রোজায় ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও গ্যাস্ট্রিক রোগীদের করণীয়

হ্যাঁ। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীরা রোযা রাখতে পারবেন! তবে অবশ্যই তাদের পুর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন সিয়াম পালনে মনস্থির ও সিয়াম পালনের আগে তাদের চিকিৎসকের নিকট গিয়ে, রোযা রাখতে চাচ্ছি, কী করণীয়। চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ এবং পূর্বের ওষুধের ডোজ ও রুটিন পরিবর্তন করে দিবেন।
সিয়াম পালনে কমপক্ষে প্রায় ১৪ ঘন্টা অনাহারে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের ইন্সুলিন সেক্রেশন বেড়ে গিয়ে গ্লুকোজ লেভেল কমে হাইপোগ্লাইসোমিয়া। আগে আপনি যখন দিনে তিনবার পানাহার করতেন, তখন দেহে বেশি গ্লুকোজের বেশি উৎপন্ন হত। কার্বোহাইড্রেট-গ্লুকোজ -লিভার-মাংসপেশী।
এখন ১৪-১৫ ঘন্টা অনাহারে, দেহের গ্লুকোজের মাত্রা নিম্নমূখী হবে। যদি পূর্বের ন্যায় এন্টিডায়াবেটিস বা ইন্সুলিন থেরাপি গ্রহণ করেন, দেহের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে হাইপোগ্লাইসোমিয়া থেকে কোমায় চলে যেতে পারে।
সিয়াম পালনের আগে দুই -একটা দিন ভোর রাতে খেয়ে কতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক সুস্থ থাকতে পারেন এবং বিকালে অনাহারে থাকা অবস্থায় দেহের গ্লুকোজের পরিমাণ টেস্ট করে দেখতে পারেন। যদি ব্লাডে গ্লুকোজের পরিমাণ ৫-৬ মি.গ্রাম থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই রোযা রাখতে পারবেন। আর যদি গ্লুকোজের পরিমাণ খুবই কমে যায় সাথে আপনি অসুস্থতা অনুভব করেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে আবার চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিসজনিত কারণে সিয়াম পালনে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন- হাইপারগ্লাইসেমিয়া গ্লুকোজের পরিমাণ সেহরি বা ইফতারের পর বেড়ে যেতে পারে। হাইপোগ্লাইসোমিয়া গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে।ডিহাইড্রোশন শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস কিটো এসিডোসিস হতে পারে।
উচ্চরক্তচাপের রোগীদের সিয়াম পালনে অপরিমেয় খাবারের ও অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন- মাথা ও ঘাড়ে ব্যাথা, বমি বা বমি বমি ভাব হওয়া, হার্ট এ্যাটাক, ব্রেইন স্টোক হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীদের হাইপার এসিডিটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে গার্ড (GERD) গ্যাস্ট্রিক ইসোফেগাল রিফ্লেক্স বেড়ে স্টোমাক বা ইপিগ্যাস্টিক পেইন, হার্ট বার্ন হতে পারে।
জটিলতা বড় কথা নয়, মহান আল্লাহ তায়লা চাইলে আমাদের সকল রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে পারেন।
এসব রোগীদের সিয়াম পালনে করণীয়
সেহরি: ভোর রাতের খাবারে অবশ্যই বেশি ফাইবার ও বেশি কিলোক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন- ছোলা, ডিম, সীমিত ভাত, সবজি, মাছ, ১ গ্লাস পাতলা দুধ ও একটি কলা এবং পরিমিত পানি পান করতে হবে। এগুলো খেলে আপনাকে সারাদিন দেহে শক্তি যোগাবে। আর সব সময় খাবার স্লোলি বা দীর্ঘক্ষন ভাল করে চিবিয়ে খাবার খেতে হবে। এতে Digestive Absorbtion system ভাল হবে। কিন্তু আমরা ভুল করে খাবার খুব দ্রুত খাই। ইফতারে সময় আমরা ছোলা, শক্ত জাতীয় খাবার, নানা ভাজি-পুড়া তৈলাক্ত, নানা মুখরোচক খাবার টপাটপ খেয়ে ফেলি। এতে পরিপাকতন্ত্র জটিলা সমস্যার দেখা দেয়। আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ঢেকে আনি।
► সেহরীর সময়ে আপনার রোগের ওষুধগুলো খেয়ে নিতে হবে।
► ভরা পেটে নামাজ পড়তে বসবেন না। কমপক্ষে খাওয়ার ৩০ মিনিট পর নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।
► ডায়াবেটিস এর রোগীদের এই সময়ে শারীরিক ব্যায়াম বা হাটাহাটি বা দৌড়ানের দরকার নাই। নিয়মিত নামাজ ও তারাবীহ এর নামাজ পড়লে শারীরিক ব্যায়ামের কাজ হয়ে যাবে।
► এসব ধরনের রোগীদের দুপুরের রৌদ্রতাপে যাওয়া ঠিক হবে না। এতে dehydration দেখা দিতে পারে। Avoid sun exprosure.
► প্রত্যহ গোসল ও শরীরের সাবান ব্যবহারে আপনার সতেজতা ও প্রানবন্ত লাগবে।
► দুপুরে অব্যশ্যই একঘণ্টা ঘুমানো উচিত।যা আপনার ক্লান্তি দূর করে দিবে।
ইফতার: ইফতারে ফ্রেশ মিনারেল ওয়াটার, আপেল, কমলা, খেজুর, কলা, ইস্পারগুলোর ভুষির অল্পচিনির সাথে হালকা লেবুর শরবত আর তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে। সকল প্রকার ভাজি-পুড়া তৈলাক্ত খাবার, গ্লিল, নান-কাবাব, পুলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবার বর্জন করতে হবে। এগুলো ব্লাড প্রেসার বাড়াবে ও হাইপারএসিডিটি তৈরি হবে। তখন রোগী নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
► ইফতারের তিনঘণ্টা পর রাতের খাবার খাওয়া যেতে পারে। খাবারগুলো- ডাল, ভাত, সবজি ও মাছ অথবা অল্প মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার গ্যাস্টিক বা প্রেসার, ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা কম হতে পারে।
► ব্রাশ এবং ফ্লশ নিয়মিত করতে হবে।
► গ্যাস্টিকের রোগীদের লেবু, কমলা, ভাজি-পুড়া, তৈলাক্ত খাবার এভয়েড করতে হবে। গ্যাস্টিকের রোগীরা সেহরিতে দই খেতে পারেন। এতে এসিডিটি কম হবে।
► উচ্চরক্তচাপের রোগীর অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে (গরুর মাংস, খাসির মাংস, পোলাও ইত্যাদি)।
► ডায়াবেটিস রোগীর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে যদি হাইপো-গ্লাইসোমিয়া কন্ডিশনে চলে যায়। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিনির শরবত মুখে দিতে হবে।
► চা, কফি, এ্যালকোহল, জুস, নেশা জাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
► পায়খানা ও প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না। সময় মত করে নিতে হবে।
রোযাদার ব্যক্তির শারীরিক সমস্যায় প্রয়োজনীয় পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় কিনা?
বর্তমানে পৃথিবীর সকল দেশের ইসলামের সুচিন্তা ও আলোকপাত নিয়ন্ত্রিত হয়। মিশরের আল-আজহার ইউনিভার্টিতে। এখানকার আলেম ও খতিবগণ রমজানে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যাপারে সহমত ব্যক্ত করেছেন। এতে রোযার ক্ষতি হবে না বলে মতবাদ দিয়েছেন।
সবচেয়ে বড় কথা মাহে রমজানের ফযিলত অপরিসীম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোযা রাখার তওফিক দান করুক। আমিন।
-
০৮ এপ্রিল, ২০২২
-
১৬ এপ্রিল, ২০২১
-
১৩ এপ্রিল, ২০২১
-
২৪ এপ্রিল, ২০২০
-
০৬ মে, ২০১৯
-
০৪ মে, ২০১৯
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা-পর্ব: ৩
রোজায় ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয়
-
২২ এপ্রিল, ২০১৯
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা: পর্ব-২
রোজায় জীবনযাত্রা ও খাবারের পরিবর্তন
-
২০ এপ্রিল, ২০১৯
-
০৭ এপ্রিল, ২০১৯
প্রাক রমজান প্রস্তুতি: পর্ব-১
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা
