শিশু বিশেষজ্ঞ
সামান্য সর্দি কাশি/ জ্বর নিয়ে ওষুধের দোকানে যাওয়া মাত্র সেফিক্সিম সিরাপ দেওয়া হচ্ছে।যে রোগে অ্যান্টিবায়োটিক এরই প্রয়োজন নাই সেই রোগে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক!একটু আগে যে বাবুটা দেখলাম তার ঠান্ডার কারণে নাকে সর্দি আটকে নাক আংশিক বন্ধ থাকায় পিঠে একটু আওয়াজ হচ্ছিল।একজন কোয়াক এর কাছে গিয়েছিল সে বলেছে ইনজেকশন দিতে হবে মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে।আমি দেখলাম বাচ্চার বুক পরিষ্কার,যে শব্দ পাওয়া গেল সেটা Transmitted sound,বাচ্চার কোন জ্বর নেই,বুক ডেবে যাওয়া,ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া নেই,হাসিখুশি আছে।
বাবা-মায়ের অনুরোধে বাধ্য হয়ে বুকের এক্সরে করালাম-একদম স্বাভাবিক। আমি বাবা-মাকে নাক পরিস্কার করার নিয়ম শিখিয়ে এবং ঠান্ডার সময় বাচ্চার যত্নের নিয়ম শিখিয়ে দিলাম কোন অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়েই চিকিৎসা করলাম।
একটা বিষয় খেয়াল করেছি হাসপাতাল/চেম্বারে যে রোগীগুলো আসছে তাদের অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে আসে।
আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি রোগের ধরণ অনুসারে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে। আমার বেশী লেখা অ্যান্টিবায়োটিক হলো- পেনিসিলিন, এমোক্সিসিলিন,সেফরাডিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন, কখনো কখনো কট্রিম, ইরাইথ্রোমাইসিন,আর ইনজেকটেবল- সেফট্টায়াক্সন, জেন্টামাইসিন, এমিকাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন । আলহামদুলিল্লাহ এইসব কমদামী অ্যান্টিবায়োটিক এ ই ইনফেকশন ভালো হচ্ছে।
আজ এক রিপ্রেজেন্টেটিভ বলল, স্যার আপনি তো দামী অ্যান্টিবায়োটিক লিখেন না। আমি বললাম হ্যা আমি চেষ্টা করি রোগের সাথে মিল রেখে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে।
সে বলল স্যার আজকাল সবাই তো পাওয়ারী (দামী) অ্যান্টিবায়োটিক দেয়। কোয়াকরাই তো সেফিক্সিম দেয়, আর আপনি দেন কম পাওয়ারী (কম দামী) এন্টিবায়োটিক।
আমি বললাম এখানেইতো ওদের(কোয়াকদের) সাথে আমার পার্থক্য।ওরা দেয় না বুঝে,আর আমি দেই রোগ বুঝে।আচ্ছা বলুন তো আমার রোগী কি ভালো হয় না? সে নিরুত্তর!
হাই পাওয়ার লো পাওয়ার এরকম কোন বিভাজন এন্টিবায়োটিক এ নাই। কমদামী না বেশী দামী এটা ব্যাকটেরিয়া চিনে না।ওষুধের দাম ব্যকটেরিয়ার জানার কথাও না। ব্যকটেরিয়ার উপর অ্যান্টিবায়োটিক এর সেন্সিটিভিটি কতটুকু তার উপর নির্ভর করে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে।আপনাকে ভালো ক্লিনিশিয়ান হতে হলে অ্যান্টিবায়োটিক এর সেন্সিটিভিটি কোন ব্যকটেরিয়ার কেমন সেই ধারণা থাকতে হবে।
না বুঝে রোগী এলেই গ্যাসের ওষুধ (এন্টি আলসারেন্ট)এর মত একটি দামী অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা অন্যায় এবং ভয়াবহ।এভাবে যাচ্ছে তাই অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার আমাদেরকে ভবিষ্যৎ এ বিপদে নিমজ্জিত করবে। এখন সেফিক্সিমকে জ্বরের ঔষধ মনে করে রোগীরা!
শুধু কোয়াক নয় কিছু রেজিস্টার্ড ডাক্তারও অ্যান্টিবায়োটিক এর অপপ্রয়োগ করেন যা খুবই দুঃখজনক।
একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি ওষুধ কোম্পানির লোকগন দামী অ্যান্টিবায়োটিক লেখার জন্য প্রলোভন দেয়।কোম্পানীর লোকজন অ্যান্টিবায়োটিক আর এন্টিআলসারেন্ট ব্যতীত অন্য ঔষধ এর কথা খুব কমই বলে।তার মানে হলো দামী অ্যান্টিবায়োটিক লেখিয়ে সেগুলোর বিক্রি বাড়ানোর প্রতি তাদের টার্গেট থাকে।তাই আমার কাছে এসে যখন দামী অ্যান্টিবায়োটিক লেখার কথা বলে,তখন আমি বলে দেই দেখেন আমি তো এসব ওষুধ খুব কম লিখি,এগুলো আমাকে কেন বলেন,আমি যেগুলো লিখি সেগুলোর কথা কেন বলেন না? তাদের অনেকে তখন বলে,স্যার এখন তো এসব ওষুধই চলে।সবাই যেভাবে চলে আপনি লেখেন স্যার।
আমি তো অন্ধের মত অ্যান্টিবায়োটিক লেখার জন্য এত কষ্ট করে পড়াশোনা করি নাই।
আমার কথায় তারা আশাহত হয়ে ফিরে যায়।
চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ ওষুধ কোম্পানির কথায় অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক লিখবেন না।
আর রোগীদের প্রতি অনুরোধ চিকিৎসার জন্য ধৈর্য ধারণ করুন এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) একটি বিভাগে ডিপ্লোমা কোর্স আনার প্রক্রিয়া চলছিল। উৎসাহী…
সৌদি আরবে প্রথম অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার দিনটা আমার কাছে মনে রাখার মত…
আমি ময়মনসিংহ শহরে ৩ বছর ৪ মাস কাটাচ্ছি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের…
কেবল মাত্র ভোরে হয়েছে। পাখির ডাক শুনা যাচ্ছে। আমাদের ইমার্জেন্সী ডাক্তার রুম…
নতুন একটা চেম্বার পেয়েছি আমি। দামী হাসপাতালের চালু চেম্বার। আজ থেকে একমাস…
যে রাতে আমি প্রথম আত্মহত্যার সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম, সেদিন সন্ধ্যা থেকেই খুব বৃষ্টি…