ডা. ইকবাল মাহমুদ

ডা. ইকবাল মাহমুদ

এমডি (কার্ডিওলজি)
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

১৭ জুন, ২০২০ ০৪:৪০ পিএম

আন্তরিক সেবা, কাউন্সেলিং ও লেখালেখি কাল হলো ডা. জোবায়েরের

আন্তরিক সেবা, কাউন্সেলিং ও লেখালেখি কাল হলো ডা. জোবায়েরের

ডা. আহমেদ জোবায়ের অভাবনীয় সৎ ও মানবসেবী একজন চিকিৎসক। এই মহামারীতেও তিনি মানুষকে পুরোদমে সেবা দিয়ে গেছেন। গরিব, অসহায় রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ আর্থিক সহায়তা করা ছিল তাঁর নৈমিত্তিক কাজ। 

কুমিল্লার ছেলে হয়েও থেকে গেছেন সিলেটের এক পশ্চাৎপদ এলাকায়। যেখানে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার স্বর্গরাজ্য সাজিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছিল কিছু হাতুড়ে বদমায়েশ। জোবায়েরের চিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও লেখালেখিতে তাদের ব্যবসায় কিছুটা খরা পড়ে। তাই তাঁর পেছনে লাগে ওই চক্রটি। ২০১৮ সালে একবার তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এবার তারা অব্যর্থ অস্ত্রটি ব্যবহার করেছে।

এক মহিলা রোগী পাঠিয়েছে, ব্রেস্টের সমস্যা বলে। ডা. জোবায়ের তাকে মেডিকেল নিয়ম মেনেই এটেনডেন্টের উপস্থিতিতে পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় দেন। রোগী চলে যাওয়ার ২ দুই ঘণ্টা পর হাজার হাজার মানুষ তার চেম্বার ঘেরাও করে। জোবায়ের নাকি মহিলার শ্লীলতাহানি করেছেন।

ব্যস, শুরু হয়ে গেলো—ধর রে, মার রে।  

এর পর যা হবার তাই হলো! যে মানুষগুলোকে জোবায়ের এতগুলো বছর সেবা দিয়ে গেলো সূর্য ডুবতেই সেই মানুষগুলো জোবায়ের চেম্বার ভাঙলো, তাঁকে আহত করলো। শেষ পর্যন্ত তাকে শর্ত দিলো সিলেট ছাড়লে, মামলা হবে না। না ছাড়লে মামলা।

কিন্তু জোবায়ের জানেন, এই অসত্য মোকাবেলা না করে সিলেট ছাড়া মানে সারাজীবনের জন্য হেরে যাওয়া। তাই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সেখানে থেকে যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। আর এর ফলশ্রুতিতে তিনি চৌদ্দ শিকে বন্দি।

এখন কথা হচ্ছে, মহিলা রোগী কি জানেন না যে, ব্রেস্টের সমস্যা নিয়ে গেলে তার ব্রেস্ট পরীক্ষা ডাক্তার করতে পারেন? কারণ যদি এত সমস্যা থাকে তাহলে তিনি মহিলা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে পুরুষ ডাক্তারের কাছে কেন?

ডাক্তার কি রোগীর রোগ দেখতে মহিলা পুরুষ ভেবে পরীক্ষা করেন? এখন থেকে কি আমরা চেম্বারে নিয়ম মেনেও মহিলা রোগী দেখতে পারবো না? নাকি রোগীর প্রাইভেসির বারোটা বাজিয়ে আইপি ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা লালিয়ে নেবো?

আবহমান কাল ধরেই আমাদের সবার মনে একটি ধারণা গেঁথে আছে, তাহলো গ্রামের মানুষগুলো হয় যথেষ্ট সরলমনা, যাকে বলা চলে অনেকটা ফেরেশতাতুল্য। কিন্তু ডা. যোবায়েরের সঙ্গে এই মানুষগুলো কিভাবে এমন আচরণ করলো।

চিকিৎসকের সঙ্গে মানুষ যদি এ রকম আচরণ করেন, তাহলে এদেশে কি আসলে ডাক্তারী করা সম্ভব? আমি মন থেকে চাই ডা. জোবায়ের আহমেদ এই লড়াইয়ে জিতুন। না হলে যে, মেডিকেল ইথিকস্ হেরে যাবে। সবার কাছে অনুরোধ, যে যার অবস্থান থেকে ডা. জোবায়েরের পাশে দাঁড়ান।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।