমার দরজায় নক করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় নক করে তারা। এ সময়টা মনে নেই। এ ঘটনার পর ফজরের নামাজের জন্য অযু করতেও আমি বাইরে যাইনি আমি।’
সকালে ঘটনা সম্পর্কে তাঁর সহকর্মীদের এবং হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বাকির হোসেন অবহিত করেছেন বলে জানান ওই ইন্টার্ন।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ইন্টার্ন চিকিৎসক গত ৩০ জুন যৌন হয়রানির ঘটনা উল্লেখ করে দুই ওয়ার্ড বয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। পরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং হাসপাতালের এক সহযোগী অধ্যাপককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।