
ডা. সিফাত সালেহ
মেডিকেল অফিসার ও কোভিড ১৯ স্বেচ্ছাসেবী
কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার
২৫ মার্চ, ২০২০ ০৫:১৩ পিএম
কি করবেন কোয়ারেন্টাইনে? পরিবারের সদস্যদের করণীয় কি?

হোম কোয়ারেন্টাইন কি?
হোম কোয়ারেন্টাইন হল এমন এক পৃথকীকরণ ব্যবস্থা যেখানে সুস্থ ব্যক্তি যারা কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগী বা আক্রান্ত স্থান ভ্রমনকারী কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদের আলাদা করে রাখা হয়।
কেমন হবে হোম কোয়ারেন্টাইনের হোম?
- পর্যাপ্ত আলো বাতাস থাকতে হবে।
- পারিবারিক সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে।
- বিছানা ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী আলাদা হবে।
- সম্ভব হলে গোসলখানা ও টয়লেট আলাদা করা, না হলে সবার শেষে ব্যবহার করা এবং প্রতিবার ব্যবহারের পর দরজার হাতল, বদনা, হ্যান্ড শাওয়ার, বালতি এবং যা তিনি ধরেছেন তা জীবাণুমুক্ত করা এবং সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা।
- বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে দুধ খাওয়ানোর আগে মাস্ক ব্যবহার করা ও ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত ঘরে কোন পশু পাখি না থাকা।
কতদিন থাকতে হবে হোম কোয়ারেন্টাইনে?
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে। এর সীমা একজন থেকে অন্যজনে ভিন্ন হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।
কি করবেন কোয়ারেন্টাইনে থাকা সময়?
- কোভিড১৯ সম্পর্কে আপডেট তথ্য রাখা।
- পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের সাথে ফোনে / ইন্টারনেটে যোগাযোগ রাখা।
- শিশুদের এর গুরুত্ব বোঝানো, তাদের পর্যাপ্ত গল্পের বই / খেলার সামগ্রী দেয়া এবং তা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা।
- দৈনন্দিন রুটিন যেমন খাওয়া, হালকা ব্যায়াম, স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা ইত্যাদি মেনে চলা।
- সম্ভব হলে ঘরে বসে অফিসের কাজ করা।
- নির্মল বিনোদন যেমন বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা এবং উপরিউক্ত কাজগুলোর পরিপন্থী নয় এমন বিনোদনমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকা।
পরিবারের সদস্যদের জন্য করনীয়:
- সুস্থ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সার ইত্যাদি) নেই এমন ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন।
- তিনি পাশের ঘরে থাকবেন, সম্ভব না হলে ওই ঘরে থাকবেন। তবে অবস্থান বদল করবেন না।
- একই ঘরে থাকলে কমপক্ষে ৩ ফুট বা ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং মাস্ক ব্যবহার করবেন।
- অতিথিদের সংস্পর্শে আসবেন না।
- পরিচর্যাকারী সঠিক নিয়মে দুই হাত ধোবেন।
- কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে
- খাবার তৈরীর আগে ও পরে হাত ধোবেন।
- খাবার আগে হাত ধোবেন।
- টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোবেন।
- গ্লাভস পরার আগে ও পরে হাত ধোবেন।
- যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয় হাত ধোবেন।
- খালি হাতে ঐ ঘরের কিছু স্পর্শ না করা, অসাবধানতাবশত স্পর্শ করে ফেললে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলা।
- কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তির ব্যবহার্য জিনিস যেমন মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি ঢাকনাযুক্ত পাত্রে রেখে পরবর্তীতে পুড়িয়ে ফেলা।
- ঘরের মেঝে, আসবাব পত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট, বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করা। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ( ২ টেবিল চামচ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরী করা। এই দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা রাখা যেতে পারে।
- কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তিকে নিজ কাপড়, বিছানা চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গুড়া সাবান / কাপড় কাচার সাবান ও পানি দিয়ে নিজে পরিষ্কার করতে বলুন এবং পরে ভালভাবে শুকিয়ে ফেলুন।
- নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মলমূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাকাবেন না এবং নিজের শরীরে বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।
কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ অমান্যকারীর শাস্তি:
- কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ অমান্য করা বা তথ্য গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ এর আওতায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দন্ডিত হতে পারে।
আগের নিউজ
পরের নিউজ
করোনার চিকিৎসা
বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৪৭৪ চিকিৎসকসহ ২৮৬১ স্বাস্থ্যকর্মী
মেডিভয়েসকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে পরিচালক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শতাধিক করোনা বেড ফাঁকা
এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত