ভারত বনাম বাংলাদেশের চিকিৎসা: আমার একটি অভিজ্ঞতা

ভারতের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ততটা মানসম্মত নয়। এছাড়া দেশটির বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাও সিঙ্গাপুর, ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ের নয়।
অবশ্য এ লেখায় নিচে বর্ণিত ভারত ও বাংলাদেশ চিকিৎসা সম্পর্কিত তুলনামূলক উদাহরণ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনাকে সার্বজনীন করার মধ্য দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রকাশ ঘটে।
আমরা ভারত বর্ষের অংশ, জাতিগত আত্মপরিচয়ের প্রয়োজনে স্বাধীন। বর্তমানে ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি ও মুম্বাইয়ে অবস্থানরত ভারতীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ও প্রযুক্তি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ কয়েক প্রজন্ম ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চায় তারা যুক্ত এবং বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থায় পুঁজি বিনিয়োগও আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এদিক থেকে আমরা তুলনামূলকভাবে পশ্চাদপদ এলাকার জনগণ।
একাত্তরে স্বাধীনতার পর আমাদের জ্ঞান-মেধার বিকাশ শুরু হয়েছে, এখনও পরিপক্কতা লাভ করেনি। এছাড়াও ভারতের পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন হাসপাতালসমূহে চিকিৎসা জ্ঞান ও মেধা প্রয়োগের ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও নিখুঁত। ফলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া আমাদের চেয়েও তাদের জন্য সহজতর। এছাড়াও ভারতে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা ও সহায়তায় প্রতিনিয়ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে তোলার কার্যক্রম বিদ্যমান।
পুঁজি নির্ভর বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যার বিচারে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক তফাৎ রয়েছে। এর অর্থ এই নয়—বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভারতের চেয়ে অকার্যকর ও নিম্নমানের।
আমার একটি অভিজ্ঞতা
আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দীর্ঘ এক মাস ধরে ফুসফুসের চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য লাভ করি। এরও পূর্বে আমার হৃৎপিণ্ডে তিন দফায় চিকিৎসা হয় বাংলাদেশের জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে। এবার আমার সম্মতি ছাড়াই বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তাদের নির্ধারিত কলকাতায় পালমোনোলজিস্টের নিকট আমাকে প্রেরণ করে ‘তুলনামূলক মতামতের’ জন্য, কোন চিকিৎসার জন্য নয়।
পূর্বেই বলা হয়েছে, আমার পরিপূর্ণ চিকিৎসা বিএসএমএমইউতেই হয়েছে। তুলনামূলক বিশ্লেষণে কলকাতার চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে এবং চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন আনেনি।
প্রমাণ মেলে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায়ও
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসায়ও আমাদের চিকিৎসকদের অসাধারণ দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে।
বিষয়টি পর্যালোচনা করে ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ‘আপনি অনেক ভাগ্যবান’। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর ‘জীবন শঙ্কায়’ থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার প্রশংসা করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কার্ডিওলজিস্ট বলেছিলেন, তার সব চিকিৎসাই এখানে দেয়া হয়েছে। তিনি বিএসএমএমইউতে যে চিকিৎসা পেয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা পেতেন না।
সুতরাং দেশাত্মবোধ ও ভালবেসে দেখলে দেশের মধ্যেই অনেক ভাল কাজের সন্ধান মেলে।
তবে আমার অসুস্থতার মাত্রা যদি কখনও এমন হয়—বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমা অতিক্রম করেছে, তখন চিকিৎসকদের পরামর্শে বিদেশে যেতে রক্ষণশীল নই।

পিতাকে নিয়ে ছেলে সাদি আব্দুল্লাহ’র আবেগঘন লেখা
তুমি সবার প্রফেসর আবদুল্লাহ স্যার, আমার চির লোভহীন, চির সাধারণ বাবা
