
ডা. ইমরান কায়েস
ক্লিনিক্যাল ফেলো,
পশ্চিম মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, যুক্তরাজ্য
১২ মার্চ, ২০২০ ০২:৪৪ পিএম
জরুরি অবস্থা হলে সবাই ডাক্তারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়

কাল (১০ মার্চ) যে ডাক্তারের সঙ্গে ডিউটি করেছি ও আজ (১১ মার্চ) সকালে ফোন করে জানালো তার জ্বর জ্বর লাগছে। বললো, আজ আসছি না, বাসায় আইসোলেশনে আছি। টেক কেয়ার! পুরো সার্জারি টিম ওরে নিয়ে চিন্তিত! একটু পর পর তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে!
করোনা কোনো ফিকশন না, মিডিয়ার বানানো না। একটা খুবই সিরিয়াস বিষয়। এবং রীতিমত চিন্তার ব্যাপার।
যেহেতু এসব রোগীদের সারিয়ে তোলার মহান দায়িত্বটি চিকিৎসকদের মাথায়, সেজন্য এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ডাক্তাররাই।
এখানে সবাই সহানুভূতিশীল। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আমি ভয় পাচ্ছি, আমার দেশের ডাক্তারদের নিয়ে। আমাদের দেশে যেকোনো জরুরি অবস্থা হলে সবাই ডাক্তারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে ডাক্তারদের অভিভাবকরা থাকেন সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ। নিজেদের ব্যর্থতা ও অনিয়ম ঢাকতে তারাই সবচেয়ে বেশি ডাক্তারদের বকাঝকা করতে থাকেন।
গত বছরের ডেঙ্গুর ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
এতগুলো ডাক্তার মারা গেলো, শুধু রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে, দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করে, রাতের পর রাত একেবারেই না ঘুমিয়ে, রোগীর পর রোগীর সেবা দিতে গিয়ে!
অথচ কেউ তাদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করে না! ঝুঁকিভাতা বা বিশেষ কোনো প্রণোদনা দূরে থাক, তাদেরকে ন্যূনতম সম্মানও দেওয়া হয় না। অথচ অন্য দেশ হলে তাদেরকে রীতিমত জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হতো।
করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবের সময় আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য আমার ভয় লাগে। তারা এত বেশি নিবেদিতপ্রাণ, যা ভাবাই যায় না! জব ডিস্ক্রিপশনের বাইরে গিয়ে কাজ করে বেড়াচ্ছে। যে যা বলছে, ‘ইয়েস বস’ বলে দৌড়ে যাচ্ছে। কর্ম ঘণ্টা বলে কিছু নাই!
তাদের ঝুঁকির বিষয়টি যে কোনো বিবেকবান মানুষকে নাড়া না দিয়ে পারে না।
আমার এখানে কাউকে মেরে ধরেও আপনি সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘণ্টার বেশি কাজ করাতে পারবেন না। চল্লিশ ঘণ্টা হচ্ছে লিমিটেশন। বাকি আটঘণ্টার জন্য আপনাকে পে করা হবে।
কোথাও কোন রিকগনিশন নাই! একটা অদ্ভুত ইনসেন্সেটিভ, মায়া দরদহীন নিষ্ঠুর পরিবেশে আমাদের বাচ্চাবাচ্চা ডাক্তাররা বড় হয়ে উঠে।
তাদের কাছ থেকে আপনারা কিভাবে সেন্সেটিভিটি আশা করেন!
পুনশ্চ: ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের বাসায় সেল্ফ আইসোলেটেড অবস্থায় আছেন। কোনো ডাক্তারকে তার কাছে ঘাড়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কোনো ডাক্তারও অতি আগ্রহী হয়ে ফুলের তোড়া নিয়ে তার কাছে ছুটে যাননি।
করোনার চিকিৎসা
বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৪৭৪ চিকিৎসকসহ ২৮৬১ স্বাস্থ্যকর্মী
করোনার চিকিৎসা
বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৪৭৪ চিকিৎসকসহ ২৮৬১ স্বাস্থ্যকর্মী
করোনার চিকিৎসা
বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৪৭৪ চিকিৎসকসহ ২৮৬১ স্বাস্থ্যকর্মী
